১৯৯৬ সালের ইংল্যান্ড দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। হ্যান্সি ক্রনিয়ে তখন অধিনায়ক প্রোটিয়াদের। তাঁর অধিনায়কত্বে প্রথম ম্যাচে একসাথে অভিষেক হল চার জন প্রোটিয়া যোদ্ধার। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো ধুঁকছে তখন আফ্রিকানরা। স্কোরকার্ড ১০৭ রানে ৬ উইকেট। কি ভয়ংকর বিভীষিকাময় একটা অবস্থা!
৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন তিনি। উইকেটের অপর প্রান্তে তখন আরেক অভিষিক্ত ক্রিকেটার ও আগামী দিনের তারকা জ্যাক ক্যালিস। একেবারে খাঁদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুললেন। পৌঁছে দিলেন সম্মানজনক ২১১ স্কোরে। অপরাজিত থাকলেন ৬৬ রানে।
সেদিন শুধু ব্যাট নয়, বল হাতেও চার-চারটি উইকেট পকেটস্থ করেছিলেন। নির্বাচিত হয়েছিলেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। সত্যি অভিষেক ম্যাচেই এই রকম সৌভাগ্য কত জনের হয়? যদি না তার নাম হয় শন পোলক। সেই থেকে শুরু।
ফাস্ট বোলিংয়ে সেরকম গতি ছিল না, কিংবা ছিল না ভয় ধরানো বাউন্সার। কিন্তু ছিল অসম্ভব ভালো লাইন এবং লেন্থ। একই লাইন এবং লেন্থ রেখে একটানা বোলিং করার ক্ষমতা ছিল তার। তিনি গ্রায়েম পোলকের ভাতিজা, পিটার পোলকের ছেলে। তাঁর দাদা অ্যান্ড্রু পোলকও ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার। ক্রিকেটটা তাঁর রক্তের সাথেই মিশে আছে।
বল হাতে ব্যাটসম্যানদের রিডিং করার ক্ষমতা যে কতিপয় বোলাররা করতে পারতেন, শন তাদের মধ্যে অন্যতম। নিজের সীমিত ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানদের থেকে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা তাঁর বর্ণাঢ্য। ৮১৪ উইকেট, সাথে ৭৩০০ রান। ওয়ানডে বোলিং ইকোনোমি ৩.৬৭, যা ৩০০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রথাগত অলরাউন্ডার তিনি নন, তারপরও তাঁর রেকর্ড অলরাউন্ডারদের জন্য ঈর্ষণীয়।
তবুও কোনো দিন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পোস্টার বয় হয়ে উঠতে পারেন নি। কিংবা হতে পারেন নি বোলিং লাইন আপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সব লাইম লাইট শুষে নিয়ে গেছেন কখনো বা ‘সাদা বিদ্যুৎ’ ডোনাল্ড, কখনো বা মাখায়া এনটিনি কিংবা ডেল স্টেইন। আর অলরাউন্ডার হিসেবে জ্যাক ক্যালিস তো বট গাছ হয়ে রয়েই ছিলেন। তাই, শন পোলক রয়ে গিয়েছেন আড়ালেই। নি:শব্দে নিজের কাজটুকু করে গিয়েছেন।
নাম নয়, বরং নাম না জানা আপন ভোলা পথিকের মতো শন পোক হেঁটে গিয়েছেন মাইলের পর মাইল। শুধু নিজের ছাপ টুকু রেখে গিয়েছেন তার যাত্রাপথে। যা মাইলফলক হিসেবে পরিচয় পেয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে। শন পোলকের কীর্তি তাই অমর হয়ে টিকে গেছে।