মুনিম শাহরিয়ারের গল্পের শুরুটা ২০২১ সালে। সেবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ থেকে। প্রথম নাটকের শুরু তাঁর মাঠে নামা নিয়েই। কেননা আবাহনী দলে সেবার আছেন জাতীয় দলের দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ। ফলে মুনিম আর মাঠে নামবেন কী করে! ডাগ আউটে বসেই পুরো মৌসুম কাটাতে হবে তাঁকে।
তবে লিটনের অনুপস্থিতিতে সুযোগ এলো মুনিমের। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন পিঠ চাপড়ে দিলেন ছেলেটার। বললেন নিজের মত করে খেল। মুনিমও কথাটা আক্ষরিক অর্থে পালন করলেন। তাঁর ব্যাটে সত্যিকার অর্থেই ঝড় উঠলো সেবার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেই ঢাকা লিগেই প্রথম নিজেকে চেনানো মুনিমের।
৫০ বলে অপরাজিত ৯২ ও ৪০ বলে ৭৪ রানের দুটো ইনিংস খেললেন পরপর। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছাড়া মুনিম সেই প্রথম নিজেকে চিনতে পারলেন। সেবার ১৩ ইনিংসে ব্যাট করে করলেন ৩৫৫ রান। ব্যাট চালিয়েছিলেন প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটে।
আর এরপর মাস কয়েক পরেই বসল বিপিএলের ড্রাফট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ঢাকা লিগে এমন ঝড় তোলা মুনিমকে যেকোন ফ্র্যাঞ্চাইজিই দলে পেতে চাইবে। এবার বিপিএলের মত আসরে কেমন পারফর্ম করেন সেটাই দেখার পালা। কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলে খুলে যেতে পারে জাতীয় দলের দরজাও।
অথচ ড্রাফট থেকে দলই পেলেন না মুনিম শাহরিয়ার। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিও তাঁকে নিয়ে নূন্যতম আগ্রহও দেখাল না। অবাক করার মতই ব্যাপার। ক্রিকেটের জন্য ঘর ছাড়া মুনিমও ভেঙে পড়েছিলেন। এরপর আরেকবার মুনিম পাশে পেলেন খালেদ মাহমুদ সুজনকে।
ড্রাফটের বাইরে থেকে সেবার ফরচুন বরিশাল তাঁকে দলে নিল। তবে বরিশালের অধিনায়ক সাকিব সেবার একেবারে শুরু থেকেই নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যস্ত। একেকদিন একেকজনকে দিয়ে ওপেন করাচ্ছেন। তবে মুনিমের সুযোগ আর আসছেনা।
সুযোগটা শেষ পর্যন্ত এলো চট্টগ্রাম পর্বে। সেখানে গিয়ে আরেকবার দেখা গেল মুনিমের ম্যাজিক। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ফর্মটা এখানেও টেনে আনলেন। বরিশাল অবশেষে ভরসা করার মত একজন ওপেনার খুঁজে পেল।
আর জাতীয় দলে পা দেয়ার আগে সেই বিপিএলই ছিল মুনিমের শেষ হার্ডল। মুনিম সেটা সাফ্যলের সাথে পার করলেন। ড্রাফট টেবিল থেকে দল না পাওয়ার আক্ষেপ মেটালেন বাইশ গজে।
কথা মত, জাতীয় দলের দরজাটাও খুলে গেল। এরচেয়ে নাটকীয় আর কীই বা হতে পারে। মাস কয়েক আগেও যিনি ঢাকা লিগে সুযোগ পাননা, বিপিএলের ড্রাফটে তাঁর প্রতি কেউ আগ্রহ দেখায় নাই, সেই মুনিমের প্রতিই আস্থা রাখলো বাংলাদেশ জাতীয় দল।
তবে এরপর আর স্বপ্নের মত কিছু হয়নি। জাতীয় দলের হয়ে অল্প কয়েকটা সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। এরপর ইনজুরির কারণে ছিটকে গেলেন ক্রিকেট থেকেই। তবে এরপর আর মুনিমের সেই ঝলক কখনো দেখা যায়নি।
গত বিপিএলে ঝড় তোলা মুনিম এবারের বিপিএলে দেখেছেন ব্যর্থতার চূড়ান্ত রূপ। একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন না, পেলেও তাঁর ছিটেফোঁটাও কাজে লাগাতে পারছেন না। অথচ মুনিমকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল দেশের ক্রিকেট। তবে মুনিম তো এল মৌসুমের ওয়ান্ডার বয় হয়েই থেকে গেলেন।