লাসিথ মালিঙ্গার উত্তরসূরী হিসেবেই তাকে সবাই ধরে নিয়েছিল। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ থেকেই উত্থান মাথিশা পাথিরানার। মহেন্দ্র সিং ধোনির তত্ত্বাবধানে যথাযথভাবেই ব্যবহৃত হয়েছিলেন পাথিরানা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সার্কিটে এসেই কেমন একটা খেই হারিয়ে ফেলছেন লংকান এই পেসার।
বয়সটা একেবারেই অল্প। তবে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঝাঁঝ, ফ্রাঞ্জাইজি ক্রিকেটে অর্থের ঝনঝনানি- এসব কিছুর সাথে মোলাকাত হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কান মাথিশা পাথিরানার। স্বাভাবিকভাবেই তার উপর দায়িত্ব বেড়েছে। বয়স কম হলেও প্রত্যাশাও বেড়েছে।
কিন্তু সেই প্রত্যাশার ভারে যেন নুইয়ে পড়ছেন তিনি। দিকভ্রষ্ট হচ্ছেন বটে। যথাযথ উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই ম্যাচে চার ওভার শেষে ৫৪ রান খরচা করেছিলেন ডান-হাতি এই পেসার। বেজায় বাজে বোলিং তিনি করেছেন বটে। তার থেকেও দৃষ্টিকটু ঠেকেছে তার অনিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ।
সেই ম্যাচটিতে নয় খানা ওয়াইড দিয়েছিলেন। তিনটি নো-বলও ছুড়েছিলেন তিনি। মূলত নিজের বলের গতি বাড়াতেই বাড়তি প্রচেষ্টা করেছেন তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই। সেটাই বরং কাল হয়েছে তার জন্যে। গতিই যে শেষ কথা নয়- সেটা সম্ভবত তিনি ভুলে গেছেন। তাকে মনে করিয়ে দেওয়ার কেও প্রয়োজনও বোধ করেনি সম্ভবত।
তবুও নিজ প্রচেষ্টায় তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেছেন দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি-তে। সে ম্যাচে ২৮ রান দিয়েছেন তিনি ৩.৪ ওভারে। নিজের কোটাও পূর্ণ করতে পারেননি ইনজুরির কারণে। পায়ের পেশিতে টান তার আগের দিনই লেগেছিল, অতিরিক্ত গতি জেনারেট করতে গিয়েই শরীরের উপর বাড়তি চাপ দিচ্ছেন তিনি। শরীরটা যে এখনও তৈরি হয়নি।
পাথিরানা সম্ভবত এসব কিছু আন্দাজ করতে পারছেন না। পেসারদের ক্যারিয়ারে মূল অন্তরায় ইনজুরি। গতির নেশায় বুদ হয়ে কতশত তারকা গেছে খসে- সে হিসেব কি আর আছে! পাথিরানা হয়ত সেই মিছিলেই সামিল হতে চলেছেন।
কেননা দিনশেষে দল চাইবে ফলাফল। যতক্ষণ অবধি আপনি দলকে ফলাফল এনে দিতে সহয়তা করবেন, ততক্ষণই আপনার চাহিদা থাকবে। যেমন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথাই ধরা যেতে পারে। বেশ অল্প সময়ের ব্যবধানেই বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছিলেন পাথিরানা।
শুরুর বেশ কয়েকটি ম্যাচও তিনি খেলেছিলেন। তবে আশার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। তাতে করে বাকিটা সময় কাটাতে হয়েছে সাইডবেঞ্চে বসে। পাথিরানার ক্ষেত্রে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও হতে পারে। সাইডবেঞ্চ থেকে একদিন তিনি চলে যেতে পারেন দৃশ্যপটের বাইরে।
ছয় ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার ইকোনমি রেট ৯.৫৫। উইকেট শিকারি বলেই স্রেফ তিনি এখনও সুযোগটা পেয়ে যাচ্ছেন। ১১টি উইকেট নিয়েছেন তিনি ১০.৭ স্ট্রাইকরেটে বল করে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি উইকেট বাগিয়েছেন। সে কারণেই তার উপর এখনই আস্থা হারিয়ে ফেলছে না শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ইনজুরি জর্জরিত হয়ে গেলে পাথিরানার ক্যারিয়ার অকালে সীমিত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাছাড়া তার বোলিং অ্যাকশনও বেশ জটিল। এমন এক বোলিং অ্যাকশনের বোলারদের একটু বাড়তি সতর্ক থাকতেই হয়। পাথিরানারও তাই বাড়তি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বোর্ড ও শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্টকে এগিয়ে আসতে হবে, তার সহয়তায়। নতুবা প্রতিপক্ষের জন্যে হতে পারেন দারুণ বন্ধু। বাংলাদেশের সমর্থকরা মজার ছলে বলেই বসেছেন পাথিরানা তো বাংলাদেশের হয়েই খেলে।