একটা শঙ্কা এখনও পিছু ছাড়ছে না পাকিস্তান ক্রিকেটের। আসন্ন ওয়ানদডে বিশ্বকাপে ১৯৯২ এর চ্যাম্পিয়ন দলটির খেলা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে এসবের মাঝে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়ে রাখল বাবর আজমের দল। একটা আগাম বার্তা ছড়িয়ে দিল বিশ্বকাপ বাগিয়ে নেওয়ার।
প্রায় ৩১ বছর আগে ইমরান খান পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ের মাঝে, একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে পাকিস্তান ক্রিকেট। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্বকাপে ১৯৯৯ সালে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও হাতছাড়া করেছে পাকিস্তান।
এবার আবারও স্বপ্নে বুক বাঁধতে বাধ্য করছে বাবররা। এইতো ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে পাকিস্তান। পুরো ওয়ানডে সিরিজ জুড়েই আধিপত্যের ছাপ রেখেছে তারা। এমনকি পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের এক নম্বরে উঠে আসে শাহীন শাহ আফ্রিদিরা।
তাইতো বাবর আজমও শুনিয়েছেন আশার বাণী। তিনি বলেন, ‘সিরিজ জেতা দুর্দান্ত বিষয় এবং একই সাথে এক নম্বর র্যাঙ্কিং অর্জন করা যা আমাদের বিশ্বকাপের জন্য একটি ভাল অবস্থানে রেখেছে।’ বাবর বিশ্বাস করতে চান যে তার দল বিশ্বকাপের জন্যে প্রস্তুত।
দলের টপ অর্ডারের সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, সে কথা বলা যায়। ইমামুল হককে সঙ্গী করে বাবরের সাথে টপ অর্ডারে আরও থাকছেন ফখর জামান। দলের মিডল অর্ডার সামলে নেওয়ার দায়িত্বটা নির্দ্বিধায় নিজ কাঁধে নিয়ে নিতে পারবেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আঘা সালমানও নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়ে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পোক্ত করবার জোর দাবি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে অভিজ্ঞতা আর পেশিশক্তির মিশেলে ইফতেখার রয়েছেন ব্যাটিং ইনিংস শেষ করবার জন্যে। এরপর বোলিং আক্রমণে পাকিস্তান তো বরাবরই সেরা। তাদের বোলিং ইউনিটের নেতৃত্বে বরাবরের মতই থাকছে পেসাররা। আফ্রিদি হবেন সেনাপতি। সাথে থাকবেন নাসিম শাহ, হারিস রউফ, ওয়াসিম জুনিয়ররা। বৈচিত্র আনতে ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান তো থাকছেনই।
সুতরাং পাকিস্তান নিজেদের বিশ্বকাপের দল মোটামুটি গুছিয়ে ফেলেছে এ কথা বলাই যায়। দলটা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দূর্দান্ত এক ফলাফলও এনে দিয়েছে। যদিও নিন্দুকদের মতে নিউজিল্যান্ডের এই দলটি ছিলনা ততটা শক্তিশালী। কেননা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের কারণে ব্ল্যাকক্যাপস শিবিরে ছিলেন না আটজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
সেদিক থেকে দ্বিতীয় সারির দলে হিসেবে হয়ত অনেকেই আখ্যায়িত করতে পারে ব্ল্যাকক্যাপসদের এই দলটাকে। যদিও এমনটা মানতে নারাজ পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তার মতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোন দলই দ্বিতীয় সারির নয়।
এই বিতর্ক পাশ কাটিয়ে আবার মূল আলোচনায় ফেরা যাক। পাকিস্তান সিরিজের প্রথম চারটি ম্যাচই জিতেছে বেশ বড় ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড ৪৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে। অন্তত একেবারেই ফেলনা নয় নিউজিল্যান্ডের এই দলটি সেটা অন্তত বলাই যায়। এই পারফরমেন্সের পর নিশ্চয়ই পাকিস্তানের দর্শকদের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখার কথা।
কিন্তু দলটা যখন পাকিস্তান, তখন নিশ্চয়ই একটু সংশয় থেকেই যায়। কেননা বড় বড় টূর্নামেন্ট গুলোতে পাকিস্তানকে নিয়ে নিশ্চিত কোন মত প্রকাশ করা দুষ্কর। এই দলটা ১৯৯২ সালে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে। আবার বহুবার টূর্নামেন্টের শুভ সূচনা করেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খাবি খেয়েছে।
এর সাম্প্রতিক উদাহরণ, ২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। টানা দুইটি বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দূর্দান্ত খেলেও শেষ অবধি শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি পাকিস্তান। একবার সেমিফাইনাল ও আরেক ফাইনালে আটকে গেছে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। এবার সেই দশা কাটিয়ে ওঠার টোটকার সন্ধানে নিশ্চয়ই রয়েছে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। সব শঙ্কার শেষে পাকিস্তান শেষ অবধি পাকিস্তানের গল্প তোলা থাক সময়ের হাতে।