বেশ দু:খজনক ব্যাপার হলেও, এটা এখন ক্রিকেটের বাস্তবতা। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে ক্রিকেটারদেরকে যেকোনো জায়গায় খেলতে গিয়ে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এর ফলে মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ক্রিকেটার। আর এই ফলেই জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর মত ফ্রাঞ্চাইজি লিগ গুলো খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
আইপিএলের নিলামের সময় প্রায় সব ক্রিকেটারই আইপিএলের খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে আইপিএলের বিরাট মঞ্চ একটা ব্যাপার, আর্থিক দিকটাও বড় একটা ভূমিকা রাখে। কিন্তু আইপিএলের শুরুর আগ মুহূর্তে অনেক ক্রিকেটার জৈব সুরক্ষা বলয়ের কারণে আইপিএল খেলবেন না বলে জানান।
অনেক ক্রিকেটার এর বিরুদ্ধেও মত দিয়েছেন। জৈব সুরক্ষা বলয়ে অনীহার কারণে যারা আসেননি আইপিএলে – তাদের নিয়েই এবারের আয়োজন।
- জশ হ্যাজলেউড (অস্ট্রেলিয়া)
এই অস্ট্রেলিয়ান গতি তারকার এই বারের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলার কথা ছিলো। কিন্তু বায়ো বাবলে থাকার প্রয়োজন হবে বলে আইপিএলে খেলতে আসেননি তিনি। এইবারের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের বেশিরভাগ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুম্বাইয়ে। এইখানে জশ হ্যাজলেউডের বোলিং বেশ কার্যকর হত।
আইপিএলে খুব বেশি ম্যাচ খেলননি হ্যাজলেউড। তিনি আইপিএলে তিন ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন এক উইকেট। আর বোলিং করেছেন ৬.৪ ইকোনমি রেটে। আইপিএলের দল চেন্নাই তাঁর বদলি হিসেবে দলে ভিড়িয়েছে তারই স্বদেশি ক্রিকেটার জেসন বেহেরেনডফকে।
- মিশেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)
মিচলে মার্শ আইপিএল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া আরেকজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। এইবারের আইপিএলের সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলার কথা ছিলো তাঁর। এছাড়াও ধারণা করা হয়েছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
কিন্তু তিনি আইপিএল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং এখন পর্যন্ত তাঁর সঠিক বদলি কাউকে খুঁজে পায়নি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। তাই দলে ভেড়ানো হয়েছে ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে।
মিচেল মার্শ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছিলেন। আইপিএল ক্যারিয়ারে ২১ ম্যাচ খেলে ২২৫ রান এবং ২০ উইকেট শিকার করেছিলেন। আইপিএলের সর্বশেষ মৌসুমেও সানরাইজার্স দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়ে পুরো মৌসুমের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। এটাও মিশেল মার্শের জন্য একটি ভীতিকর বিষয়।
- জশ ফিলিপ (অস্ট্রেলিয়া)
সর্বশেষ আইপিএলের বেশ ভালো পারফর্ম করে সবার নজর কেড়েছিলেন জশ ফিলিপে। এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান, এইবারের আইপিএল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিগ ব্যাশেও বেশ ভালো পারফর্ম করেছিলেন তিনি। তাই ধারণা করা হয়েছিলো এবারের আইপিএলেও তাঁর দুর্দান্ত পারফর্ম দেখা যাবে তাঁর।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত আইপিএল শুরু আগ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি এবং তাঁর পরিবর্তে দলে ভেড়ানো হয় নিউজিল্যান্ডের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেনকে। জশ ফিলিপে আইপিএল ক্যারিয়ারের ৫ ম্যাচে ৭৮ রান করেছিলেন। নিজেকে প্রত্যাহার করে না নিলে হয়তো বেশ ভালো দাম পেতেন তিনি।
- মার্ক উড (ইংল্যান্ড)
এই ইংলিশ পেসার ভারতের বিপক্ষে সিরিজে রঙিন পোশাকে বেশ দূর্দান্ত পারফর্ম করেন। তিনি আইপিএলের নিলামের আগ মুহূর্তে নিলাম থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন নিজেকে। ধারণা করা হয়েছিলো সাম্প্রতিক সময়ে দূর্দান্ত পারফর্মেন্স করার জন্য এই বারের আইপিএল নিলামে বেশ ভালো দাম পেতে পারতেন তিনি।
মার্ক উড আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক বেশি সময় ব্যয় করার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারছিলেন না। তাই তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মার্ক উড আগে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলেছেন। কিন্তু খুব বেশি সফল ছিলেন না। মার্ক উডের দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে পরবর্তী আইপিএলের নিলামে তাঁর উপর আবারো চোখ রাখতেই হবে।
- লিয়াম লিভিংস্টোন (ইংল্যান্ড)
বায়ো বাবল সমস্যা কারণে আইপিএলে না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া সর্বশেষ ক্রিকেটার হলেন লিয়াম লিভিংস্টোন। আইপিএলের এই বারের আসরে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলা কথা ছিলো। কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য প্রথম তিন ম্যাচে দলের বাইরে ছিলেন তিনি। আশা করা হয়েছিলো চতুর্থ ম্যাচ থেকে নিয়মিত একাদশে থাকবেন তিনি।
কিন্তু হঠাৎই জৈব সুরক্ষা বলয় জনিত অনীহার কারণে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এছাড়াও রাজস্থানের জন্য বড় সমস্যার বিষয় হলো ইতিমধ্যে বেন স্টোকস ইনজুরিজনিত সমস্যার কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন। এখন একজন বিকল্প ক্রিকেটার খুঁজছে রাজস্থান। যিনি কিনা বোলিং করতে পারেন এবং সাথে তাঁর দূর্দান্ত স্ট্রাইক রেট দিয়ে ব্যাটিং লাইন আপের যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং করতে পারে।