সমালোচকরাও আজ পাকিস্তানের গুণমুগ্ধ

আলোচনা নয়, বরং সমালোচনা হওয়ার মতই ক্রিকেট খেলছিল পাকিস্তান – বিশ্বকাপের শুরু থেকেই। সুপার টুয়েলভের প্রথম দু’টো ম্যাচে পরাজয়। ভারতের বিপক্ষে ভাল অবস্থান থেকে ছিটকে যাওয়ার পর জিম্বাবুয়ের কাছে লজ্জাজনক আত্মসমর্পণ। পতনের চূড়ান্ত দুয়ারটাই দেখে ফেলেছিল পাকিস্তান দল।

সেমিফাইনালে না ওঠাটা নিশ্চিত তো ছিলই প্রায়, তাঁর ওপর দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বিরাট প্রশ্ন উঠেছিল। বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল টপ অর্ডার। বাবর আজম কিংবা মোহাম্মদ রিজওয়ানের মত কিংবদন্তিরা যেন খেলছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে, টি-টোয়েন্টির মানসিকতাটাই ধরতে পারছিলেন একদম। আর মিডল অর্ডারের লেজে গোবরে বাস্তবতা তো দলের ওপেন সিক্রেট। সবাই জানেন, কিন্তু কেউ কিছু বলেন না।

এখানেই কি শেষ! যে পেস বোলিং নিয়ে পাকিস্তানের এত গৌরব – সেই বিভাগের কাণ্ডারি শাহীন শাহ আফ্রিদি ইনজুরি থেকে ফিরেছিলেন বটে, কিন্তু ছন্দটা ফিরে পাচ্ছিলেন। যখন পেলেন, তখন সবাই বলাবলি করছিল – একটু কি দেরি হয়ে গেল না!

হ্যাঁ, একটু দেরি তো হয়েছিলই। কিন্তু, দলটা পাকিস্তান বলেই কাগজে কলমে বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হার যেন তাঁদের উজ্জীবিত করল নতুন করে। বদলে যাওয়া পাকিস্তান হারাল বাংলাদেশকে – পেল সেমিফাইনালের টিকেট। এরপরের ফলাফলটা কি – তা তো সবারই জানা।

সেমিফাইনালে তাঁদের সামনে দাঁড়াতেই পারল না নিউজিল্যান্ড। ৫০ ওভার ও ২০ ওভারের বিশ্বকাপ মিলিয়ে এই নিয়ে চতুর্থবারের মত পাকিস্তানের কাছে তাঁরা হারল সেমিফাইনালে গিয়ে। পেসারদের ‍দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর এবার জ্বলে উঠলেন দুই প্রসিদ্ধ ওপেনার বাবর ও রিজওয়ান। হেসে খেলেই বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকেট পেল বাবর আজমের দল। ১৩ বছর পর কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে গেল তারা। পাঁচ বছর পর উঠল আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে।

সমালোচনার তীর একটু বেশিই হজম করতে হচ্ছিল দলের ২৮ বছর বয়সী অধিনায়ককে। সেটা হওয়ারও কথা। বাবরের মধ্যে বাদশাহী ব্যাপারটা ছিল না একদমই। তবে, তিনি বিশ্বাস হারাননি। ভেঙে পড়েননি মানসিক ভাবে।

ফাইনাল নিশ্চিত করে বললেন, ‘ক্রিকেটে উত্থান কিংবা পতন থাকবেই। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করতাম, ফিরে আশা সম্ভব। টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ, তাঁদের জন্যেই আমরা সবাই মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে পেরেছি।

সেমিতে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৪২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। এটাই সমালোচকদের বার্তা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বাবর বলেন, ‘দলের অধিনায়কের সমালোচনা হওয়ার অর্থ হল দলও সমালোচিত হবে। সমালোচনা হতেই পারে। তবে, ব্যক্তিগত আক্রমণ কাম্য নয়। এখন সমালোচকরা চাইলে আামদের খেলা উপভোগ করতে পারেন, কারণ পাকিস্তান এখন ফাইনালে।’

সেই ফাইনালের টিকেট আসল কি এক অনবদ্য পারফরম্যান্সে। ইয়ান বিশপ টুইট করেছেন, ‘আশ্চর্যজনক, অভূতপূর্ব ও অবশ্যই ভিন্ন এক স্তরের ক্রিকেট খেলল পাকিস্তান। ওয়াও!’

আর এমন ফিনিক্স পাখি হয়ে ফেরা পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে ১৯৯২ ফিরবে না তা কি করে হয়।  সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভনও তাই লিখলেন, ‘১৯৯২-এর স্মৃতি ফিরে আসছে। পাকিস্তানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।’

১৯৯২ সত্যিই ফিরবে যদি, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডেও ক্রিকেট বিধাতা হাসেন পাকিস্তানের হয়ে। অপেক্ষা এখন কেবল ১৩ নভেম্বরের। ‘আনলাকি’ ১৩-ই কি পাকিস্তানের জন্য লাকি হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link