বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দীর্ঘ পথচলায়, বহু খেলোয়াড়ের উত্থানের সাথী হয়ে রয়েছে। মূলত খেলোয়াড়দের সামর্থ্য প্রমাণের একটা মঞ্চ তৈরি করে দিতেই এই ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোর সূত্রপাত। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই।
প্রায় প্রতিটা টুর্নামেন্টেই কোন না কোন খেলোয়াড় আলো ছড়ান। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য অধিকাংশ খেলোয়াড়ই মুহূর্তের স্ফুলিঙ্গ হয়ে হাজির হন। আবার হারিয়ে যান বিস্তৃতির অতলে। তেমন কিছু খেলোয়াড়দের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।
- আলিস আল ইসলাম
এক বিপিএলের বিস্ময় আলিস আল ইসলাম। ছিলেন ডান-হাতি অফ ব্রেক বোলার। ২০১৯ বিপিএলে তাঁর আগমন। অভিষেক ম্যাচটাই তিনি রাঙিয়েছিলেন তাঁর স্পিন জাদুতে। অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিক করে আলোড়ন ফেলে দেন আলিস। রাইলি রুশো, মোহাম্মদ মিথুন ও মাশরাফি বিন মর্তুজার উইকেট তিনি তুলে নেন পরপর তিন বলে। সেই ম্যাচে তাঁর ক্যারিয়ার সেরা চার উইকেট নিয়েছিলেন আলিস।
প্রশংসার বানের জলে ভেসে যেতে শুরু করেন আলিস। তিনি সত্যিকার অর্থেই ভেসে যান। মাটি আকড়ে ধরে থাকতে পারেননি। নিজের ক্যারিয়ারে খুব বেশি আলোর সঞ্চার করাতে পারেননি আলিস। হঠাৎ যেন কর্পূর হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন আলিস। কেউ তাঁকে আর খুঁজে পেল না। এমনকি বর্তমান সময়ে তিনি নেই কোন খবরে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে তাঁর।
- মুনিম শাহরিয়ার
একজন আগ্রাসী ব্যাটারের আক্ষেপটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহুদিনের। সেই আক্ষেপ ঘোচাতেই যেন আবির্ভাব ঘটে মুনিম শাহরিয়ারের। ২০২২ বিপিএল আসরে তিনি খেলেছিলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটায় প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। সেই বিশ্লেষণার মাঝপথেই আবিষ্কৃত হয়েছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে তিনি গোটা দেশের নজর কাড়েন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি জায়গা করে নেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে।
ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার একটা প্রবণতা ছিল তাঁর মাঝে। তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ার সাথে সাথেই খেই হারিয়ে ভয়ার্ত ব্যাটিংয়ের প্রদর্শন শুরু করেন মুনিম। এরপর স্বাভাবিকভাবেই তিনি ছিটকে যান জাতীয় দল থেকে। ২০২৩ বিপিএলে তিনি বড্ড মলিন। নিজের সেই বিধ্বংসী ফর্মটা কোথাও একটা হারিয়ে ফেলেন তিনি। একটি বিপিএল মাতিয়ে আড়ালের পথ বেছে নেন মুনিম।
- আবু হায়দার রনি
বা-হাতি পেসার আবু হায়দার রনি, বহু সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর আগমন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে। ২০১৫ সাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হাত ধরেই তিনি আলোচনায় আসেন। নিজেদের প্রথম অংশগ্রহণেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা। সেই চ্যাম্পিয়নশীপের যাত্রায় রনি নিজের বোলার সত্ত্বার পূর্ণ ব্যবহারটাই করেছিলেন। সেই আসরে ২১ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন রনি।
দুর্দান্ত সেই পারফরমেন্সের পুরষ্কার হিসেবে তিনি জাতীয় দলের টিকিটও পেয়েছিলেন। তবে জাতীয় দলের পোশাকে তিনি বেশ বিবর্ণ ছিলেন। ক্রমশ হারিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার সে পথ ধরে তিনি এখন জাতীয় দল থেকে বহুদূরে। তাইতো নিজেকে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন নতুন করে।
- মেহেদী মারুফ
শিরোপা জয়ে দলগত পারফরমেন্স যতটা না প্রয়োজন, তাঁর থেকেও বেশি প্রয়োজন একজন খেলোয়াড়ের ‘ইন্ডিভিজুয়াল ব্রিলিয়ান্স’। ২০১৬ সালে ঢাকা ডাইনামাইটসের হয়ে সে কাজটাই করেছিলেন মেহেদী মারুফ। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে তিনি ঢাকাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বহুবার। তিনি সেই টুর্নামেন্টে ১৩৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছিলেন। রান সংগ্রহে তাঁর উপরে থাকা সবার থেকে স্ট্রাইকরেটে তিনি ছিলেন সবথেকে এগিয়ে।
তবে সেটাই ছিল শেষ। মেহেদী মারুফকে এরপর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই টুর্নামেন্টের দুর্ধর্ষ পারফরমেন্স তিনি আর কোন আসরেই করতে পারেননি। হারিয়ে যাওয়াদের তালিকায় তিনিও যুক্ত হয়ে যান। তিনিও এক আসরের বিস্ময় হয়ে এখনও নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশন চালিয়ে যাচ্ছেন।