তাঁরাও যদি খেলতেন টি-টোয়েন্টি!

গ্যারি সোবার্স নামের ভদ্রলোক কখনো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেননি। যদি খেলতেন তাহলে কি হতো? ভাবতে ভাবতে মনে হলো একটা ফ্যান্টাসি টি-টোয়েন্টি দল বানিয়ে ফেলি – এমন কিছু খেলোয়াড়দের নিয়ে, যাঁরা কখনো টি-টোয়েন্টি খেলেনইনি।

আগেই জানিয়ে রাখি, অনেক খেলোয়াড় এমন রয়েছেন, যাঁরা আপাতদৃষ্টিতে টি-টোয়েন্টি খেলেননি। যেমন – ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, কার্ল হুপার ইত্যাদি। কিন্তু তাঁরা ঘরোয়া স্তরে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, যেটা অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয় নি। কাজেই, এই দলে তাঁরা জায়গা পাবেন না। এবার শুরু করা যাক।

  • ওপেনিং জুটি: স্যার ডন ব্রাডম্যান ও স্যার ভিভ রিচার্ডস

ব্র্যাডম্যান টেস্ট ক্রিকেটে কখনো ওপেন করেননি। কিন্তু ১২০ বলের খেলায় তিনিই এই দলের ওপেনার। যে ভদ্রলোক একদিনে ৩০০ করতে পারেন, আশা করি তাঁকে টুক-টুক টেস্ট খেলোয়াড় বলে কেউ উড়িয়ে দেবেন না। ভিভ রিচার্ডস যে সময়ে খেলতেন, সে সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সার্বিক স্ট্রাইক রেট ছিল ৬৫.৯৮। ভিভ সেখানে ৯০.২০। এটুকুই ওনাকে এই দলে নেবার জন্যে যথেষ্ট।

তবুও পরিসংখ্যানের খাতিরে বলে রাখি, (যেহেতু আধুনিক টি-২০ একটি অত্যন্ত পরিসংখ্যান ভিত্তিক খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে) ভিভ তাঁর সমকালীন খেলোয়াড়দের তুলনায় ৩৬.৭১% বেশি স্ট্রাইকরেটে রান করতেন। অতএব এই দলে ওপেনিং যে দুজন করবেন, তাঁরা কেউই স্বভাববশে ওপেনার নন।

কিন্তু কুড়ি-বিশ তো নিয়ম ভাঙারই খেলা। ওপেনারের বিচারে অবশ্য ট্রাম্পার, গ্রিনিজ, ব্যারি রিচার্ডস ও রয় ফ্রেডরিক্স ছিলেন। এনাদের মধ্যে ট্রাম্পার ব্র্যাডম্যানের জায়গায় স্বচ্ছন্দে আস্তে পারতেন। এই নির্বাচন তাই আলোচনা সাপেক্ষ। প্রয়োজনে বাকি নির্বাচকদের সাথে কাস্টিং ভোটেরও বন্দোবস্ত করা যাবে!

  • তিন নম্বর: ডিন জোন্স

কুড়ি-বিশের খেলায় আদর্শ তিন নম্বর ব্যাটসম্যান কে? যিনি তাড়াতাড়ি উইকেট পরলে ধরবেন। প্রয়োজনে বড়ো শট খেলবেন। এবং উইকেটের মধ্যে অসম্ভব জোরে দৌড়োবেন। এই তিনটি ক্ষমতা, ডিন জোন্সের অপ্রতুল পরিমানে ছিল। এই জায়গার আরেক দাবিদার, জাভেদ মিয়াঁদাদ ওই উইকেটের মধ্যে দৌড়ানোর মামলায় জোন্সের থেকে পিছিয়ে।

  • মিডিল অর্ডার: গ্যারি সোবার্স, কপিল দেব, গিলবার্ট জেসপ

স্যার গ্যারি হাঁসতে হাঁসতে এই দলে ঢুকবেন।বিগ হিটিংয়েও সোবার্স তাঁর সমকালীন খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে। এবং নানান রকমের বোলিং তিনি করতে পারতেন। আমার বিশ্বাস, এধরণের ভার্সেটাইল ক্রিকেটারকে আজকের দিনেও যে কোনো দল লুফে নেবে। তাছাড়া তিনি ছিলেন বাঁহাতি। যেটা এই দলকে কিছুটা বৈচিত্র প্রদান করবে।

গিলবার্ট জেসপ বিগ হিটিংয়ের রাজা ছিলেন। একা হাতে একবার অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়খার করে দিয়েছিলেন ১৯০২ সালের ওভাল টেস্টে। ওই টেস্ট কে এখনো জেসপের টেস্ট বলা হয়। এছাড়া ফাস্ট বোলার হিসাবেও চমৎকার। জেসপের প্রতিদ্বন্দ্বী (ব্যাটিং অলরাউন্ডার) হিসাবে ভারতের নাইডুও আসতে পারেন।

তিনিও বিশাল বড়ো বড়ো শট মারতে পারতেন। কিন্তু যেটা জেসপকে একটু এগিয়ে রাখবে, তা হলো তাঁর ফিল্ডিং। জেসপ ফিল্ডার হিসাবেও অনবদ্য ছিলেন।

কপিল দেব কে বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে নেওয়াটা বোধহয় কাউকেই অবাক করবে না। তাঁর সমকালীন তিন প্রতিদ্বন্দ্বী অলরাউন্ডারদের মধ্যে বিগ হিটিংয়ে কপিলই কিন্তু সেরা। পরিসংখ্যান বলছে ওয়ানডে ক্রিকেটে কপিলের স্ট্রাইক রেট ৯৫.০৭। ইমরান, বোথাম ও হ্যাডলির যথাক্রমে ৭২.৬৫, ৭৯.১০, ৭৫.৫০।

  • উইকেট রক্ষক: ইয়ান স্মিথ

ইয়ান স্মিথ তাঁর সমকালীন উইকেট রক্ষকদের চেয়ে ব্যাটিং স্ট্রাইক রেটে অনেকটা এগিয়ে। ওয়ানডে স্ট্রাইক রেট ৯৯.৪৩। উইকেট রক্ষক হিসাবেও অসাধারণ। উপরের খেলোয়াড়রা কোনো ম্যাচে ধ্যারালে ইয়ান স্মিথ কিন্তু ব্যাটিংয়েও দলকে বাঁচাতে পারেন।

  • পেস বোলার: ইমরান খান ও জোয়েল গার্নার

ইমরানের জায়গায় হ্যাডলি বা বোথামকেও নেওয়া যেত। তবে যেহেতু উপমহাদেশীয় ক্রিকেটার এখনো অব্দি শুধু কপিল দেব, কাজেই এক্ষেত্রে ইমরানের দিকে পাল্লা ঝুঁকলো। আর কুড়ি-বিশের খেলায় ব্যাটিং একটু গভীর হলে, উপরিভাগের ব্যাটসম্যানরা অনেক হাত খুলে খেলতে পারেন।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ব্যাঙ্গালুরুর ঠিক যে সমস্যা হতো, ব্যাটিং গভীরতার অভাবে, যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান ঠিক ততটা হাত খুলে খেলতেন না যতটা তাঁদের দক্ষতা, এই দলের সেই সমস্যা যাতে না হয়, তাই ইমরানকে নেওয়া। নাহলে যেকোনো বিশেষজ্ঞ বোলারকে নেওয়াই যেত।

জোয়েল ‘বিগ বার্ড’ তো বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা জোরে বোলার। তিনি শুরুর দিকে দু ওভার করবেন, শেষের দিকে দুই। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর চেয়ে কৃপণ বোলার কেউ নেই।

  • স্পিনার: জ্যাক ইভার্সন ও আব্দুল কাদির

বেশির ভাগ ভালো টি-টোয়েন্টি দলের কিন্তু একজন রহস্যময় স্পিনার থাকে। এককালে কলকাতার সুনীল নারাইন, হায়দ্রাবাদের রশিদ খান ইত্যাদি। জ্যাক ইভার্সন সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম বোলার যিনি ক্যারম বল (বা তার কাছাকাছি কিছু) করতে পারতেন। তাঁর কোন বলটা বাইরে ঘুরবে, কোনটা ভেতরে এটা বুঝতেই বিপক্ষের সময় লেগে যাবে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রচলিত অফস্পিনারদের জন্যে সত্যিই বড়ো নিষ্ঠুর। অফস্পিনার দেখলেন, ব্যাটসম্যান ফ্লাইটে বিট হয়েছেন, অথচ বল গ্যালারিতে। তাই কাদিরকে এই দলে নেওয়া। তিনিও ইভার্সনের মতো দুদিকে বল ঘোরাবেন। এছাড়া ব্যাটের হাতটাও মোটামুটি।

গ্রেগ চ্যাপেলকে এই দলের কোচ হিসাবে রাখা যেত, কিন্তু এতোজন তারকাকে কতটা সামলাতে পারবেন সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তাই এই দলের প্রশিক্ষক হিসাবে আরেক অস্ট্রেলিয় বব সিম্পসনকে বেছে নেবো। দলের অধিনায়ক নিঃসন্দেহে ইমরান।

  • খেলার ধরণ

ডন ও ভিভ দুজনেই প্রথম বল থেকে চালিয়ে খেলবেন। এই দুজনের লক্ষ্য হবে, ৬ ওভারে ৫৫ করে ফেলা। যদি এঁদের কেউ বা দুজনেই তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান, তবে ডিন জোন্স নেমে ইনিংস একদিক ধরবেন। অপরদিকে সোবার্স, জেসপ, কপিল, স্মিথ, ইমরান চালিয়ে খেলে যাবেন। আর ডন ও ভিভের শুরু যদি দারুণ হয়, তবে ফার্স্ট ডাউন নামবেন জেসপ বা কপিল বা সোবার্স।

কি ধরণের বোলার প্রতিপক্ষের রয়েছে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। বোলিংয়ে গার্নার ও কপিল ওপেন করবেন। ফার্স্ট চেঞ্জে ইমরান। মাঝের ওভার গুলোয় ইভার্সন ও কাদির আসবেন। প্রয়োজনে সোবার্স ও জেসপ আসবেন। শেষটা করবেন গার্নার ও ইমরান মিলে। এই দলের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো ৮ জন ব্যাটসম্যান ও ৭ জন বোলার নিয়ে খেলা। কোনো একজনের বা দুজনের দিন খারাপ গেলে বাকিরা সামলে নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link