ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ম্যাচ। যেন বিশ্ব ফুটবলে দুই ফুটবল সভ্যতার দ্বৈরথ—একপাশে ইতিহাসের মহীরূহ রিয়াল মাদ্রিদ, আরেক পাশে নতুনের গান গাওয়া এক নতুন রাজবংশ—প্যারিস সেইন্ট জার্মেই।
ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ে ম্যাচ শুরুর সাইরেন বেজে উঠলো কিছু দেরিতে। কিন্তু পিএসজির আক্রমণে দেরি ছিল না এক বিন্দু। যেন তারা ট্র্যাফিকেই পরিকল্পনা আঁকছিল—কার পায়ে যাবে বল, কোন কাঁধে ভর দিয়ে নামবে বজ্রপাত।
মাত্র ছয় মিনিট পার হয় নি, কোর্তোয়া দুই দফা বাঁচিয়েও তৃতীয়বার আর পারেন নি। ফ্যাবিয়ান রুইজের পা থেকে বের হওয়া গোল যেন রিয়ালের বুকের ঠিক মাঝখানে গেঁথে দেয়া এক তীক্ষ্ণ তীর। নয় মিনিটেই দ্বিতীয় গোল—উসমান ডেম্বেলে। যেন নিজের ব্যালন ডি’অর ট্রফির খসড়া স্বাক্ষর করলেন মাদ্রিদের বুক চিড়ে।
প্রথম দুই গোলেই ডেম্বেলে এসেনসিও আর রুডিগারের কাছ থেকে বল কেড়েছেন এমন সহজতায়, যেভাবে একজন বয়স্ক কাকু মজা করে শিশুদের হাত থেকে চকলেট তুলে নেয়—না জোরে, না জবরদস্তিতে, বরং নিছক ছলনায়। আর তৃতীয় গোলের সময় তো ডিফেন্ডার বলেই কিছু ছিল না, যেন পিএসজির গতির ঝড় তাদের মাঠ থেকেই উড়িয়ে নিয়ে গেছে।
জাবি আলোনসোর দল তখন খুঁজে ফিরছে নিজেদের ছায়াকে। পিএসজির ওভারল্যাপ, কুইক পাসিং আর ব্লাইন্ড ওয়ান-টু মুভমেন্টের সামনে তারা ছিলেন নিছক দর্শক। ঘড়ি তখনও ২৫ মিনিট ছুঁয়েছে কি না, স্কোরবোর্ড জানিয়ে দিল ৩-০।
রিয়ালের জন্য ফেরার রাস্তা তখন ধূলি-ধূসর, মরীচিকার মতো অলীক। বরং ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা স্পর্শ করার আগেই লুইস এনরিকে মাঠ থেকে তুলে নিলেন ডেম্বেলে আর কাভারাতস্খেলিয়াকে—সম্ভবত রিয়ালের প্রতি একরকম দয়া দেখিয়ে। তবুও শেষ কষাঘাতটা যেন বাকি ছিল। ৮৭ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা রামোস করলেন চতুর্থ গোল। ষোল কলা পূর্ণ হলো রিয়াল মাদ্রিদের ব্যর্থতার।
এই সিজনে যেন কোন কিছুই ঠিক হচ্ছে না রিয়াল মাদ্রিদের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে লড়াই করা হয় নি, লা লিগায় বার্সেলোনা লিগ জিতে নিয়েছে কয়েক ম্যাচ হাতে রেখেই, কোপা ডেল রে’র ফাইনালেও হারতে হয়েছে বার্সেলোনার কাছে। আবার এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে কিংবদন্তি মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচের রিয়াল মাদ্রিদ হয়েছে। এত হারানোর ভীড়ে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য খুশির সংবাদ একটাই, সিজনটা শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে, পিএসজি যেন এক অপ্রতিরোধ্য যান্ত্রিক সৈন্যদল। সব কিছু জিতে এসেছে তারা এই ক্লাব বিশ্বকাপে—কাঁধে আত্মবিশ্বাস, চোখে আগুন। ফাইনালে প্রতিপক্ষ চেলসি। কিন্তু এই পিএসজিকে থামানো কি সত্যিই সম্ভব?
আর এই ডেম্বেলেকে?