কাজটা করে দেয়ার কথা ছিল সাবেক অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাউ রিয়াদের। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রিয়াদ ফিনিশিং রোলটা প্লে করতে পারছিলেন না কোনভাবেই। ফলে অধিনায়কত্ব ও দলে জায়গা দুটোই হারালেন। কিন্তু তার জায়গায় কাজটা কে করে দিবে? ওপেনিং সমস্যার আড়ালে ফিনিশিং লাইনের সংকটটা আমরা কখন যেন ভুলেই গেলাম। তবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নড়বড়ে ফিনিশিং।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে। জয়টা সহজ ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় তুলতে নিজেদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হয়েছে সাকিবদের। তবে জয় ছাপিয়ে কিছু দুর্বলতাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ব্যাটিং লাইন আপে বাংলাদেশের সংকট বেশ কয়েকটা জায়গায়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল ওপেনারদের নিয়ে। আপাতত সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত কাজটা চালাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের পুরনো সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেটা হল ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেন কিংবা স্লগ ওভারে দ্রুত রান তুলতে পারেন এমন একজন ব্যাটারের অভাব।
বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাটিং লাইন আপে কাজটা করার কথা মূলত সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের। ফিনিশার হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনিই কিছুটা আস্থা করতে পেরেছিলেন। তবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের পর তিনিই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে।
গতকাল সাত নাম্বারে নেমেও তারা ব্যাটিংয়ের ধরণ প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। বাংলাদেশের যখন দ্রুত রান তোলা প্রয়োজন সোহান তখন রানের গতি আরও কমিয়ে দিয়েছেন। ইনিংসের শেষে ১৮ টি বল খেলে তিনি করেছেন মাত্র ১৩ রান। আর এতেই ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে আটে নামা মোসাদ্দেকের ছোট্ট ক্যামিওতে অন্তত লড়াকু স্কোর করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
যদিও নুরুল হাসান সোহান পরীক্ষিত পারফর্মার। দলের সহ-অধিনায়কও তিনি। ফিনিশার হিসেবে সর্বশেষ ম্যাচ গুলোতে তার পরিসংখ্যানও যথেষ্ট ভাল। এছাড়া এই ধরনের পজিশনে প্রতিদিন ভাল করাও কঠিন। তবুও সোহানের কাছ থেকে এমন ধীরগতির ইনিংস আসলে বাংলাদেশের জন্য সেটা বহন করা কঠিন। ফলে পরের ম্যাচগুলোতে সোহানের চেনারূপে ফেরাটাই সবচেয়ে জরুরি।
এছাড়া ছয় নাম্বারে ব্যাট করা ইয়াসির আলি রাব্বিরও নিজেকে প্রমাণের সময় এসেছে। তিনি ব্যাট হাতে কি করতে পারেন কিংবা কতটা প্রতিভাবান সেটা সবারই জানা। এবার বিশ্বকাপের মত মঞ্চে সেটা করে দেখাতে হবে রাব্বিকে। ছয়-সাতে নামা রাব্বি কিংবা সোহানের থেকে ঝড়ো ইনিংস আসলেই বাংলাদেশের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। এছাড়া সামনে বড় দলগুলোর সাথে ম্যাচ জিততে হলে ফিনিশারদেরই দায়িত্বটা নিতে হবে।
প্রথম ম্যাচে রাব্বি, সোহান না পারলেও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনিও সুযোগ পেলেই ঝড়ো ইনিংস খেলে নিজেকে প্রমাণ করছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও তার ২০ রানের ইনিংসটাই ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। স্কোরবোর্ডে এই ১৪৪ রান না থাকলে হয়তো বোলারদের এত ভাল পারফর্মেন্স পুরোটাই বিফলে যেত। সেজন্য মোসাদ্দেককে নিয়ে একটু সস্তিতে থাকতেই পারে বাংলাদেশ।
যদিও বাংলাদেশের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপে প্রথম সাতে জায়গা হচ্ছে না মোসাদ্দেকের। গতকালও যেমন তিনি ব্যাট করতে নেমেছেন আট নাম্বারে। ছয়-সাতে কেউ কাজটা করে দিতে না পারলে হয়তো মোসাদ্দেককেই আরেকটু উপরে খেলানোর কথা ভাবতে হবে বাংলাদেশকে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে এখনও আছে চারটি ম্যাচ। বাংলাদেশ যেভাবে বিশ্বকাপটা শুরু করেছে তার প্রশংসা করতেই হয়। এছাড়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও এবার নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। তবে সামনের পথটা আরও কঠিন। খেলতে হবে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলের সাথে। সেসব ম্যাচে লড়াই করতে হলে ফিনিশারদের এগিয়ে আসতেই হবে।