যে যুদ্ধটা টিকে থাকার

সালটা ২০১৬, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে নিজের জায়গা ধরে রাখতে জীবন বাজি রেখে খেলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রেন্ট বোল্টের একটি ডেলিভারিতে ধাওয়ানের হাত ভেঙে যায়। তবুও দল থেকে বাদ পড়ার ভয়ে তিনি খেলা চালিয়ে যান এবং প্রায় ১৭ রান করেন।

জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা একটা স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে যে কতটা যুদ্ধ করতে হয়, তাঁর জলন্ত উদাহরণ শিখর ধাওয়ান।

সালটা ২০১৬, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে নিজের জায়গা ধরে রাখতে জীবন বাজি রেখে খেলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান। কোলকাতায় অনুষ্ঠিত সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রেন্ট বোল্টের একটি ডেলিভারিতে ধাওয়ানের হাত ভেঙে যায়। তবুও দল থেকে বাদ পড়ার ভয়ে তিনি খেলা চালিয়ে যান এবং প্রায় ১৭ রান করেন। পরে জানা যায়, সেই সময় তাঁর হাত ভেঙে গিয়েছিল।

একটি ইউটিউব শো তে এ নিয়ে শিখর ধাওয়ান বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল সেটা। তখন আমি ভীষণভাবে হতাশ ছিলাম। জানতাম, রান না করতে পারলে দল থেকে বাদ পড়তে হবে। প্রথম ইনিংসে আমি আউট হয়ে যাই, আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গিয়ে ট্রেন্ট বোল্টের বল হাতে লাগে, আর সঙ্গে সঙ্গে হাতটা ভেঙে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতাম, যদি আমি সেই ইনিংসে না খেলি, তাহলে দল থেকে ছিটকে পড়ব। তাই সিদ্ধান্ত নিই, না, আমি খেলব। আমি ইনিংসটা শেষ করেই মাঠ ছাড়ব। যখন কোনো উপায় নেই, তখন মরতেই হলে মাঠে থেকেই মরব। ভাঙা হাতে খেলেছি, ১৫-২০ রান করেই আউট হয়েছি। আর তারপরই টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ে যাই।’

এই শিখর ধাওয়ানই ২০১৯ বিশ্বকাপে আরও একবার একই কাজ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভাঙা আঙুল নিয়ে নামলেন মাঠে। আঙুল ফুলে গিয়েছে, ব্যথায় হাত কাঁপছে। তবুও ব্যাট থামাননি। ওভালের সেই ম্যাচে করেছিলেন ১১৭ রান মাত্র ১০৯ বলে। পেস আক্রমণ সামলেছেন, স্পিনকে খেলেছেন দাপটের সঙ্গে। ব্যাট তুলে জানান দিয়েছেন—আঘাতটা শরীরে, ইচ্ছেশক্তিতে নয়।

তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইনিংসই হয়ে গেল তাঁর শেষ ম্যাচ সেই বিশ্বকাপে। চোটের কারণে ছিটকে যান পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই। তবুও ওই এক ইনিংসে ধাওয়ান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, একজন ব্যাটসম্যান কেবল রানেই নয়, মনের জোরেও কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন।

২০২৩ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন শিখর ধাওয়ান। ৩৪টি টেস্ট, ১৬৭টি ওয়ানডে, ৬৮টি টি-টোয়েন্টি আর ১০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান—এই পরিসংখ্যান তার সাফল্যের প্রমাণ। কিন্তু সংখ্যার বাইরেও ধাওয়ান ছিলেন এক যোদ্ধা, যে কষ্ট সহ্য করে নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন।

শিখর ধাওয়ান হয়তো আর ভারতের জার্সিতে মাঠে নামবেন না। কিন্তু তার ভাঙা হাতে খেলা ইনিংস, কিংবা ভাঙা আঙুলে বিশ্বকাপের শতরান—এসব গল্প থেকেই ভবিষ্যতের ক্রিকেটাররা শিখবেন, কীভাবে খেলা যায় হৃদয় দিয়ে।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link