ডাচ নাটকীয়তায় অপেক্ষার অবসান

শেষ ওভার, আইরিশদের জিততে প্রয়োজন ১২ রান। হাতে মাত্র দুই উইকেট! জিতলেই এক দল প্রথমবারের মতো ওয়ানডে লিগে পাবে ১০ পয়েন্টস! সিমি সিং তখনো ৪৪ রান নিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে। বল হাতে শেষ ওভার করতে আসলেন ডাচ পেসার ভ্যান বিক। ম্যাচে তখন টান টান উত্তেজনা।

প্রথম বলেই ভ্যান বিক দিলেন ওয়াইড! ৬ বলে নতুন সমীকরণ ১১ রানের। পরের বলেই সিমি সিং লেগ স্টাম্পের উপরে থাকা স্লোয়ারকে স্কোয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই দুই রানের জন্য ছুটলেন। কিন্তু দ্বিতীয় রান নিয়ে গিয়েই রান আউট সিমি! আইরিশদের একমাত্র আশা ভরসা সেই সিমি সিং ৪৫ রানে আউট হয়ে ফেরত গেলেন।

৫ বলে তখনো দরকার ১০ রান! স্ট্রাইকে তখন ইয়াঙ। প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করে স্ট্রাইক দিলেন জসুয়া লিটলকে। ৪ বলে দরকার ৯ রান, আর নেদারল্যান্ডসের দরকার মাত্র ১ উইকেট। অফ স্টাম্পের বাইরে করা স্লোয়ার বলকে পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির বাইরে! ৪ রান! শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।

৩ বল থেকে দরকার ৫ রান। পরের দুই বলে দুই সিঙ্গেলের বেশি নিতে পারলে শেষ বলে আইরিশদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় তিন রান। অন্তত ম্যাচ টাই করতে হলেও ২ রানের প্রয়োজন। স্ট্রাইক প্রান্তে ইয়াঙ! নাহ ভ্যান বিকের স্লোয়ারে পরাস্থ হয়ে বাই থেকে ১ রান নিলেও শেষ ওভারের নাটকে ডাচরা জয়লাভ করে ১ রানে!

শ্বাসরুদ্ধকর শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ১৪ বছর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় ডাচরা।

আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ হিসেবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেদারল্যান্ডস পাড়ি জমান আইরিশরা। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ডাচরা। ওপেনিং জুটিতে আসে ৩২ রান। প্রথম উইকেটে মাইবার্গ ২০ রান করে ফিরলে দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে আসে মাত্র ১৯ রান!

এরপর ৫১ রানে হঠাৎ এক ঝড়! সেই ঝড়ে ৫১ রানে ১ উইকেট থেকে ৫১ রানেই উইকেট সংখ্যা দাঁড়ায় ৪! এরপর ২ রানের ব্যবধানে নেই আরো এক উইকেট। মাত্র ৫৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে আইরিশদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ শুরু করে ডাচরা।

এরপর ৬ষ্ঠ উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন বাস ডি লিড এবং সাকিব জুলফিকার। ৪৮ রানের জুটি গড়ে যেই না মাথা তুলে দাঁড়াতে গেছেন অমনি দলীয় ১০২ রানেই কাটা পড়েন লিড ও জুলফিকার! আইরিশ বোলারদের ম্যাজিকেল বোলিংয়ে ১০২ রানেই ডাচরা হারায় ৭ উইকেট।

ম্যাচে তখন অপেক্ষা আইরিশরা কখন ব্যাটিংয়ে নামবে আর স্টার্লিং-বালবির্নিরা কত দ্রুত ম্যাচ শেষ করবেন! ঠিক এটাই যখন চিন্তা করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা, ক্রিজে তখন নিজেদের করা প্ল্যানে শান দিতে ব্যস্ত ভ্যান বিক ও ভ্যান ডার গাগটেন। ৮ম উইকেটে দু’জনে মিলে রচনা করলেন আরেক নাটক!

টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার যেখানে অসহায়ত্ব বরণ করে ফিরে গেছেন ড্রেসিং রুমে। সেখানে অষ্টম উইকেটে দু’জনে মিলে জুটি গড়েন ৭২ রানের! ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৩ বলে ৪৯ রানে ক্রেইগ ইয়াঙের বলে যখন ফিরেন, তখন মাত্র ফিফটি থেকে ১ রান দূরে! বেশ আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন গাগটেন। এরপর ভাঙা গাড়ি বেশিদূর নিতে পারেননি ভ্যান বিক। ব্যক্তিগত ২৯ রানে তিনিও রান আউট হলে দলীয় ১৯৫ রানেই গুড়িয়ে যায় স্বাগতিকরা।

দলের পক্ষে গাগটেন সর্বোচ্চ ৪৯ আর ভ্যান বিক করেন ২৯ রান। আইরিশদের পক্ষে ১০ ওভারে ৩২ রানে জসুয়া লিটন ও ১০ ওভারে ৩৪ রানে ক্রেইগ ইয়াঙ নেন ৩ টি করে উইকেট। দুইজনই একটি করে মেইডেনও আদায় করেন।

জবাবে সহজ লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ব্যাটিংয়ে দলের হাল ধরা গাগটেন আর ভ্যান বিকের বোলিং তোপে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে আইরিশরা। পোর্টারফিল্ড, বালবির্নি, ট্যাক্টর কেউই দুই অঙ্কের কোটা না ছুঁতে পারলে দলীয় ১১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে সফরকারীরা। একপ্রান্তে পল স্টার্লিং ভীত গড়লেও আরেকপ্রান্তে ছিলো আশা যাওয়ার মিছিল। ৪র্থ ও ৫ম উইকেটে ছোট জুটি গড়লেও দলীয় ৬৯ রানেই আইরিশদের অর্ধেক ব্যাটসম্যান সাজঘরে! তখনো ক্রিজে ঠায় দাঁড়িয়ে স্টার্লিং।

এরপর ৬ষ্ঠ উইকেটে সিমি সিং কে নিয়ে ৬৬ রানের এক অববদ্য জুটি গড়েন স্টার্লিং। এই জুটির পথেই তিনি তুলে নেন ২৫ তম হাফ সেঞ্চুরি। এই জুটিতে যখন জয়ের আশায় বুক বাধছে আইরিশরা! সেই সময় দলীয় ১৩৫ রানে ব্যক্তিগত ৬৯ রানে ফেরত যান স্টার্লিং। ৭৮ বলে আইরিশদের প্রয়োজন তখনো ৬১ রান, হাতে ৪ উইকেট। ৭ম উইকেটে ম্যাকব্রাইনকে নিয়ে সিমি সিংয়ের ৪৩ রানের জুটি তখন ম্যাচ আইরিশদের হাতেই ছিলো।

৪৬ ওভারে আয়ারল্যান্ডের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ১৭৭ রান। শেষ ২৪ বলে দরকার মাত্র ১৯ রান, হাতে তখনো ৪ উইকেট। নাটকের মূল পর্বের শুরুটা এখানেই! সিলারের করা ৪৭ তম ওভারে ম্যাকব্রাইন ও ম্যাকার্থি আউট! এক ওভারের ব্যবধানে ম্যাচে আবার নিজেদের তাবু গাড়ে ডাচরা। ৪৯ তম ওভারে দলের রান ৮ উইকেটে ১৮৪ রান৷ এরপরই শেষ ওভারের সেই শ্বাসরুদ্ধকর নাটক।

১৪ বছরের আক্ষেপটা ঘরের মাটিতেই ঘুচালো ডাচরা। সেই সাথে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে লিগে জয় পেলো নেদারল্যান্ডস এবং ১০ পয়েন্টস নিয়ে নিজেদের নামের পাশে যুক্ত করলো। সব অল্প রানের ম্যাচই রসহীন নয়, কিছু কিছু ম্যাচ রসালোও হয়! সেটাই এই ম্যাচের প্রমাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link