বাংলাদেশের প্রধান চিন্তার কারণ এখন কি? এমন একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আফিফ হোসেন বিশ্বকাপ দলে থাকবেন কি-না সেটাই হয়ত সামনে নিয়ে আসা হবে। আরেকটু গভীরে গেলে কারণটা হয়ত মুস্তাফিজুর রহমান। তবে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের চিন্তার কারণ তামিম ইকবাল।
আরেকটু পরিষ্কার করে বললে তার ফর্ম। ‘ড্যাশিং ওপেনার’, ‘মারকুটে ব্যাটার’ এমন সব বিশেষণেই তো একটা সময় বিশেষায়িত হতেন তামিম ইকবাল খান। বাংলাদেশের কতশত অর্জনের কাণ্ডারি তিনি। তবে সময়ের সাথে সাথে, নিজের দায়িত্বভার গুলো যেন একটু নুইয়ে দিচ্ছে তাকে। তিনি যেন প্রচণ্ডরকম মানসিক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
আচ্ছা বলুন তো শেষ কবে তামিমের ব্যাট থেকে হাফ সেঞ্চুরি দেখেছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে? প্রায় নয় মাস আগে শেষ ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তামিম। এরপর তামিম আরও নয়টি ইনিংস খেলে ফেলেছেন। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাস খানেক আগে ৪১ রানে অপরাজিত ইনিংসটি ছাড়া তেমন বলার মত রান আসেনি তার ব্যাট থেকে।
যদি তিন অঙ্কের খোঁজ করা হয়, তবে সন্ধানটা আরও খানিকটা দীর্ঘ হবে। প্রায় বছর দুই হতে চলেছে তামিম ইকবাল সেঞ্চুরির দেখা পান না। ২০২১ সালের জুলাইয়ে তিনি দেখা পেয়েছিলেন শতকের। শেষ শতক আর অর্ধ-শতকের সাথে জড়িয়ে আছে জিম্বাবুয়ে।
রীতিমত অফ ফর্মের গ্যারাকলে পিষেই চলেছেন তিনি। যদিও টুকটাক রান তিনি করছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চেমসফোর্ডে শুরুটা তিনি দারুণ করেছিলেন। তবে আগ্রাসী হতে গিয়ে অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাটের খোঁচায় আউট হয়ে ফেরেন তিনি।
এই যে নিজের ইনিংসগুলো বড় করতে পারছেন না। আগ্রাসন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। পরিকল্পনা মাফিক কিছুই করতে পারছেন না তামিম। এসব কিছুই চিন্তার কারণ। কেননা, লম্বা সময় ধরে চলা এই পরিস্থিতি নিশ্চয়ই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে তামিমকে। আর সমস্যাটা ঠিক সেখানেই।
২০২৩ বিশ্বকাপে আকাশ সমান স্বপ্ন নিয়ে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। প্রথমত ভারত চেনা কন্ডিশন। দ্বিতীয়ত ওয়ানডে ফরম্যাটটায় বাংলাদেশ বেশ পোক্ত এক দল। তাছাড়া তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে দলটাও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। তাইতো আশায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত, সমর্থক আর অনুরাগীরা।
কিন্তু দলনেতা যখন তামিম, তখন দুশ্চিন্তার আনাগোনা হওয়াই তো স্বাভাবিক। বিশ্ব জয়ের স্বপ্নের তরী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা তো তামিমকেই দিতে হবে। কিন্তু এই যে তামিম ব্যাটে রান পাচ্ছেন না। ছোট ছোট ইনিংসেই থমকে যাচ্ছেন। এই বিষয়গুলো মানসিক অবসাদের কারণে পরিণত হতে পারে। আর সেই অবসাদের প্রভাবটা পড়তে পারে পুরো দলে।
সেলুলয়েড দুনিয়ার কল্যাণে অন্তত ১৯৮৩ ও ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতীয় অধিনায়কদের প্রভাবটা ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। অন্তত অতি সাধারণ একজন মানুষও এখন একজন উজ্জীবিত আর প্রাণবন্ত অধিনায়কের মাহাত্ম্যটা বোঝেন। সেদিক থেকে শঙ্কা তামিমকে নিয়ে। হাজার বার প্রচেষ্টা চালালেও ব্যাট হাতে নিজের খারাপ সময়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না তামিম।
আর সেই চিন্তা ও দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব, সেই সাথে বিভিন্ন সব পরিকল্পনা। সব কিছু মিলে একটা জগা খিচুড়ির আয়োজন ঘটাতে পারে। তাতে ক্ষতিটা হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রার। মানসিক অবসাদ নিয়ে অন্তত বিশ্বকাপের রণতরীর সেনাপতি হওয়া দুষ্কর। এই মুহূর্তে তাই তামিমের ফর্মে ফেরাটা বড্ড প্রয়োজন।
তামিম ইকবালও হয়ত নিজের ফর্মে ফেরার বিষয়টি বোঝেন। তিনিও হয়ত চেষ্টা করছেন। ব্যাটার তামিমের ব্যর্থতা হয়ত বাকি খেলোয়াড়রা মিলে পুষিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু অধিনায়ক তামিমের একটি ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে আত্মঘাতি। সেদিক থেকে তামিম হয়ত প্রচেষ্টার কমতি রাখবেন না। ব্যাট হাতেও হয়ত পুরনো তামিমকে খুঁজে বের করবেন তামিম। তবে সময়টা যেন খুব অল্প বাকি।