পাঠান-জনসন: কিংবদন্তিদের লাগামহীন যুদ্ধ

অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের সাথে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের লড়াই ক্রিকেট ইতিহাসের চিরন্তন এক দৃশ্য। আইসিসি টুর্নামেন্ট কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ছাপিয়ে এবার সেই উত্তাপ এসে লেগেছে লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগেও। ভিলওয়ালা কিংস বনাম ইন্ডিয়া ক্যাপিটালসের ম্যাচে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ভারতীয় ব্যাটার ইউসুফ পাঠান এবং অজি পেসার মিচেল জনসন। তাঁদের মুখোমুখির ঘটনা মাঠ এবং মাঠের বাইরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভীষণভাবেই।

গত কয়েক বছরে ক্রিকেট বাণিজ্যের অংশ হিসেবে ফ্যাঞ্চাইজি টি টোয়েন্টি লিগের আদলে গড়ে উঠেছে লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগ। এই টুর্নামেন্টগুলোতে সাধারণত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়া ক্রিকেটাররাই খেলতে পারেন। পিকনিক লিগের আদলে শুরু হলেও বর্তমানে অর্থের ঝনঝনানিতে যথেষ্টই গুরুত্ব বহন করে। তবে লিজেন্ডস লিগের একটা স্বতন্ত্র ব্যাপার হলো ম্যাচে নারীদের উপস্থিতি। আম্পায়ার হিসেব টুর্নামেন্টের বড় একটা অংশজুড়ে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন নারীরা। 

এবারের লিজেন্ডস লিগের প্রথম কোয়ালিফায়ারে যোধপুরে মুখোমুখি হয় ভিলওয়ালা কিংস এবং ইন্ডিয়া ক্যাপিটালস। এদিন ভিলওয়ালা কিংসের হয়ে মাঠে নামেন ইউসুফ পাঠান, অন্যদিকে বিপক্ষ দলে ছিলেন মিশেল জনসন।

ঘটনার সূত্রপাত ভিলওয়ালের টস জিতে ব্যাটিংয়ের সময়। মারকুটে ব্যাটিং করতে থাকা পাঠানকে হঠাৎই জনসনের দিকে রেগেমেগে যেতে দেখা যায়। জনসনও কয়েক পা সামনে এগিয়ে আসেন। দুজনে বাদানুবাদের পর জনসন ধাক্কা দেন পাঠানকে। ততক্ষণে ম্যাচ অফিশিয়ালস এবং দলের অন্যরা দুজনকে সরিয়ে দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়। অন্যথায় দুজনের মাঝে প্রায় হাতাহাতি শুরু হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

শুরুতে ঝগড়ার সূত্রপাত জানা না গেলেও ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছে সকল তথ্য। সেদিন ম্যাচের দায়িত্বে ছিলেন নারী আম্পায়ার কিম কটন। জনসনের ওয়াইড লাইন ঘেঁষে যাওয়া এক ডেলিভারি নিয়েই মূলত আপত্তি ছিল পাঠানের। তাঁর দাবি ছিল বলটি ওয়াইড হয়েছে, কিন্তু আম্পায়ার তাঁর দাবিতে সাড়া দেননি। ফলে রেগে পাঠান আম্পায়ারকে স্লেজিং করেন। এই ঘটনাই রাগিয়ে তোলে জনসনকে, সেখান থেকেই ঘটনার শুরু।

এই ঘটনায় অবশ্য শাস্তি পেয়েছেন জনসনই, বাজে আচরণের জন্য তাঁর ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা করেছেন লিজেন্ডস লিগের ক্রিকেট কমিশনার রবি শাস্ত্রী। ইউসুফ অবশ্য এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন, কোনো জরিমানা ছাড়াই পার পেয়ে গেছেন।

‘আমরা এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে এসেছি। গতদিন মাঠে যা হয়েছে সেটা মোটেও কাম্য নয়। সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আমরা ভিডিওটা বেশ কয়েকবারই দেখেছি। আমি আশা করি সবাই এতে একটা বার্তা পেয়ে গেছেন যে কোনো প্রকার অক্রিকেটীয় আচরণ সহ্য করা হবে না এবং এই ধরনের ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটবে না’, বলেন লিজেন্ডস ক্রিকেট লিগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রমন রাহেজা।

ম্যাচে অবশ্য শেষ হাসি হেসেছেন জনসনই। ইউসুফ পাঠানের ২৪ বলে ৪৮ আর স্বদেশী শেন ওয়াটসনের ৬৫ রানের সুবাদে ২২৭ রানের বিশাল টার্গেট দিলেও রস টেইলর ঝড়ে জিতে গেছে ইন্ডিয়া ক্যাপিটালস। তাঁর ৩৯ বলে ৮৪ রানের বিধবংসী ইনিংসে তিন বল আগে থাকতেই ম্যাচ জিতে গেছেন জনসনরা।

ম্যাচে জনসনের তিন বলে দুই ছক্কা আর এক চার হাঁকালেও পাঠানকে আউট করে ঠিকই প্রতিশোধ নিয়েছেন জনসন। তবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে জনসন-টেইলরদের কাছে হারলেও ঠিকই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ফাইনালে তাদের সঙ্গী হয়েছেন পাঠানরা। ফাইনালে এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে তাই আরো একবার ফিরে ফিরে আসবে কোয়ালিফায়ারে এই দুজনের দ্বন্দযুদ্ধের স্মৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link