ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির সুপার লিগ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্বে আড়ালের যাদেরকে মনে ধরেছে –
- শামীম হোসেন পাটোয়ারি
শামীমকে আমি এখনই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে চাই। এবং ওয়ানডের জন্য চাই, নিয়মিত প্রাথমিক দলে বা ক্যাম্পে রাখা হোক যেন ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা যায়। তাকে নিয়েও আগে কয়েকবার লিখেছি। আবারও লিখছি। বলা ভালো লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
তাঁর ব্যাট স্পিড অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশে এরকম ব্যাট স্পিড আগে দেখেছি কেবল ছন্দে থাকা সাব্বির রহমানের। এখন শামীমের মতো আর কারও দেখি না। তার চোখও খুব ভালো, লেংথ পড়তে পারেন আগেই। শরীর অনেকটা ম্যারাডোনার মতো, খাঁটি বাংলায় গাট্টাগোট্টা। হাতে জোর প্রচণ্ড। ব্যাট চালান চাবুকের মতো। উইকেটে দৌড়ান গুলির বেগে। ছয়-সাত নম্বরে যেরকম একজনকে আমরা খুঁজছি, শামীম হতে পারেন সেটার সমাধান।
বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানের মতো শক্তির জায়গাটাই তার বড় দুর্বলতা। লেংথ আগে পড়তে পারেন আর ব্যাট স্পিড ভালো বলে তিনি অনেক সময়ই অফ স্টাম্পের বাইরের বল অ্যাক্রস খেলে ফেলেন কিংবা জোর করে বানিয়ে শট খেলতে গিয়ে আউট হন। শট সিলেকশন আরও ভালো করার ব্যাপার আছে।
তার অফ স্পিন বোলিং আগে যা দেখেছিলাম, এখন আরেকটু ভালো মনে হলো। খুব বিশেষ কিছু নয়, তবে বেশ কার্যকর। একটু জোরের ওপর করেন, ব্যাটসম্যানদের জায়গা দেন না। ব্রেক থ্রু দেওয়ার প্রবণতা আছে। নতুন বল, পুরনো বল, সব সময়ই উপযোগী। টি-টোয়েন্টি দলে এরকম একজন যদি থাকেন যে দুই-তিন ওভার করে দিতে পারেন, দলের ব্যালান্সের জন্য তা দারুণ।
তার ফিল্ডিং বাংলাদেশের বাস্তবতায় অবিশ্বাস্য। মাঠে দারুণ ক্ষীপ্রতায় দৌড়ান। যতটা মাঠ তিনি কাভার করেন, যেসব ডাইভে কিছু চার বাঁচাতে দেখেছি, বাংলাদেশে এরকম আমি আগে কখনও দেখিনি। বৃত্তের ভেতরও তার রিফ্লেক্স, তার অ্যান্টিসিপেশন, ডাইভিং, সব দুর্দান্ত। থ্রোয়িং আরও ভালো করতে হবে। যদিও এখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে বা বড় জায়গায় চাপের মধ্যে ফিল্ডিং করেননি। তবে আমি বিশ্বাস করি, তিনি যদি পথে থাকেন, বাংলাদেশ থেকে প্রথম বিশ্বমানের ফিল্ডার হতে পারেন তিনিই, হার্শেল গিবস-অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসদের মানের হতে পারেন।
তাকে মনে ধরার সবচেয়ে বড় কারণ, মাঠে তার অ্যাটিটিউড। একদম ভয়ডরহীন, সাহসী, প্রাণবন্ত, চনমনে। এরকম একজন ক্যারেকটার থাকলে দলও চাঙা থাকে।
অবশ্যই স্কিলে ও মাঠের ভেতরের সবকিছুতে অনেক উন্নতির ব্যাপার আছে। মাঠের বাইরে অনেক অনেক হাতছানি থেকে নিজেকে সামলে রাখার ব্যাপার আছে। সেসব না পারলে সব শেষ। তবে তার ভেতর মসলা আছে।
- ইমরান উজজামান
এই লিগ দিয়েই তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক। দুই বছর আগে ঢাকা লিগের ওয়ানডে ফরম্যাটে তার একটি ইনিংস দেখেছিলাম, ৫৪ বলে ৭৫। এবারের লিগে আরেকটু ভালো করে দেখার অবকাশ মিললো।
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, কিপারও। বাড়ি যশোর। তার ক্ষেত্রেও প্রথম যে কথাটি বলতে হয়, ভয়ডরহীন। একদম প্রথম বল থেকে শট খেলতে পারেন। বড় শট খেলার ক্ষমতা সহজাত বলেই মনে হয়। ম্যাচের প্রথম বলে সৈয়দ খালেদ আহমেদকে ছক্কা, ম্যাচের প্রথম দুই বলে তাসকিন আহমেদকে ছক্কা-চার মেরে দেন। এবারের লিগে তার কয়েকটি ইনিংস ১৭ বলে ৪০ (৪ ছক্কা), ১৮ বলে ৪১ (৫ ছক্কা), ৪৬ বলে ৬৫ (৪ ছক্কা)। পাওয়ার প্লে খুব ভালো কাজে লাগাতে পারেন।
তার ব্যাটিংয়ে ফাঁক-ফোকড় আছে অনেক। খু্ আঁটসাঁট নন, ফিটনেস ভালো করা জরুরি, ইনিংস বড় করতে শিখতে হবে। তবে শীর্ষ পর্যায়ের ট্রেনিং কখনও পাননি, খুব বেশি আশা করাও কঠিন। তার বড় শট খেলার অনায়াস ক্ষমতা, ছক্কা মারার প্রবণতা নজর কেড়েছে।
- তানভির ইসলাম
প্রথম পর্ব শেষে লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এই বাঁহাতি স্পিনার, ১১ ম্যাচে ২০টি (যৌথভাবে কামরুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে)। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৪.৭৯। যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছে, রান তোলাই কঠিন। তার পরও ওভারপ্রতি পাঁচের কম রান দেওয়া, যে কোনো বাবস্তবতায় অসাধারণ ব্যাপার।
তানভির ঘরোয়া ক্রিকেটে মোটামুটি পরিচিত নাম। এর মধ্যে বাংলাদেশ ‘এ’ দল, ইমার্জিং দলে খেলে ফেলেছেন। তাকে আমার আগে কখনোই বিশেষ কিছু মনে হয়নি। তবে এবারের লিগে দেখে মনে হলো, বেশ উন্নতি করেছেন। ভালো জায়গায় টানা বল রাখছেন, গতি বৈচিত্র বেড়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, বেশ কয়েকটি ম্যাচেই শার্প টার্ন পেতে দেখা গেছে। উইকেটের সহায়তা তো ছিলই, এমনিতেও টার্ন করানোর সামর্থ্য বেড়েছে বলে মনে হল।
তানভির এমনিতে প্রসেসেই আছেন। এইচপিতে নিয়মিতই থাকেন। আশা করি উন্নতির এই ধারা ধরে রাখবেন।
- অনারেবল মেনশনস: আনিসুল ইসলাম ইমন ও সাব্বির হোসেন
আগেও দুজনের কথা টুকটাক লিখেছি। দুজনই টপ অর্ডার, সঙ্গে স্লো মিডিয়াম পেস করেন। শট খেলতে ভালোবাসেন। সাব্বির তো বেশ নান্দনিক ব্যাট করেন। বিশেষ করে তার অফ সাইডে ড্রাইভগুলো চোখে লেগে থাকে।
- নাহিদুল ইসলাম
অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার, ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার। ১১ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছেন, ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৯৩ রান দিয়ে। তার এই পারফরম্যান্স স্পেশাল, কারণ বেশির ভাগ সময়ই নতুন বলে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করেছেন। তাকে আমার বিগ হার্টেড ক্রিকেটার মনে হয়। কঠিন সময়ে বল করেন, বিপর্যয়ের মধ্যে ব্যাটিংয়ে হাল ধরেন।
এই ক্রিকেটারদের প্রসেসের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। এইচপি হোক, কোনো ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম হোক বা অন্য কোনোভাবে, উপযুক্ত ও নিবিড় ট্রেনিংয়ে এনে ঘষেমেজে তৈরি করা উচিত।
– ফেসবুক থেকে