পুুজারা কিন্তু খেলছেন!

সবাইকে ঠিক এক পাল্লায় মাপা যায় না। সবাই স্রোতে গা ভাসিয়েও দেননা। কারও কারও লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন। কেউ থেকে যেতে চান অতি সাধারণভাবেই। আলোর ঝলকানি, অদ্ভুত এক গতি সবাইকে টানে না। সবাই সে গতির সাথে তাল মেলাতে পারে না কিংবা চায় না। তেমনই একজন চেতেশ্বর পুজারা।

বছর কয়েক আগেও ভারতের টেস্ট দলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তিনি কি আদৌ ভারতের মত একটি দলের টেস্ট দলের মিডল অর্ডারের কাণ্ডারি হওয়ার সে সামর্থ্য এখনও রাখেন? প্রশ্নের কারণ তাঁর অফফর্ম। ফর্মহীনতার কাল এক চাদরে এসে জড়িয়ে ধরেছিল চেতেশ্বর পুজারাকে। তিনি যেন সে চাদর সরিয়ে দিনের উজ্জ্বল সূর্যের দেখাই পাচ্ছিলেন না।

টেস্টের প্রথম সকালের সূর্যটাই তো দিনের বার্তা দেয়। সে সূর্যটাই আর দেখা হচ্ছিল না পুজারার। তিনি নিজেও বোধহয় সে নিয়ে ছিলেন সংশয়ে। তিনি হয়ত নিজেকে ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাটা করে যাচ্ছিলেন। এই বনেদি ফরম্যাটটা তো তাঁর ভীষণ প্রিয়। লাল বলের ক্রিকেটকে তাঁর বড্ড বেশি আপন মনে হয়।

তিনি নিজেকে সেভাবেই হয়ত গড়ে তুলেছিলেন ছোট্ট বেলা থেকেই। তাইতো তাঁর নামের পাশে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমাটা জুড়ে তাঁকে দূরে রাখা যায় সাদা বলের ক্রিকেট থেকে। তাতে বোধকরি তাঁর বিশেষ কোন আক্ষেপ নেই। তিনি সাদা পোশাকেই খুশি, তিনি সাদা পোশাকেই নিজের আনন্দ খুঁজে পান।

একদিকে যখন ভারতের অধিকাংশ খেলোয়াড় ব্যস্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মত জাকজমকপূর্ণ একটা ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে। অন্যদিকে পুজারা চলে গেছেন ইংল্যান্ডে। খেলছেন কাউন্টি ক্রিকেট। শুধু খেলছেন বললেও ভুল বলা হয়। তিনি রীতিমত নিয়ম করে পারফরম করছেন। লাল বলের ক্রিকেটটা ঠিক কতটা যে তাঁর প্রিয় সে প্রমাণটাই রাখছেন তিনি।

কাউন্টি ক্রিকেটের মত একটা মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চে তিনি রীতিমত আলো ছড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যেই দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি ও এক জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছেন তিনি। কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে গিয়েই এমন পারফরমেন্স মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ইংল্যান্ডের দর্শকদের মাঝে। স্বাভাবিকভাবেই একটু বৈরি পরিবেশ ইংল্যান্ড। উপমহাদেশ থেকে ভিন্ন কন্ডিশন, বাইশ গজটা ভিন্নভাবে আচরণ করে। সে সাথে পেস বান্ধব উইকেটে পেসারদের সামলানো চাট্টিখানি কথা নয়।

তবে সকল বৈরীতার জবাব পুজারা দিচ্ছেন তাঁর ব্যাট হাতে। তিনি আপন ছন্দে রান তোলায় মত্ত। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে এখন সর্বোচ্চ সংখ্যক ডাবল সেঞ্চুরির মালিক তিনি। তাঁর পরেই অবস্থান বিরাট কোহলির। তবে ব্যবধানে তীব্রতা রয়েছে। ফর্মে যে তিনি ফিরেছেন তাঁর প্রমাণই রাখছেন তিনি। প্রায় ১৩৪ এর আশেপাশের গড় নিয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কাউন্টি দ্বিতীয় ডিভিশনের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

সাসেক্সের হয়ে তৃতীয় ম্যাচে তিনি করেন ২০৩ রান। সেটাই এখন পর্যন্ত তাঁর সর্বোচ্চ রান। তাছাড়া চতুর্থ ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি এখন অবধি অপরাজিত আছেন ১২৫ রানে। আরও দিন দুয়েক বাকি রয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই তাঁর এই ইনিংসটিকে আরও লম্বা করতে চাইবেন। তবে এখন তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকদের দিকে।

তাঁর এমন সব পারফরমেন্স কি নির্বাচকদের আরও একবার তাঁকে সুযোগ দিতে প্রভাবিত করবে না। নিশ্চয়ই করবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ভাল একটা স্থানে রয়েছে  ভারত। এখান থেকে পা হড়কে পড়ে যেতে নিশ্চয়ই চাইবে না ভারত জাতীয় দল। আর চেতেশ্বর পুজারা একজন পরীক্ষিত ব্যাটার। তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ভারতের হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে দলের পক্ষে ফলাফল নিয়ে এসেছেন বহুবার।

যেহেতু পুজারা আবার নিয়ম করে রান করছেন সেহেতু আরও একবার তাঁকে সুযোগ দিয়ে দেখা যেতেই পারে। তিনি হয়ত আবার নিয়মিত হতে পারবেন জাতীয় দলের টেস্ট দলে। হয়ত শেষ বারের মত। তবুও এমন দূর্দান্ত সময়ের পুরষ্কার তো তিনি প্রাপ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link