কার্বন মুক্ত বিশ্বকাপ: কী ও কেন!

ক্রীড়া দুনিয়ার সবচেয়ে বড় যজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। আগের ২১ বারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর বসতে যাচ্ছে কাতারে। তবে অন্য সময়ের চেয়ে এবার কিছুটা ভিন্নভাবে আয়োজিত হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টটি।

কাতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা তাদের দেশে প্রথমবারের মত কার্বন-নিউট্রাল ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজন করবে। ফুটবল ইতিহাসে এমন পদক্ষেপের ঘটনা এবারই প্রথম। গত পাঁচ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ফিফাও আনুষ্ঠানিকভাবে একই ঘোষণা দিয়েছে।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো একটি ভিডিও প্রকাশ করে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার জন্য ‘Green Card for The planet’ বার্তা প্রদান করেন। এছাড়া পরিবেশ দূষণ রোধে সবাই উৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, আসন্ন বিশ্বকাপ পরিবেশের কোনরূপ ক্ষতি করবে না।

‘কার্বন-নিউট্রাল’ শব্দটি এমন কোনো ইভেন্ট বা প্রোগ্রামকে নির্দেশ করে যেটি কার্বন নির্গমনের সাথে পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগের ভারসাম্য বজায় রাখে। এর অর্থ হল ওই অনুষ্ঠানের ফলে বায়ুমণ্ডলে যতটা কার্বন নিঃসরিত হবে, সেই পরিমাণ কার্বন পুনরায় শোষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

সুতরাং, ২০২২ সালে একটি কার্বন-নিউট্রাল বিশ্বকাপ মানে হল কাতার বিশ্বকাপে বিভিন্ন আয়োজনের কারণে বায়ুমণ্ডলে যতটা কার্বন নি:সরণ হবে সেটি আবার বায়ুমন্ডল থেকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন আয়োজকরা। আর কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন টেকসই প্রকল্প ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে তাঁরা।

বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে আরব দেশটি। স্টেডিয়াম নির্মাণসহ খেলোয়াড়, দর্শকদের সুবিধার জন্য আরো অনেক কিছু করেছে কাতার। আর এসবের পাশাপাশি, পরিবেশ দূষনের জন্য দায়ী বর্জ্যের পরিমান হ্রাস এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে।

২০২২ বিশ্বকাপের কার্বন এর পরিমান হ্রাস করার অধিকাংশ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো যেসব স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো একে অপরের মাত্র ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। যার মানে হলো, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা,  দলগুলোকে টুর্নামেন্ট চলাকালীন বিমান কিংবা গাড়িতে অধিক সময় চলাচল করতে হবে না।

আর এমন পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি কার্বন নির্গমন প্রচুর পরিমাণে হ্রাস করবে। ভক্ত-সমর্থকদেরও খুব বেশি ভ্রমন করতে হবে না। দোহা মেট্রো এবং অন্যান্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেই তারা সহজে স্টেডিয়ামগুলোতে যেতে পারবেন সহজে।

এমনকি একটি ক্যাব নেওয়া বা ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর চেয়ে সুবিধাজনক হবে এসব পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো। আবার কাছাকাছি স্থানে স্টেডিয়ামগুলো স্থাপিত হওয়ায় দর্শকরা একই দিনে দুইটি বা তার বেশি ম্যাচ উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

এছাড়া কার্বন নির্গমন কমাতে টুর্নামেন্ট চলাকালীন গ্যাস কিংবা তেল চালিত যানবাহনের সাথে সাথে বৈদ্যুতিক বাস এবং গাড়িও থাকবে অনেক। পুরো বিশ্বকাপের এলাকা জুড়ে এসব গাড়ির চার্জিং স্টেশনও স্থাপন করা হয়েছে।
কার্বন নি:সরণ কমানোর টেকসই উদ্যোগের আরেকটি উদাহরণ হল ‘রাস আবু আউদ স্টেডিয়াম বা স্টেডিয়াম ৯৭৪’।বিশ্বকাপের পর এটি সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে দেওয়া হবে এবং বিশ্বের অন্য কোথাও অন্য কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে এই স্টেডিয়ামটি। সম্পদের অপ্রয়োজনীয় অপচয় কমাতে স্টেডিয়ামগুলোতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য অনেক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷

কাতার বিশ্বকাপকে শক্তি সরবরাহের জন্য আল খারসাতে একটি বিশাল সৌর শক্তি প্ল্যান্ট তৈরি করেছে কাতার। এটি প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। নবায়নযোগ্য উৎস থেকেই গ্যালারি এবং মাঠে থাকা বিভিন্ন ফিচারগুলোতে ব্যবহৃত শক্তির বড় একটা অংশের জোগান দেয়া হবে।

তাছাড়া পরিবেশ দূষন রোধ করা নিশ্চিত করতে কার্বন নি:সরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুরো ইভেন্টের কার্বন ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেলতে গ্রিন প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে আয়োজক দেশটি। স্টেডিয়ামের চারপাশে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগিয়েছে তারা, যাতে পুরো ভেন্যু জুড়ে সবুজ জায়গা তৈরি হয়।

যা নি:সন্দেহে পরিবেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয় কাতারে খেলা দেখতে যাওয়া সব সমর্থক, খেলোয়াড় এবং অংশগ্রহণকারী দলের অন্য সদস্যদের এই সবুজ উদ্যোগে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফিফা। স্বাভাবিকভাবেই এসব পদক্ষেপ জাতিসংঘের জলবায়ু কৌশলকে সহায়তা করবে।

বর্তমানে ক্রমাগত পৃথিবীতে বাড়ছে কার্বনের পরিমান, ফলে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। এছাড়া বরফ গলার কারনে সমুদ্রের পানির স্তর বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় কাতার এবং ফিফা’র এই যৌথ পরিকল্পনা নিশ্চিতভাবেই প্রশংসার দাবিদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link