হঠাৎ জাপানে আটক ইউরোপের নেপথ্যে…

জাপান দুটো ইউরোপীয় পাওয়ার হাউসকে হারিয়েছে একই কায়দায়। কিন্তু আটকে গেছে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে। মনে হতে পারে বজ্রপাত একই জায়গায় দুবার হয়েছে। আমি বলছি না।

আগে কাল স্পেনের সঙ্গে খেলাটা দেখি।

তারও আগে একটা কথা। আগেই বলেছিলাম যে যাদের রিজার্ভ বেঞ্চ ভালো কাতারের আর্দ্রতায় এবং পাঁচ পরিবর্ত নিয়মের সুবিধায় তারা ভালো খেলবে। জাপানের কিন্তু এই ‘লাইক ফর লাইক’ পরিবর্ত আছে। বিশেষত, দুই উইং ব্যাক এবং আপফ্রন্টে।

আপফ্রন্টে দুদিকে কুবো আর কামাদাকে রেখে খেলা শুরু করে জাপান। প্রথমদিন অবশ্য কামাদা মাঝখানে প্লে মেকার হিসাবে খেলছিলেন। কুবো আর জুনায়া ইতো দুই উইং-এ। একদম সামনে কেল্টিকের স্ট্রাইকার মায়দা। কাল ইতো একটু নিচ থেকে শুরু করেছিল। কুবো বাঁ দিকের বদলে ডান দিকে আর কামাদা বাঁদিকে। ইতোকে নামানো হয়েছিল উইং হাফ হিসাবে। আর দুটো ম্যাচেই বাঁদিকের উইং ব্যাক বা উইং হাফ ছিল নাগাতোমো।

যে রকমই নামানো হোক না কেন জাপান দুটো ম্যাচেই প্রথমার্ধে ডিফেন্ড করেছে ১-৪-৫এ। জার্মানি ম্যাচে তো প্রথম গোল লক্ষ্য করে শট প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু এটা ছিল টাইটানিক টাই, হিমশৈলের মাথা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পরিবর্তনগুলো হয়। এক এক করে পুরো ফরোয়ার্ড লাইনটাই পালটে যায়। মাঠে নামেন মিনামিনো, রিতসু দোয়ান, তোমিয়াসু আর আসানো।

স্পেনের বিরুদ্ধে দোয়ান তোমিয়াসু আর আসানো। পরে আরও দুটি পরিবর্তন। অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে ফরোয়ার্ড লাইন এবং দুই উইং ব্যাককে বদলে তাজা খেলোয়াড় নামানো হচ্ছে যখন বিপক্ষ একটু হাঁপিয়ে গেছে।

স্পেন যেভাবে ডিফেন্স থেকে খেলা তৈরি করে উপরে উঠে আসে, সেভাবেই আসছিল। জাপান যাচ্ছিল কাউন্টার অ্যাটাকে। সরাসরি উইঙে বল আর তার সঙ্গে সঙ্গে উইঙ্গার এবং স্ট্রাইকার হিসাবে মায়েদা বা আসানো সাপোর্ট প্লের জন্য উঠে যাচ্ছেন।

অপর দিক থেকে অপর উইঙ্গার এবং আরও দুই মাঝমাঠের খেলোয়াড় তানাকা, মোরিতা বা এন্ডো উঠে আসছিল। আর এছাড়াও যেটা হতে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, সেটা হল লো ব্লক থেকে উঠে হঠাৎ হাইপ্রেসে যেতে শুরু করে জাপান। এটা স্পেন বা জার্মানির বিরুদ্ধে সফল হয়েছে কারণ উভয়েরই ভালো মানের স্ট্রাইকার নেই।

যদিও কাল কিছুটা আন্দাজ করেই লুচো এনরিকে দ্রতগতির উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস এবং বাঁ দিকে উইং ব্যাক আলবার জায়গায় কম বয়সী প্রতিভাবান বল্ডেকে নামিয়েছিলেন। সঙ্গে মার্কো আসানসিওর জায়গায় স্ট্রাইকার হিসাবে মোরাতা। অর্থাৎ আসানসিওর ফলস নাইন রেখে ডায়মন্ড তৈরি না করে আরও উপরে মোরাতাকে পিভট রাখা।

এক গোল দেওয়া অবধি ব্যাপারটা কার্যকর ছিল। কিন্তু স্পেন ও জার্মানি উভয়ের বিরুদ্ধেই হাই প্রেসে চলে যায় জাপান দ্বিতীয়ার্ধে। এবং খেলা বদলে যায়। হ্যাঁ জার্মানি ম্যাচটা প্রথমার্ধেই শেষ হয়ে যাবার কথা।

কিন্তু, স্পেন ম্যাচে অনেকবেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন জাপানি কোচ এবং তাঁর খেলোয়াড়রা। গোল দুটো তুলে নেবার পরে অবশ্য আবার লো ব্লকে ফিরে আসেন তিনি। জার্মানির পজিটিভ স্ট্রাইকার ছিল না আর স্পেনের মোরাতা পজিটিভ স্ট্রাইকার হলেও ফিজিক্যাল নন অতটা। ফলত দুটো দলই শেষ কুড়ি পঁচিশ মিনিট চেপে ধরেও দাঁত ফোটাতে পারেনি।

ফলস্বরূপ দুটো দলের দারুণ সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাজি মেরে গেল জাপান।

তাহলে কোস্টারিকা ম্যাচ? কোস্টারিকা কাউন্টার অ্যাটাকে কী করতে পারে কালই দেখিয়েছে। একটা সময় জার্মানির বিরুদ্ধেই ২-১ এগিয়ে গেছিল। কিন্তু লো ব্লকের বিরুদ্ধে জাপান আগের দিন খেই হারিয়ে ফেলেছিল।

জাপান বা কোরিয়া উভয় দলই প্রচণ্ড স্পিড ও স্ট্যামিনা নিয়ে মাঠে নামছে। এশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বকাপে এরা দুই দলই ভালো খেলছে। অস্ট্রেলিয়াও কাছাকাছি স্ট্র্যাটেজিতে দুটো ম্যাচ বার করে ফেলল। তবু কোরিয়া আজ ২ গোলের ব্যবধানে না জিতলে হয়তো উপরে যাবে না। তাও নির্ভর করবে উরুগুয়ে ঘানার বিরুদ্ধে কী করে।

কিন্তু জাপান অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। যদিও পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া। তারা ডিফেন্স আঁটোসাঁটো রেখে খেলবে। তাদের বিরুদ্ধে জাপানের এই ট্যাকটিক্স মনে হয় সফল হবে না। তবু দু দুটো ইউরোপীয় পাওয়ার হাউসকে হারানো মুখের কথা নয়। জাপানের টেম্পলেটটা কিন্তু এশিয়ার টেম্পলেট হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে।

আর ইয়ে দ্বিতীয় গোলটা? দেখুন আমাদের কাছে সেই অ্যাঙ্গেল নেই। যাতে ধরা যাবে বলটা পুরোপুরি বাইরে ছিল কি না। তবে নিয়ম বলছে বলের সামান্য অংশও যদি লাইনের বাইরের অংশ থেকে পুরোপুরি ছেড়ে বেরিয়ে না গিয়ে থাকে তাহলে সেটা ‘আউট অব প্লে’ হিসাবে ধরা হবে না। এখন এটা তো আর ক্রিকেট নয় যে বেনিফিট অব ডাউট ব্যাটসম্যানের পক্ষে যাবে। অতএব…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link