বড় ইনিংস কিংবা চার-ছক্কা ছাপিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার এক অনন্য গল্প। কিছু ইনিংস থাকে, যা শুধুই এক ম্যাচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়—তা হয়ে ওঠে ক্রিকেটারের আত্মপ্রকাশের, নিজের জায়গা নিশ্চিত করার এক প্রতিজ্ঞার প্রতিচ্ছবি। নাঈম শেখের এই সেঞ্চুরিটা ঠিক তেমনই এক অধ্যায়।
আউটসাইড অফের ইয়র্কারটা পয়েন্টে ঠেলে বাউন্ডারি ছাড়া করলেন নাঈম শেখ। বল বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার আগেই যেন তাঁর সব বাধা, সব সমালোচনাও হারিয়ে গেল। এরপরই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন তিনি—একজন ক্রিকেটারের স্বপ্ন, সংগ্রাম আর অগ্নিপরীক্ষার প্রতীক হয়ে। চলতি বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের আসনটা যেন তাঁর অপেক্ষাতেই ছিল।
টুর্নামেন্টের শুরুটা সহজ ছিল না। স্ট্রাইক রেট নিয়ে কাটাছেঁড়া চলেছে বিস্তর, তাকে নিয়ে সংশয় ছিল অফুরান। কিন্তু আসরের শেষভাগে এসে যেন নতুন রূপে দেখা দিলেন তিনি—আর সেই রূপটা নিছক রঙিন নয়, আগুনের মতো প্রজ্বলিত।
গত ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ঝড়ো ফিফটির রেশ যেন খুলনার বাঁচা-মরার লড়াইয়েও টেনে আনলেন। শুরু থেকেই ছিলেন রুদ্ররূপে, যেন প্রতিটি বল তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে, আর তিনি উত্তর দিচ্ছেন ব্যাটের ভাষায়। ১২তম ওভারে ইফতেখার আহমেদকে তিন ছক্কা মেরে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন মাত্র ৩৪ বলে।
পরের ওভারেই নাহিদ রানার শর্ট বল ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে পাঠালেন সীমানার বাইরে—বিষ্মিত বোলার, মুগ্ধ দর্শক! বিপিএলের নতুন গতিদানবও এই ঝড়ে হার মানলেন। শেখ মেহেদী, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন—কারো জন্যই ছিল না রেহাই। ১৮তম ওভারে সাইফউদ্দিনকে পরপর তিন বলে এক ছক্কা ও দুই চারে পৌঁছে গেলেন বহুল কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে।
৬২ বল, ১১১ রান—ব্যাটে যেন বিস্ফোরণের সমারোহ। আট ছক্কা, সাত চার—ডট বল মাত্র ১৬টা। খুলনার অস্তিত্ব রক্ষার ম্যাচে একাই হয়ে উঠলেন ত্রাতা। ম্যাচ শেষে স্কোরবোর্ড বলছিল, ১১ ম্যাচে ৪৪৪ রান, তিনটি ফিফটি আর এক দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। গড় ৪৪.৪০, স্ট্রাইকরেটটাও চোখ ধাঁধানো, ১৫০ এর আশেপাশে!
সমালোচনার দাবানল তাঁকে পুড়িয়ে ফেলতে পারেনি, বরং আরও ধারালো করেছে। এই নাঈম শেখ শুধু রান তোলেনি, উত্তর দিয়েছে—ব্যাটের প্রতিটি আঘাতে, প্রতিটি বাউন্ডারিতে!