টানা পাঁচের বিশ্বসেরা শিকারী

বোলারদের জন্য ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়াটা সেঞ্চুরির চেয়েও যেন বড় একটা অর্জন। সেটা টানা কয়েক ম্যাচে হলে তো কথাই নেই। কিন্তু সেটা হয়তো সব ম্যাচে সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু বোলাররা সবসময়ই পাঁচ উইকেট নেয়ার জন্য আগ্রহী থাকে। কারণ, মাইলফলক কে না চায়!

লাল বলের ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট নেয়াটা একটু বেশ সহজ কিন্তু সাদা বলের ক্ষেত্রে সেটা বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। সাদা বলের ক্ষেত্রে প্রথম পাওয়ার প্লে থাকে সম্পূর্ণ ব্যাটসম্যানদের জন্য অনুকূল। এছাড়াও সাদা বল ব্যাটসম্যানদেরকে একটু বেশি সুবিধা দেয়। কারণ সাদা বল বেশ দ্রুতই পুরাতন হয়ে যায়। বল পুরোনো হলে বোলারদের জন্য কোনো ধরনের সুবিধা থাকে না।

সেই অবস্থায় যে কোনো বোলারের জন্য ওয়ানডে ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট নেয়াটা একটু কষ্টকর। তারপরও মাঝে মাঝেই দেখা যায় ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন কোনো বোলার। বিশ্বে এমন কিছু বোলার আছে যারা টানা কয়েক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।

  • ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান)

ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ টানা তিন বার পাঁচ উইকেট শিকার করার অভিজ্ঞতা আছে ওয়াকার ইউনুসের। ওয়াকার ইউনুসকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। পাকিস্তানের অন্যতম সেরা পেসার হলেন ওয়াকার ইউনুস। তাঁর দূর্দান্ত রিভার্স সুইং এবং ইয়র্কার ছিলো যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই ভয়ংকর।

টানা তিনবার পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১১ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন। এর পরের ম্যাচে আবারো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আলোচনায় আসেন ওয়াকার ইউনুস। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর পাকিস্তান সিরিজে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে আবারো পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন ওয়াকার ইউনুস। এই ম্যাচে ৫২ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ওয়াকার ইউনুসের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। এরপর আর কখনো কোনো বোলার টানা তিন বার পাঁচ উইকেট নিতে পারেননি।

  • গ্যারি গিলমোর (অস্ট্রেলিয়া)

গ্যারি গিলমার বাঁ-হাতি অস্ট্রেলিয়ান পেসার। তিনি টানা দুইবার পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হিয়েছিলো ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে পাঁচ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের ব্যাটিং লাইন আপ একাই ধসিয়ে দেন গ্যারি গিলমার। মাত্র ৯৩ রান অল আউট হয় ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে ১৪ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। এছাড়াও এই ম্যাচে ২৮ বলে ২৮ রান করে সবার নজর কাড়েন তিনি।

একই বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালেও নিজের দূর্দান্ত পারফর্মেন্স ধরে রাখেন গ্যারি গিলমার। এই ম্যাচে আবারো পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। ক্লাইভ লয়েড ছাড়া অন্য কোনো ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেনি। তারপরও ফাইনালে ২৯১ রানের বিশাল সংগ্রহ দাড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটিং করতে নেমে এই রান আর টপকাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। আর তাতেই প্রথমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

  • আশান্থা ডি মেল (শ্রীলঙ্কা)

আশান্থা ডি মেল শ্রীলঙ্কান পেসার। তিনি টানা দুই বার পাঁচ উইকেট নেবার কৃতিত্ব অর্জন করেন ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে। এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের টানা দুই ম্যাচে এই কীর্তি করেন। পাকিস্তানেরর বিপক্ষে বিশ্বকাপের ১৫ তম ম্যাচে তিনি প্রথম পাঁচ উইকেট নেন। এই ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ডি মেলের দূর্দান্ত বোলিংয়ের পরও ১১ রানে ম্যাচ হারে শ্রীলঙ্কা

এর পরের ম্যাচে আবারো পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন তিনি। এবার এই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিলো নিউজিল্যান্ড। এই ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগার ছিলো ৩২ রানে ৫ উইকেট। ডি মেলের বোলিং এর কল্যাণে নিউজিল্যান্ড করে ১৮১ রান। শ্রীলংকা ৩ উইকেট হাতে রেখেই জিতে যায় এই ম্যাচ।

  • ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান)

ওয়াকার ইউনুস ১৯৯০ সালে এবার টানা দুই বার পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন। অস্ট্রাল-এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুইবার পাঁচ উইকেট নেবার কীর্তি গড়েন তিনি।

শারজাহতে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩১২ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং অর্ডার একাই ধসিয়ে দেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি।

এর পরের ম্যাচে একই ভেন্যুতে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড। এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারো পাঁচ উইকেট নেন ওয়াকার ইউনুস। তাঁর বোলিং তোপে মাত্র ৭৪ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। এই ম্যাচে ২০ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন ওয়াকার ইউনুস।

এখানেই শেষ নয়। ২০০১ সালে আবারো একই কীর্তি গড়েন ওয়াকার। এবার ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে টানা দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দু’বার পাঁচটি করে উইকেট নেন তিনি।

  • আকিব জাভেদ (পাকিস্তান)

আকিব জাভেদ পাকিস্তানের ডানহাতি পেসার। তিনি ১৯৯৭ সালে ইন্ডিপেন্ডন্স কাপে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করেন। এই দুই ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিলো শ্রীলঙ্কা এবং ভারত।

গোয়ালিওরে ইন্ডিপেন্ডস কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম পাঁচ উইকেট নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি।

একই টুর্নামেন্টের ছয় নম্বর ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেন আকিব জাভেদ। এই ম্যাচে ভারতকে হারায় পাকিস্তান। এই ম্যাচে ৬১ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি।

  • মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের ক্রিকেটের পেস বোলিং সেন সেশন হলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি পেসার। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেন তিনি।

২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। অভিষেক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেন। প্রথম ম্যাচে বোলিং ফিগার ছিলো ৫০ রানে ৫ উইকেট। এর পরের ম্যাচেও পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। এই ম্যাচেও ছিলো ভারতের বিপক্ষে। এই ম্যাচে তিনি ৪৩ রানে ৬ উইকেট নেন।

একবার নয়, মুস্তাফিজ দু’বার এই কীর্তি গড়েছেন। পরের নজীরটা বিশ্বকাপের মঞ্চে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে পাঁচটি করে উইকেট নেন। ‍মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচ দু’টি হয় যথাক্রমে বার্মিংহ্যাম ও লর্ডসে।

  • রায়ান ভেট্টোরি (জিম্বাবুয়ে)

তালিকায় জিম্বাবুয়ে থেকে আছেন একজন। তিনি হলেন রায়ান ভেট্টোরি। বাঁ-হাতি এই পেসার কীর্তি গড়েন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুয়ে সফরে যায় বাংলাদেশ দল। রায়ান ভেট্টোরি পরপর দুই ম্যাচে পাঁচটি করে উইকেট নেন। 

সেটা ছিল ভেট্টোরির অভিষেক সিরিজ। তিন ম্যাচেই ১১ উইকেট নেন ভেট্টোরি। অথচ, তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয় ২৪ ওয়ানডেতে মাত্র ৩২ টি উইকেট নিয়ে।

এই তালিকায় পাকিস্তান থেকে আছেন আরো তিনজন। তারা হলেন সাকলাইন মুশতাক, আজহার মেহমুদ ও শাহীন শাহ আফ্রিদি। টানা দু’বার করে ওয়ানডে ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট করে নিয়েছেন তাঁরা।

অস্ট্রেলিয়া থেকে টানা দু’বার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে – এমন ক্রিকেটার আছেন দু’জন। তাঁরা হলেন – রায়ান হ্যারিস ও মিশেল স্টার্ক। তালিকায় নেই কোনো ভারতীয় বোলার।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link