অন্ধকার ঘরে পাকিস্তানের আলো, মোহাম্মদ নাওয়াজ

এমন হতাশার সময়েও এক নাম জ্বলজ্বল করেছে আলো ছড়িয়ে—মোহাম্মদ নাওয়াজ। অন্ধকার ঘরে তিনিই আজ পাকিস্তানের নির্ভরতার প্রতীক।

২০২৫ সালটা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য যেন এক দীর্ঘ দু:স্বপ্ন। নিউজিল্যান্ডে হোঁচট, বাংলাদেশে ধস, আর এশিয়া কাপে ভারতের কাছে টানা তিন হার—সব মিলিয়ে দলটা ভাঙা আত্মবিশ্বাস নিয়ে টলছিল দিশেহারা। এমন হতাশার সময়েও এক নাম জ্বলজ্বল করেছে আলো ছড়িয়ে—মোহাম্মদ নাওয়াজ। অন্ধকার ঘরে তিনিই আজ পাকিস্তানের নির্ভরতার প্রতীক।

বাবর আজম একবার বলেছিলেন, ‘নওয়াজ, তুই আমার ম্যাচ-উইনার।’ সেই ভবিষ্যদ্বাণী যেন এ বছর এসে পূর্ণতা পেল। মাঠে নেমে নওয়াজ খেলেছেন অন্য এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে—বলের ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষকে মুগ্ধ করেছেন, ব্যাট হাতে ম্যাচ শেষ করেছেন এমন শান্ততায়, যেন পুরো খেলাটাই তাঁর মুঠোয়।

১৯ ম্যাচে ৩১০ রান, স্ট্রাইক রেট ১৩৫-এর ওপরে, সঙ্গে ২৫টি উইকেট আর ইকোনমি মাত্র ৬.৬৬—এই সংখ্যাগুলোই বলে দেয়, ২০২৫ ছিল নওয়াজের বছর। পাকিস্তানের ব্যর্থতার গল্পের ভেতর তাঁর পারফরম্যান্স ছিল একমাত্র রঙিন অধ্যায়।

তাঁর পাশে থাকা অন্য অলরাউন্ডাররা যখন ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিল না, তখন নওয়াজ ছিলেন অট। সালমান আলী আঘা, যিনি এখন দলের অধিনায়ক, করেছেন বেশ রান, কিন্তু স্ট্রাইক রেট ১১৩—টি-টোয়েন্টিতে সেটি যেন হাঁটা গতির ব্যাটিং। ফাহিম আশরাফ ভালো শুরু করেও ধারাবাহিক হতে পারেননি, আর শাদাব খান—পূর্বের জৌলুস হারিয়ে ফর্মের বাইরে। এইসব ব্যর্থতার ভিড়ে নওয়াজ ছিলেন একাই, একা হয়েও দলকে টেনে রেখেছেন লড়াইয়ে।

তাঁর উত্থানের তাৎপর্য এখন পাকিস্তানের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের সঙ্গেও জড়িয়ে। ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বসবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়, আর পাকিস্তান খেলবে লঙ্কান মাটিতে—যে মাটি স্পিনারদের স্বপ্নভূমি। নাওয়াজের মতো বাঁহাতি স্পিনার সেখানে হয়ে উঠতে পারেন পাকিস্তানের এক্স-ফ্যাক্টর।

উইকেটে টার্ন, বলের ভেতরে-বাইরে ফ্লাইট—সব মিলিয়ে তিনি হতে পারেন প্রতিপক্ষের জন্য দু:স্বপ্ন। তার ওপর, ব্যাট হাতে তাঁর উন্নতি এখন স্পষ্ট—শেষ দিকে নেমে ম্যাচ শেষ করার মানসিকতা গড়ে উঠেছে, যা পাকিস্তানের দলে বিরল গুণ।

নওয়াজের এই নতুন রূপ কেবল পরিসংখ্যানের গল্প নয়, এটি মানসিক পরিপক্বতার গল্প। একসময় যিনি ছিলেন অস্থির, এখন তিনি শান্ত, স্থির, পরিণত। ২০২৫ সালের প্রতিটি ম্যাচে তাঁর চোখে ফুটে উঠেছে এক বিশ্বাস, জয় ছিনিয়ে আনার অনন্য ইনটেন্ট। আর সেটাই তাঁকে আজকের মোহাম্মদ নাওয়াজ বানিয়েছে। যতক্ষণ মোহাম্মদ নাওয়াজ আছেন, পাকিস্তান কখনও পুরোপুরি হার মানতে জানে না।

Share via
Copy link