হাঁটু গেড়ে বসবেন ‘ক্ষমাপ্রার্থী’ কক

জল অনেকদূর এগিয়েছিল। নিজের বিরুদ্ধে জনমত কিংবা বোর্ড – দুই পক্ষকেই ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন কুইন্টন ডি কক। তবে, সেই আগুনে শেষ অবধি তিনি নিজেই জল ঢেলে দিলেন। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান সমর্থক ও সতীর্থ – সবার কাছেই নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

কক এটাও জানিয়ে দিয়েছেন ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ নামের সামাজিক আন্দোলনে হাঁটু গেড়ে বসে সংহতি প্রকাশে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। ফলে, বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম কলংকিত ও বিতর্কিত অধ্যায়ের ইতি ঘটলো। ডি কক মনে করেন, তিনি সমর্থকদের কষ্ট ও রাগের কারণ হয়েছে এবং ভুলবুঝাবুঝির কারণ হয়েছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আমার সতীর্থ, দেশে থাকা সমর্থকদের কাছে আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার হাঁটু গেড়ে বসায় যদি আরেকজন শিখতে পারেন, আরেকজনের বিশ্বাস যদি পাল্টায় – তাহলে আমি খুশি মনে সেটা করতে রাজি আছি। কষ্ট, ভুল বোঝাবুঝি আর ক্ষোভের কারণ হওয়ায় আমি লজ্জিত ও দু:খিত।’

কক মনে করেন, দেশের হয়ে খেলতে পারার মর্যাদা সব কিছুর ঊর্ধ্বে, ‘আমি মনে মনে ভেবেছি, বুঝেছি নিজের পরিবার ও  দেশের হয়ে খেলার চেয়ে গৌরবময় আর কিছু হতে পারে না। আমি যাদের সাথে বড় হয়েছি, যাদের সাথে থাকি, যাদের ভালবাসি, যাদের সাথে চলাচল করি তাঁদের প্রতি নিজেদের সম্মান প্রমাণ করার জন্য আমার কোনো অঙ্গভঙ্গি করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। যখন কোনো ব্যাখা ছাড়া আমাকে সেটা করতে করতে বলা হয় – তখন আমার আছে বিষয়টার অনেক অর্থই আসতে পারে।’

নিজেকে বর্ণবাদী মানতে নারাজ কক। তিনি বলেন, ‘যদি বর্ণবাদী হয়েও সম্মান প্রদর্শন করতাম, তাহলে সেটা সুন্দর একটা সমাজ গড়তে কোনো ভূমিকা রাখতো না। কিন্তু, যারা আমার সাথে বড় হয়েছে, যারা আমার সাথে খেলে – তারা জানে আমরা কেমন মানুষ। একজন ক্রিকেটারকে অনেক কিছুই বলা যায় – বোকা, স্বার্থপর। আমাকে এরকম বললেও হয়তো গায়ে লাগবে না। কিন্তু, বর্ণবাদী বললে সেটা খুব গভীর ক্ষতের কারণ হয়। এটা আমার পরিবারকে কষ্ট দেয়, আমার সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে কষ্ট দেয়। আমি বর্ণবাদী নই, আমি সেটা আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানি ও মানি। আমি বিশ্বাস করি, যারা আমাকে জানেন তারাও এটা মানেন।’

জানা গেছে বুধবার রাতে বোর্ডের সাথে এক আবেগী বৈঠক হয় ডি ককের। সেখানেই ‘সব পক্ষের ভাল কথা বিবেচনা’ করে নিজের আগের অবস্থা থেকে সরে আসেন কক। তিনি বলেন, ‘আমার মুখে কথা সব সময় ভাল হয় না। আমার কথার জন্য আমি দু:খিত। আমি আমার সমর্থকদের, কিংবা যারা আমাকে জানেন – তাদের কিভাবে কষ্ট দিয়েছে দিয়েছি মেটা বলে প্রকাশ করার মত ভাষা আমার নেই। সত্যিই নিজের কাজের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞ কক। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সব সতীর্থ বিশেষ করে অধিনায়ক টেম্বাকে (বাভুমা) ধন্যবাদ জানাতে চাই। সবাই হয়তো জানে না, ও কতটা প্রশংসা পাওয়ার মত একজন অধিনায়ক। যদি ও অধিনায়ক ও দল দক্ষিণ আফ্রিকা আমাকে জাতীয় দলে দেখতে চায়, তাহলে আমার জন্য এর চেয়ে আনন্দদায়ক আর কিছু হতেই পারে না।’

সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেননি সাবেক অধিনায়ক ডি কক। কারণ, এই ম্যাচের আগেই ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) এক বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা দেয় যে, ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস’ সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব প্রোটিয়া খেলোয়াড়দের জন্য হাঁটু গেড়ে বসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে আগে থেকেই সব দেশের ক্রিকেটাররাই অংশ নিয়ে এসেছে।

চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর হারলেও সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে কুইন্টন ডি ককের অনুপস্থিতির পরও আট উইকেটের বড় জয় পায় টেম্বা বাভুমার দল। শনিবার শারজাহতে তাঁদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা দল। সব ঠিকঠাক থাকলে সেই ম্যাচে খেলবেন কক, হাঁটু গেড়ে বসে সংহতিও জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link