নিজেদের সপ্তম বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল। রেকর্ড সংখ্যকবার বিশ্বকাপের সেই শিরোপা নিজেদের দখলে নিলো অজি মেয়েরা। ২০২২ এ নিউজিল্যান্ডে বসেছিল নারী বিশ্বকাপের ১২তম আসর। এবারের আসর মিলিয়ে বারটি আসরের মধ্যে সাতটি শিরোপা চলে গেছে অস্ট্রেলিয়ার দখলে। এই সপ্তম শিরোপা জয়ের কাণ্ডারি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররাই।
৫০৯ রান করে অ্যালিসা হিলি হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন র্যাচেল হায়েন্স। তাঁর ব্যাটটাও হেসেছে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই। সঙ্গ দিয়েছেন যথাযথভাবেই। তিনি হয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দুইজনের রানের ব্যবধান কেবল ১২ রানের। তিনি করেছেন ৪৯৭ রান। দূর্দান্ত এক গড় তাঁর এবারের বিশ্বকাপে।
ফাইনাল মিলিয়ে মোট নয়টি ম্যাচে হায়েন্স ব্যাট হাতে নেমেছেন বাইশ গজে। রান করেছেন প্রায় ৬২.১২ গড়ে। ভাবুন তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে ষাট পেরনো গড়ে তিনি রান করে গেছেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি ছাড়াও দারুণ নৈপুন্যে একটি শতকও হাঁকিয়েছেন। ১৩০ রানের সে ইনিংসটি খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিলটনে বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচেই।
সেই ইংল্যান্ডে বিপক্ষেই ফাইনালে হিলির রেকর্ড ১৭০ রানের ইনিংসের শুরুর দিকে সঙ্গ দিয়ে তিনি তুলে নিয়েছেন এবারের আসরের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এর আগে প্রথমটি করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের বিপক্ষে আর দ্বিতীয়টি করেছিলেন সেমিফাইনালে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই সেমিফাইনালে। উদ্বোধনী জুঁটিতে ২১৬ রানের বিশাল রান সংগ্রহ করতে ৮৬ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন তিনি।
পুরোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই তিনি ছিলেন ধারাবাহিক। ব্যাটটা কখনোই থেমে থাকেনি। অন্তত তাঁর গড় সে পক্ষেই কথা বলে। অথচ একটা সময় এই ক্রিকেট থেকেই দূরে সড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তাঁর। ক্রিকেটকে ঠিক পেশাদার ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন কিনা তেমন এক দুশ্চিন্তা কিংবা দোলাচল মুহূর্ত এসে হাজির হয়েছিল তাঁর সামনে। তবে সেখানটায় নিজেকে সামলে নিতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সবাইকে এমন অনবদ্য এক ধারাবাহিকতা উপহার দিতে পেরেছেন এবারের আসরে।
নয় ইনিংস মাত্র একটিবার তিনি দুই অংকের গড়ে পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে স্বল্প রান তাড়া করতে নেমে ফারজানা হকের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। মাত্র সাত রানে সেবার ফিরে গিয়েছিলেন প্যাভিলনে। এছাড়া তিনি এবারের বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন ১৭ রান করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এছাড়া দুইটি ত্রিশের বেশি ইনিংসের পাশাপাশি একটি ৪৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
উদ্বোধনী ব্যাটারদের ইনিংসের শুরুতে একটা বাড়তি চাপ সামাল দিয়ে নিজেদের ইনিংসটি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। সে প্রাথমিক ঝক্কি সামলে এমন দূর্দান্ত ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বিশ্বকাপের মঞ্চের একটা আলাদা আবহাওয়াও প্রচণ্ড মানসিক পীড়া দেয়। স্নায়ুচাপটা স্বাভাবিকের থেকেও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এমন এক পরিস্থিতিতে ৮৩ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রেখেছিলেন হায়েন্স।
স্ট্রাইক রেটটা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন নয়। তবে মূলত হায়নেস নিজের ইনিংসটা ধরে খেলেছেন। কারণ অপরপ্রান্তে তাঁরই সতীর্থ অ্যালিসা হিলি ছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে। তিনি মোটামুটি মেরে খেলেছিলেন। তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল ১০৩.৬৬। তিনি করেছেন দুইটি সেঞ্চুরি আর দুইটি হাফ সেঞ্চুরি। দুইটি সেঞ্চুরিই করেছেন তিনি সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে।
দুর্দান্ত এক সময় পার করলেন বা-হাতি ওপেনার র্যাচেল হায়েন্স। হয়ত আগামী বিশ্বকাপ অবধি নিজের এই ফর্ম ধরে রাখাটা হবে এক বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিশ্বকাপের এই ফর্মের রেশ খুব তারাতারি শেষ হয়ে যাবে না তা বলে দেওয়া যায়। ঘোর কাটিয়ে না উঠুক, ছন্দটা বজায় থাকুক।