দু’টি অর্থহীন বিভ্রান্তি ও একটি ফেক ফিল্ডিং

ঘটনার সূত্রপাতটা সেই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ম্যাচে। কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে ভারতের মুখোমুখি হয় মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ দল। আর সে ম্যাচেই রোহিত শর্মাকে করা বিতর্কিত একটি ‘নো বল’-কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-ভারত মহারণ নতুন একটা মাত্রা পেয়েছিল।

সেই থেকেই বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা ঢুকে যায় যে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ এলেই ভারতকে আইসিসি আলাদা সুবিধা পাইয়ে দেয়। আইসিসিতে এমনিতেও আগে থেকেই বেশ ক্ষমতাধর ভারত। তার উপর বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়া সে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে সন্দেহের অবকাশকে ঘণীভূত করেছিল।

তিন বছর বাদে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে আবারও মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত। অ্যাডিলেডে হওয়া এ ম্যাচের সুতোর টান কোনো সময় ভারতের দিকে গিয়েছে আবার কোনো সময় বাংলাদেশের দিকে এসেছে। তবে দিনশেষে সেই সুতো ছিড়ে গিয়েছে বাংলাদেশের। প্রায় জিততে যাওয়া ম্যাচটা তারা হেরে গিয়েছে ৫ রানে। তবে এ ম্যাচের পরেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

মূলত বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের মধ্যে বাগড়া বাঁধিয়েছিল বৃষ্টি। বৃষ্টি অবিরত ধারায় চলতে থাকলে কপালটা পুড়তো ভারতেরই। তবে বৃষ্টি থামার পরপরই ম্যাচ শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশের একাংশ দর্শকের এখানেই অভিযোগ। দাবিটা হল, বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা ছিল। আউটফিল্ডও স্লো ছিল।

আইসিসি’র এমন অবস্থায় ম্যাচ শুরু করাটা ঠিক হয়নি। তবে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব সুর তুললেও বিশেষ একটা লাভ নেই। কারণ সাকিব কিংবা রোহিত – দুই অধিনায়ক সম্মত হয়েই মাঠে নেমেছিলেন। আর বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব নিজেও এটি খোলাসা করেছেন।

ম্যাচ শেষের পর তিনি বলেছেন, ‘মাঠ কিছুটা পিচ্ছিল ছিল। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, মাঠ কিছুটা পিচ্ছিল ছিল। এমন হলে সাধারণত ব্যাটিং সাইড সুবিধা পায়, বোলিং সাইডের চেয়ে। আমাদের এটাতে অজুহাত দেওয়া ঠিক হবে না।’

সাকিবের কথাতেই স্পষ্ট, এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে অহেতুক বিতর্ক উস্কে দেওয়া। তবে এটি ছাড়াও আরেকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে বেশ। ফেসবুক পাড়ায় ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির একটি চার্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ১৬ ওভারে বাংলাদেশের জন্য টার্গেট হতে পারত ১৩৩। ডাকওয়ার্থ লুইস মেথড এমনিতেই বিভ্রান্তিকর।

ডিএল মেথড মূলত ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়।  ভারত যেখানে নিজেরাই ৯ এর উপরে রান রেটে ১৮৪ রান তুলেছে সেখানে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য ৪ ওভার কমানোর পরেও রিকোয়ার্ড রেট ৯ এর নিচে হবে না। তাছাড়া নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে আইসিসির ভুল হলেও টিম অ্যানালিস্টের সেটি ধরে ফেলারই কথা। আর এত বড় ভুল এত বড় একটা আসরে সবার নজর এড়িয়ে যাবে- সেটা ভাবাও বোকামি।

মোদ্দাকথা, ম্যাচটা জিতেছে ভারতই। এখানে কোনও বিতর্ক নেই, ছল চাতুরির কোনও আশ্রয়ও নেই। মূলত বাংলাদেশি কিছু সমর্থকদের নিছক আবেগে ভেসে যাওয়ার কারণেই নতুন করে এমন বিতর্ক উঠে আসছে। যেটার কোনো ভিত্তি নেই। এটা শুধুই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে আরকি। যা দিনশেষে মূল্যহীন, গুরুত্বহীন।

তবে, ভারতীয় দলের বিপক্ষে ফেক ফিল্ডিংয়ের যে অভিযোগ উঠেছে সেটাকে ভিত্তিহীন বলার কোনো উপায় নেই। নাজমুল হাসান শান্তর আবেদনে আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউন ও ম্যারিয়াস ইরাসমাস সায় না দিলেও, টেলিভিশন রিপ্লেতে ঘটনাটা ধরা পরে, যার নেপথ্যে ছিলেন বিরাট কোহলি।

সেখানে অবশ্য ভারতীয় দলকে কাঠগড়ায় না তুলে বরং দুই আম্পায়ারকেই দায় দেওয়া উচিৎ। যদিও, এই বিষয়টা এখন স্রেফ আফসোসই বাড়াবে, কিছু অর্থহীন রেষারেষি হবে – মাঠের লড়াইয়ের সাথে যার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link