সাত বছর পর এইবারের আইপিএলের নিলামে দল পেয়েছেন চেতেশ্বর পূজারা। চেন্নাই সুপার কিংস তাকে দলে ভিড়িয়েছে ভিত্তিমূল্য ৫০ লাখ রুপিতে।
এমন না যে, পুজারাকে কেউ কিনতেই চায় না। তিনি নিজেই প্রায় মৌসুমে আইপিএল খেলতে চান না। এই যেমন গত মৌসুমে নিলামের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কাউন্টি খেলতে যাবেন। এবার আইপিএল খেলতে রাজী হয়েছেন। তাই বলে কাউন্টিকে ‘না’ বলছেন। আইপিএল শেষ করে অল্প সময়ের জন্য হলেও কাউন্টিতে যেতে চান পুজারা।
শনিবার আহমেদাবাদে ভারতীয় দলে অনুশীলন শেষে পূজারা বলছিলেন, ‘প্রথমত আমি আইপিএলের অংশ হতে পেরে গর্বিত। আবারো আইপিএলে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। আমাকে দলে নেয়ার জন্য চেন্নাইকে ধন্যবাদ।’
তবে আইপিএলে দল পাওয়ার পরও কাউন্টিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রেখে দেওয়ার কারণ হিসেবে এই টেস্ট ব্যাটসম্যান বলছিলেন, ‘আইপিএলের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ আছে। সেই সিরিজের আগে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে। একই সময়ে আইপিএল এবং কাউন্টি ক্রিকেট চলবে। ফলে আইপিএলের শেষ দিকে আমি গুটিকয়েক কাউন্টি ম্যাচ খেলতে পারবো।’
পূজারা বলছিলেন, নিজের ও দলের স্বার্থে তার কাউন্টি খেলা দরকার, ‘কিছু কাউন্টি ম্যাচ খেলার জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে। এছাড়াও সিরিজের আগে আমাদের দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচও আছে। কিন্তু সত্যি আইপিএলে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। যদি আমি এখনো চেন্নাইয়ের ফ্রাঞ্চাইজির সাথে কোনো কথা বলি নাই। আমি সবসময়ই ক্রিকেটের ছোটো ফরম্যাটেও খেলতে চাই। কিন্তু এই সময়ের জন্য আমার লক্ষ্য বর্তমান সিরিজে। সিরিজ শেষ হবার পর আইপিএলে নজর দিবো। আইপিএলের পর কাউন্টি ক্রিকেট এবং আগস্টে ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে চিন্তা করবো। আশা করি আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবো। এখন আপাতত এই সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে নজর দিচ্ছি,কারণ এই দুই ম্যাচও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
আহমেদাবাদে টেস্টে খেলতে এসে পূজারা তার ক্যারিয়ারের একটা চক্র পূর্ণ করলেন। এর আগে তিনি আহমেদাবাদে খেলতে এসেছিলেন ২০১২ সালে। তখন পূজারা কেবল মাত্র নিজেকে ভারতীয় দলে দ্রাবিড়ের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে ৩ নম্বর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আহমেদাবাদে শেষবারের ম্যাচটি ছিলো স্পিনিং উইকেটে। টসে জিতে উইকেটের পূর্ণ সুবিধা নেয় ভারত।
পূজারা ২০২ রানের একটি ইনিংস খেলেন। তখন ইংল্যান্ডের বোলিং লাইন আপে ছিলেন জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, গ্রায়েম সোয়ান এবং সামিত প্যাটেল।
ঐ সময়ের থেকে এখনকার সময়ে অনেক পার্থক্য হয়েছে। আহমেদাবাদের স্টেডিয়াম নতুন করে নির্মান করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার। তৃতীয় টেস্টে প্রায় ৫৫ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবে। এছাড়াও ২০১২ সালের থেকে পিচেও কিছুটা পরিবর্তন থাকবে। কারণ এবার এখানে গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
করোনা মহামারীর মধ্যে এখানে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এটি ছিলো সৈয়দ মোস্তাক আলি ট্রফির নক আউট পর্বের ম্যাচ। এই ম্যাচের আগে পূজারা এই রকম অপরীক্ষিত পিচ নিয়ে একটু সংশয়ে ছিলেন, ‘আমাদের হাতে তিন-চার দিন সময় আছে। এই সময়ে পিচ বেশ পরিবর্তন হতে পারে। পিচ দেখে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। কিন্তু আগে থেকেই কিছু বলা যাবে না। কারণ এটা গোলাপি বলের টেস্ট। লাল বলের খেলা হলে ভিন্ন কিছু হতে পারতো। যেহেতু গোলাপি বলের টেস্ট তাই আন্দাজে কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনি যেকোনো কিছু আশা করতে পারেন,কিন্তু অন্য যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। আমি শুধু চেষ্টা করতে পারি আর নিজের কাজ করতে পারি। পিচ নিয়ে বেশি চিন্তিত হবার কিছু নেই।’
ভারত দল শুধু শিশিরের আশা করতে পারে। শিশির থাকলে ভারতীয় দল তিনজন পেসারকে খেলাতে পারে। দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে পূজারা বলেন, ‘হ্যাঁ। এখানে শিশির থাকতে পারে। আবহাওয়ার দিকে দেখতে পারেন। শেষ সেশনে শিশির পড়ার সম্ভাবনা আছে। সাদা বল দিয়ে যারা প্রচুর ক্রিকেট খেলছে সেসব বোলার অভ্যস্থ হয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু আমরা গোলাপি বলে খেলবো। তৃতীয় সেশনে শিশির বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু কতটুকু আক্রান্ত হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আমাদের ভালো ধারণা আছে। কিন্তু আমরা শিশিরের আশা করছি।’
পুজারা এর সাথে অ্যাডিলেডের সর্বশেষ গোলাপী বলের টেস্টে নিয়ে আলোচনা করেন। যেখানে ভারতীয় দল লজ্জাজনকভাবে ৩৬ রানে অল আউট হয়।
পূজারা বলেন, ‘আমি অনেকগুলো টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু গোলাপী বলের টেস্টে আমার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই। আমার মনে হয় না যখন একটি মাত্র টেস্ট খেলা হয় তখন খুব বেশি সমস্যা হয়। গোলাপী বলের সাথে খাপ খাওয়াতে অনেক গুলো ম্যাচ খেলতে হবে। আমার আমাদের স্বাভাবিক ক্রিকেট টাই খেলবো। আগের টেস্টের মত আমাদের গেম প্ল্যান থাকবে। অ্যাডিলেডে আমরা একটা সেশনে খারাপ খেলেছিলাম। আর তার কারণেই আমরা ব্যাটিং এ খারাপ করেছি। এছাড়া সর্বসাকুল্যে আমরা বেশ ভালোই খেলেছি।’
পুজারাকে চেন্নাইয়ের দ্বিতীয় টেস্টে উইকেটে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। এছাড়া ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টে খুব কম রানে সব উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলো। ইংলিশদের ২০ উইকেটের মধ্যে ১৭ টি উইকেট তুলে নিয়েছিলো স্পিনাররা। দ্বিতীয় টেস্টে সফরকারী দলের মঈন আলীর ৪৩ রান ছাড়া বলার মত রান কেউ করতে পারেনি। আর ভারত চতুর্থ দিনে ৩১৭ রানে ম্যাচ জিতে নেয়।
চেন্নাইয়ের উইকেট নিয়ে চেতেশ্বর পূজারা বলেন, ‘মাঝে মাঝে যদি টার্নার পিচে খেলেন তাহলে উইকেট একটু কঠিন মনে হবে। কিন্তু এই উইকেট এতো মারাত্মক ছিলো না। যখন বল স্পিন করে তখন রান করতে কষ্ট হয়। আমরা যখন দেশের বাইরে খেলতে যাই,সেখানে পেসিং উইকেটে খেলি। সেখানেও ৩-৪ দিনে টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়। আমাদেরকে এখনো গতি এবং ঘাসের উইকেটে খেলতে হয়। যখন টার্নিং উইকেটে খেলতে আসবেন,তখন বলতে পারবেন না ঠিক কতটুকু টার্ন করা উচিত। এখানে টার্ন ছিলো, এর জন্য আমি বলবো উইকেট খারাপ ছিলো। হ্যাঁ, দ্বিতীয় ইনিংসে রান করা কঠিন ছিলো। আমরা যখন অস্ট্রেলিয়াতে চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনের উইকেটে খেলছিলাম বল উইকেটের ফাটাতে পড়ছিলো এবং বল উপরে উঠছিলো। দল হিসেবে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। আমি নিশ্চিত ইংল্যান্ড দল যখন এই উইকেটের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য হবে তখন তারাও রান করতে পারবে।’