হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরি, তবুও নাহি মেলে উত্তর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই এক প্রশ্ন নিয়ে ঘুরছে সর্বত্র। টি-টোয়েন্টিতে কাকে দিয়ে ওপেনিং করাবে সেটা এখনও তো এক ধুম্রজাল। এখনও ঠিক উত্তর মেলেনি। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই সন্ধান চলছে। কতদিন চলবে!
সন্ধান চলতে চলতে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ হাজির নিজেদের দশম ওপেনিং জুটি নিয়ে। বহু আশা করে মোহাম্মদ নাঈম ও এনামুল হক বিজয়ে ভরসা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট । সে ভরসার প্রতিদান দিতেও তো ষোল আনা ব্যর্থ তাঁরা। আফগানিস্তানের সাথে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে সাত রানেই সাজ ঘরে নাঈম। স্বস্তির যেন কোন প্রকার সুযোগ নেই।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বোধ হয় শুরুর দিকটা। পাওয়ার-প্লে খানিকটা বিপাকে ফেলে বোলিং দলকে। কেবল চারজন খেলোয়াড়কে যে বাইরে রাখা যায়। বাকিদের থাকতে হয় ৩০ গজ বৃত্তের ভেতর। এই সুযোগটাই কাজে লাগায় বিশ্ব ক্রিকেটের বাঘা বাঘা দল গুলো থেকে শুরু করে আফগানিস্তানের মত নবাগত দলরাও। তবে আফগানিস্তানকে ঠিক নবাগত বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই সংস্করণে তারা বাংলাদেশের চাইতেও ঢের এগিয়ে।
অল্প সময়ে তাঁরা টি-টোয়েন্টিটা ঠিক আয়ত্ব করে ফেলেছে। কিন্তু দেড় দশকেও পারেনি বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশনটা সামলেছেন একটা লম্বা সময় ধরে তামিম ইকবাল। তিনি অবসর নিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় সেটা ছিল অবধারিত। তবে আফসোসের বিষয় তাঁর বিকল্পটা আর খোঁজা হল না। লিটন দাস বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটারদের একজন।
তিনি নিজের জায়গাটা গড়ে নিয়েছেন। তিনি নিজের প্রতিভা দিয়েই ওপেনিং পজিশনটায় থিতু হয়েছেন। তবে আর বাকিরা আসা-যাওয়ার মাঝেও বোধ করি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মুনিম শাহরিয়ার থেকে শুরু করে তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন, কতজনই নামলো সেই শক্ত বাইশ গজে। কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারলেন না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে। এশিয়া কাপ হতে পারত বাংলাদেশের প্রস্তুতির সর্বোৎকৃষ্ট সুযোগ।
তার উপর দলে ইনজুরির কারণে নেই লিটন। বাকি ওপেনারদের এই তো সুযোগ। তবে সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলও কই! ১৩ রানের মাথায় মুজিব-উর রহমানকে উইকেট দিয়ে প্যাভিলনে ফেরেন বিজয়। আবারও হতাশা। আবারও হয়ত বাংলাদেশ নতুন এক ওপেনিং জুটির সন্ধানে ছুটবে। এশিয়া কাপে খুব বেশি কালক্ষেপন করার সুযোগ নেই। অনেকের মতে প্রথম ম্যাচে এমন মন্তব্য নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তবে নাঈম-বিজয় উদ্বোধনী জুটিকে খুব বেশি সময়ও তো দেওয়ার উপায় নেই।
কেননা নাঈমের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে নিন্দা বহু আগে থেকেই। তাছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর আউট হওয়াটা বেশ দৃষ্টিকটু। ব্যাট-প্যাডের মাঝে এক বিশাল ফাঁক গলে বল গিয়ে আঘাত করে স্ট্যাম্পে। আবারও সে পুরনো আলাপ। পা-টা ঠিক নড়ে না। এই সমস্যা তো আরেক ব্যাটার বিজয়েরও রয়েছে। তাঁর পা-টাও ঠিক নড়ে না। আর লেগ স্পিনের বিপক্ষে তো ঠিক বুঝে উঠতেই পারেন না তাঁরা।
এই দুইজনের কাঁধে ইনিংস শুরুর দায়িত্বটা ছেড়ে দেওয়া হবে বড্ড বেশি বোকামি। বিজয় তো বেশ সুযোগও পেয়েছেন। তবে এই ফরম্যাটটায় তিনি ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। মাঝে অবশ্য সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের একটা উদ্বোধনী জুটির গুঞ্জন প্রকট হয়েছিল। যখন সাধারণ পথ বেয়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না লক্ষ্যে, তখন ভিন্ন পথ নেওয়াটাই তো শ্রেয়। বাংলাদেশের তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হারাবার কিছু নেই।
অন্তত আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিটা আরও একবার নতুন অভিযানের আভাস দিচ্ছে। একটা প্রশ্ন, এই অভিযানের শেষটা ঠিক কোথায়?