ভারতের পাওয়ার-প্লে সংকট

কেরালার গ্রিনফিল্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ম্যাচের শুরু দেখে যে কেউ ভাবতে পারে বুঝি কিউই কিংবা ইংলিশ কন্ডিশনে টেস্ট ম্যাচ চলছে৷ কেননা ইনিংসের শুরু থেকেই ভারতের দুই বোলার আর্শ্বদীপ সিং এবং দীপক চাহার অবিশ্বাস্য সুইংয়ের সাহায্যে রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলেছেন সফরকারী ব্যাটারদের।

পরের ইনিংসেও দেখা মিলেছে একই দৃশ্যের। ভারতীয় টপ অর্ডারের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে প্রেটিয়া ফাস্ট বোলাররা। আর সেটির প্রমাণ মিলেছে পরিসংখ্যানে। এদিন পাওয়ার প্লেতে ভারত দুই উইকেটের বিনিময়ে মাত্র ১৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছে, দলটির টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে শুরুর ছয় ওভারে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড এটি।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ভারতের দুই পেসার নিজেদের তিন ওভারের স্পেলে প্রোটিয়া ব্যাটিং অর্ডারের অর্ধেক সদস্যকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দেন। উদ্বোধনী ওভারে টেম্বা বাভুমাকে দারুণভাবে বোকা বানিয়েছিলেন দীপক চাহার৷ বেশ কয়েকটি আউটসুইং বল দেয়ার পর আনপ্লেয়েবল একটি ইনসুইং ডেলিভারিতে এই ব্যাটারের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেছিলেন।

দ্বিতীয় ওভারে আরো বিধ্বংসী রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন আর্শ্বদীপ সিং; কুইন্টন ডি কককে বেশ বড়সড় একটি আউটসুইং ডেলিভারি উপহার দেন আর সেটা খেলতে গিয়ে বল স্ট্যাম্পে টেনে আনেন এই উইকেটরক্ষক। পরের বলে রাইলি রুশো বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসেন উইকেটের পিছনে। তবে আর্শদ্বীপের দুর্দান্ত স্পেলের সবচেয়ে স্মরণীয় বলটি সম্ভবত মোকাবেলা করতে হয়েছে ডেভিড মিলারকে।

ক্যারিয়ারের প্রথম ৯০ ইনিংসে কখনো শূণ্য রানে আউট না হওয়া মিলার নিজেকে হয়তো আউটসুইংয়ের জন্য প্রস্তুত রেখেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় তরুণ ফাস্ট বোলারের ছোড়া বলটা অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে পিচ করে প্রোটিয়া তারকার ব্যাট প্যাডের ফাঁক গলে আঁচড়ে পড়েছে স্ট্যাম্পে। বর্তমান সময়ের উদীয়মান তারকা ট্রিস্টিয়ান স্টাবসও এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি।

সব মিলিয়ে মাত্র ৯ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে লজ্জার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পরবর্তীতে এইডেন মার্করাম, পার্নেল এবং কেশভ মাহারাজ প্রতিরোধ গড়ে কিছুটা ভদ্রস্থ রূপ দেয় স্কোরকার্ডকে। শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের পুঁজি সংগ্রহ করতে না পারলেও দলীয় সংগ্রহ তিন অংকের ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয় তারা।

মাত্র ১০৭ রানের টার্গেট, টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রেক্ষাপটে কিছুই নয়। কিন্তু ব্যাট হাতে নামতেই ভুল ভাঙ্গে দর্শকদের। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলদের পুরোপুরি খোলস বন্দী করেন কাগিসো রাবাদা এবং পারনেল। নড়বড়ে রোহিত আর কোহলি দ্রুতই ড্রেসিং রুমে ফিরলেও লোকেশ রাহুল ‘রাহুল দ্রাবিড়’ হয়ে উঠেছিলেন। একটা পর্যায়ে এই ওপেনারের রান ছিল ৩১ বলে ১৪।

অবশ্য সুরিয়াকুমার যাদবের সাহসী ব্যাটিংয়ে সেই চাপ দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় ভারত। নিয়মিত বাউন্ডারি আর স্ট্রাইক রোটেটের সাহায্যে মাত্র ৩৩ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান। সতীর্থের দেখাদেখি রাহুলও ধীরে ধীরে হাত খুলতে খেলতে শুরু করেন। ম্যাচ শেষে ৫৬ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

লো স্কোরিং ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার আনরিখ নর্কিয়া বোলিং করেছেন প্রায় ১১ ইকোনমিতে, অন্যদিকে ভারতের সুরিয়াকুমার ব্যাট করেছেন ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে। এই দুইটি ব্যতিক্রমী ঘটনা না ঘটলে হয়তো দুই মহাদেশের দুই পরাশক্তির দ্বৈরথ আরো জমজমাট হতো। তবে ততটা জমজমাট না হলেও ফাস্ট বোলারদের এমন বোলিং প্রদর্শনীর জন্য অনেক দিন ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে থাকবে এই ম্যাচ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link