দুয়ারে লাল বলের পেস বিপ্লব

স্পিনিং ট্র্যাক বানাও, পেসারদের সাইডবেঞ্চে বসিয়ে ম্যাচটা স্পিনারদের দিয়েই খেলিয়ে দাও — চান্দিকা হাতুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যৎসামান্য সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল অনেকটা এমনই। লাল বলের ক্রিকেটে সে সময়টা বাংলাদেশি পেসারদের জন্য এক প্রকায় ‘অপয়া’ই ছিল বলা চলে।

তবে দিন বদলেছে। বাংলাদেশি পেসাররা এখন স্পিনারদের মতোই অগ্রগণ্য। অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েও গিয়েছে। আর তাতেই হাতুরুসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রত্যাবর্তনে দেখা মিলল ভিন্ন এক চিত্র। আগের স্পিনারপ্রিয় হাতুরু এবার বোলিং রণকৌশল সাজাচ্ছেন পেসারদের দিয়ে। 

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশের ঘোষিত দলে ৫ পেসারের বিপরীতে স্পিনার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ২ জন। বার্তাটা পরিস্কার। আগেরবারের মতো ভুল করতে চাচ্ছে না বাংলাদেশ। 

২০১৯ সালে শেষ যে বার বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে এসেছিল আফগানিস্তান, সেবার স্বীকৃত কোনো পেসার ছাড়াই একাদশটা সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। উদ্দেশ্য ছিল, মিরপুরের স্পিনিং উইকেট দিয়ে আফগানদের ধরাশয়ী করা। কিন্তু সেবার নিজেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিল টাইগাররাই। রশিদ খানের স্পিন ঘূর্ণিতে সে ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বাংলাদেশ। 

এবারে স্কোয়াড দেখে তাই অনুমান করাই যায়, পেস আক্রমণ দিয়েই আফগানদের ঘায়েল করার দিকে চোখ টিম ম্যানেজমেন্টের। কিন্তু মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেটে এই কৌশলই আবার ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না তো বাংলাদেশের জন্য? 

দলে সাকিব নেই। অথচ তাঁর রিপ্লেসমেন্টে কোনো স্পিনারকেই দলভূক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ মিরাজ আর তাইজুলকে স্পিন আক্রমণের গুরুদায়িত্বটা নিতে হচ্ছে। একই ভাবে, এই ভাবনায় এটাও পরিস্কার যে, আফগানদের বিপক্ষে ৩ পেসার নিয়ে একাদশ সাজাবে বাংলাদেশ। তাসকিন, এবাদত, শরিফুল, খালেদ আর নবাগত মুশফিক হাসানের মধ্যে আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ৩ জন পেসারের অনায়াসে সুযোগ প্রাপ্তি ব্যাপারটা এখন নিশ্চিতই বলা যায়। 

কিন্তু মিরপুরের চিরায়ত উইকেটের বাস্তবতায় পেসাররা ঠিক কতটুকু ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারবেন? পরিসংখ্যান বলে, এই উইকেটে স্পিনাররাই সবচেয়ে বেশি সফল। এখন পর্যন্ত এই মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের মানদণ্ড বিবেচনায় আনলে দেখা যাবে, শীর্ষে থাকা ৫ জনই স্পিনার। 

২৫ ইনিংসে ৬৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরে রয়েছেন তাইজুল। এর পরের অবস্থানে আছেন মিরাজ। তাঁর উইকেটসংখ্যা ৪৯ টি। আর মিরপুরের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের শিকার সংখ্যা ৪৮ টি। 

সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর এই তালিকায় স্পিনারদের ধারের কাছেও কেউ নেই কোনো পেসার। এই মুহূর্তে দলে থাকা পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ টা উইকেট নিয়েছেন এবাদত হোসেন। এমন পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট যে, মাঠ বিবেচনায় কতটা অনভিজ্ঞ পেস বোলিং লাইনআপ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ পেস বোলিংয়ে যিনি আসন্ন টেস্টে নেতৃত্ব দিবেন সেই তাসকিন মিরপুরের মাটিতে লাল বলের ক্রিকেটের একটি মাত্রই উইকেট পেয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে মাঠটাই পেসারদের প্রতিকূলে, সেই মাঠে আদৌ কি প্রতাপ ছড়াতে পারবে তাসকিন, এবাদতরা?

তাছাড়া, রশিদ, মুজিবদের নিয়ে গড়া আফগান স্পিন আক্রমণের সামনে বাংলাদেশি ব্যাটাররাই বা কতটুকু লড়াই করতে পারবে, সেই প্রশ্নও থেকেই যায়। আফগানদের বিপক্ষে টেস্টে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বারবারই তাই চোখ রাঙানি দিচ্ছে। অবশ্য সেই তিক্ততা মুছে ফেলার পর্যাপ্ত রসদ আছে বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দলগত পারফরম্যান্স আশা জাগাচ্ছে। এখন দেখার পালা, সেই আশার বৃত্তে লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে কিভাবে পৌছায় বাংলাদেশ। 

লাল বলের ক্রিকেটে মিরপুরে কখনোই সেভাবে বাংলাদেশি পেসারদের জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। অবশ্য সুযোগটাই যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আসেনি। এবার এসেছে। ৫ পেসারের টেস্ট স্কোয়াডের জন্য তাই এবারই নিজেদের প্রমাণের পালা। 

সাদা বলের ক্রিকেটে হরহামেশাই বাংলাদেশ পেসাররা পারফর্ম করে থাকেন। এবার না হয় লাল বলের ক্রিকেটে পেসারদের একটু রঙিন হতে দেখা যাক। প্রতিকূলতা আছে, তবে সেই প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে প্রমাণ করার তাড়নাটাও যে আছে তাসকিন, এবাদতদের। 

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link