বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা। এই উক্তির বিশ্বব্যাপী উদাহরণ নিশ্চয়ই লিওনেল মেসি। ৩৫ বছর বয়সে যেখানে ফুটবলাররা অবসরের পরিকল্পনা করতে শুরু করে, ঠিক তখন তিনি জিতে নিলেন বিশ্বকাপ শিরোপা। তবে বাংলাদেশেও এমন এক উদাহরণ রয়েছে। না অর্জনের বিস্তৃতিতে তিনি মেসির যোজন যোজন দূরে। তবুও বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রিকেট খেলা চালিয়া যাওয়ার উদাহরণ তিনিও দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটাঙ্গনে।
৩৮ বছর বয়সে তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলার। সেই সালাউদ্দিন পাপ্পু এবার নিজের পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। খুব পরিচিত মুখ তিনি নন। তাঁর গল্পটা কেউ বলে না। তবে খেলা ৭১ অবশ্য সেই গল্প তুলে ধরেছিল। তিনি মনখুলে বলেছিলেন নিজের ক্রিকেট জীবনের সকল অজানা কথা। শেষ বেলায় তিনি নিজের ক্যারিয়ার সেরা রান করে তবেই থেমে গেলেন।
ফুটবলার বাবার ছেলে সালাউদ্দিন পাপ্পুও শুরু করেছিলেন ফুটবল দিয়েই। তবে হাঁটুর ইনজুরি তাঁকে ক্রিকেটের দিকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করে। কিন্তু ক্রমশ তিনি ক্রিকেটকে ভালবাসতে শুরু করেন। এরপর গুণে গুণে ২৬টি বছর তিনি খেলে গেছেন ঘরোয়া ক্রিকেট। যার অধিকাংশ সময়ই তিনি খেলে গেছেন দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট। সেই দ্বিতীয় বিভাগেই তিনি খেলে ফেললেন নিজের পেশাদার ক্রিকেটের শেষ ম্যাচ।
অ্যাম্বার স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে তিনি দ্বিতীয় বিভাগের শেষ ম্যাচে মাঠে নামেন। তাঁর দলের প্রতিপক্ষ ছিল রায়ের বাজার অ্যাথলেটিক ক্লাব। সেই ম্যাচে, ম্যাচসেরার পুরষ্কারটাও নিজের করে নিয়েছেন পাপ্পু। খেলেছেন নিজের ক্যারিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ ইনিংস।
পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে তিনি করেন ১৪৮ রান। মাত্র ১০৯ বলে দুর্দান্ত এই ইনিংসটি খেলেন প্রায় ১৩৬ স্ট্রাইকরেটে। তাঁর ব্যক্তিগত এই বিশাল রান, তাঁর দল অ্যাম্বার স্পোর্টিংকেও বড় সংগ্রহ এনে দেয়। অনায়াসেই ম্যাচটি জেতে পাপ্পুর দল। ঠিক এমন মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্যেই প্রসিদ্ধ ছিলেন পাপ্পু।
এর আগে সালাউদ্দিন পাপ্পু খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি এবং লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটও খেলেছেন পাপ্পু। সেখানে একটি শতকের পাশাপাশি একটি অর্ধশতকও করেছেন তিনি। এত বছরের ক্যারিয়ারকে আরও বছর দু’য়েক টেনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন খেলা ৭১-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
তিনি বলেছিলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমার আরও দুইটা বছর খেলে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তারপর আমার একটি বাড়তি সুবিধা আছে, আমি ক্রিকেট বোর্ডে থেকে কোচিং লেভেল ওয়ান করা আছে। তারপর আম্পায়ারিং অ্যাসোসিয়েশন থেকেও আম্পায়ারিং প্রশিক্ষণ পাশ করা আছে। আর দুইটা বছর ক্রিকেটটা খেলে এরপর হয় আম্পারিং নয় ক্রিকেট কোচিং পেশায় ঢুকে যাবো।’
নিজের সেই পরিকল্পনাতেই অনঢ় থাকছেন তিনি। সালাউদ্দিন পাপ্পু ৪৩ বছর বয়সেও ক্রিকেট খেলাটা ঠিক বন্ধ করে দিতে চাননা। তিনি স্রেফ পেশাদার ক্রিকেট থেকেই অবসর নিয়ে নিলেন। এ বিষয়ে সালাউদ্দিন পাপ্পু খেলা ৭১ কে বলেন, ‘একদিন তো থামতেই হতো এখন থেমে গেলাম। সামনে ইনশাল্লাহ কর্পোরেট লিগ নিয়ে আমার পুরাপুরি প্ল্যান। যা করব কর্পোরেট লিগ নিয়ে। এখন পরিকল্পনা ওইখানেই আমি ভালো খেলার চেষ্টা করব।’
অদম্য এক স্পৃহা তাঁকে যেন থামতেই দিতে চায়না। সালাউদ্দিনের অনুপ্রেরণাতেই তাঁর ছোট ভাই আলাউদ্দিন বাবুও খেলেছেন ক্রিকেট। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি নিয়মিত খেলেন। এই সালাউদ্দিন পাপ্পুদের মত হার না মানা মানসিকতার মানুষরাই তো তরুণদের রোল মডেল। তাঁরাই তো বারবার প্রমাণ করে দিয়ে যান, বয়স কেবলই এক বাহানা।