একটা অঘোষিত অবসরেই যেন চলে গেছেন বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান। না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিনি নিজেকে এখন অবধি গুটিয়ে নেননি। তিনি এখনও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন ওয়ানডে ও টেস্ট।
ওয়ানডেতে আবার পালন করছেন অধিনায়কের দায়িত্ব। তিনি মূলত নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। প্রায় দুই বছর হতে চলল, তিনি নেই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির দৃশ্যপটে।
তামিম শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০২০ সালের মার্চে। এরপর অবশ্য মহামারীর থাবায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছিল নির্বাসনে। তবে সে তামিম আর নির্বাসন কাটিয়ে ফেরেননি ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ এক সমস্যায় যেন পড়ে গেছে। এই ফরম্যাটটায় বাংলাদেশের দূর্বলতা রয়েছে, সেটা রীতিমত ‘ওপেন সিক্রেট’।
আর টাইগারদের উদ্বোধনী জুটি যেন সে সমস্যাটা আরও বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তামিমের বিরতিতের যাওয়ার পর থেকে এখন অবধি বাংলাদেশ আট খানা নতুন উদ্বোধনী জুটি গড়ে ফলাফলের প্রত্যাশা করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি পরিত্যাক্ত হয়েছে। সেখানে নবমতম নতুন উদ্বোধনী জুটি হিসেবে খেলেছেন মুনিম শাহরিয়ার ও এনামুল হক বিজয়।
পরের ম্যাচেই সংখ্যাটা ১০-এ গিয়ে উন্নিত হয়েছে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করেছেন লিটন দাস ও এনামুল হক। দু’জনই ব্যর্থ। দ্বিতীয় ওভারে পরপর দু’বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তাঁরা।
তবে এই পজিশনে এখন অবধি সবচেয়ে বেশি সময় পেয়েছে নাঈম শেখ ও লিটন দাস জুটি। তাঁরা বাংলাদেশের হয়ে মোট ১৪ খানা ম্যাচে ওপেনিং এর দায়িত্ব সামলেছেন। সফলতা তাঁদের মাধ্যমেও আসেনি। কেবলমাত্র একটি ম্যাচে ৭৭ রান জড়ো করতে পেরেছিল এই জুটি। সেটা অবশ্য করেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। সফলতা সেখানেই সীমাবদ্ধ।
মূলত তামিমের অবর্তমানে নাঈম শেখ একটা লম্বা সময় ধরে ছিলেন উদ্বোধনী জুটির একপ্রান্তে। তাঁর সাথে এসে ভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছেন সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, মুনিম শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান, সাকিব আল হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে নাঈম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় পেয়েছেন সৌমের সাথে। তাঁর সাথে আট ম্যাচে ইনিংস শুরু করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন নাঈম।
২০২১ এর মাঝামাঝি সময়ে জিম্বাবুয়ের মাটিতে এই জুটি ১০২ রানের একটি দারুণ জুটি গড়ে। রান রেটের দিক থেকেও লিটন-নাঈম জুটি থেকে নাঈম-সৌম্য জুটি সফল বলা যায়। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিচারে তা অত্যন্ত নগন্যই বলা চলে।
শুরুর পাওয়ারপ্লে ব্যবহার করাটাই থাকে ওপেনারদের জন্যে মূল চ্যালেঞ্জ। রান তোলাটাও খানিকটা সহজ সে সময়ে। সেদিক বিবচেনায় বাংলাদেশের কোন ওপেনিং জুটিই কখনো ভাল ফলাফল এনে দিতে পারেনি।
একমাত্র ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেহেদি হাসানকে সাথে নিয়ে নাঈম শেখ জড়ো করেছিলেন ৪২ রান। সেবার প্রায় নয়ের বেশি রানরেটে রান তুলেছিল মেহেদি-নাঈম জুটি।
এতবার ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন এনেও যেন লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না বাংলাদেশের। শুভ সূচনাটা যেন আর পাওয়াই হচ্ছে না টিম টাইগারদের। আটটি ভিন্ন জুটিও যখন ব্যর্থ তখন বাংলাদেশকে নতুন আরও একটি জুটি খোঁজার দিকে ছুটতেই হচ্ছে।
সে ধারাবাহিকতায় দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন মুনিম শাহরিয়ার। আর নাঈম শেখ মোটামুটি বলে দেওয়া যায় তিনি ছিটকে গেছেন দল থেকে। তাঁর ধীর গতির ইনিংসগুলো খুব একটা সুফল বয়ে নিয়ে আসে না। তাছাড়া তাঁর ব্যাটিংয়ে বেশ দূর্বলতাও রয়েছে। তাঁর পরিবর্তে মুনিম শাহরিয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বেশ মারকুটে ব্যাটার। টি-টোয়েন্টির মেজাজ বুঝে ব্যাটিং তিনি করতে পারেন।
তবে এখন অবধি তিনি নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তবে তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি রেখেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে অধিকাংশ ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। তাঁর সাথে এখন সম্ভবত এনামুল হক বিজয়কে দেখা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের এখন খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই। মাস তিনেক বাদেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
অন্তত এই জুটিকে খানিকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। নতুবা পরিকল্পনা পরিবর্তন করে লিটন-মুনিম জুটিটায় থিতু হওয়া উচিৎ।
ক্রমশ এমন নতুন নতুন জুটি ভাল কোন ফলাফল কখনোই বয়ে নিয়ে আসবে না, সেটা নিশ্চয়ই টিম ম্যানেজমেন্ট বোঝেন। তামিম ইকবাল যেহেতু স্বেচ্ছায় টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে থাকতে চাইছেন, সেহেতু বাংলাদেশের উচিৎ তামিমের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা।
আগামী দিনের কথা চিন্তা করে, তরুণ কোন একটা জুটির উপর আস্থা রাখা এবং তাঁদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া। সেই সাথে ক্রমাগত তাঁদের উন্নতির জন্যে পরিচর্যা করে যাওয়া। এখন দেখবার পালা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট আবারও স্বল্প সময়ের কোন পরিকল্পনার দিকে ঝুকবেন নাকি তাকাবে একটু দূর দিগন্তে।