বাবা ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্ত। ছেলের নামে তাই শচিন টেন্ডুলকার আর রাহুল দ্রাবিড়ের সংমিশ্রণ। সেই ছেলে প্রথমবারের মত খেলতে নেমেছেন বিশ্বকাপ। বাবা যেখান থেকে ক্রিকেটকে ভালবাসতে শুরু করেছেন, সেই দেশেই ফিরেছেন ছেলে। ব্যাট হাতে নিজের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিশ্বকাপের মহামঞ্চে।
বলছিলাম নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রর কথা। এবারের বিশ্বকাপে হুট করেই তার সংযুক্তি। নিউজিল্যান্ডের পরিকল্পনায় ছিলেন না তিনি। মাইকেল ব্রেসওয়েলের ইনজুরি তার রাস্তাটা খুলে দেয়। আর সেই রাস্তায় রীতিমত স্পোর্টস কার হয়ে ছুটছেন রাচিন।
ব্রেসওয়েলের অবর্তমানে ব্ল্যাকক্যাপস শিবিরে প্রয়োজন ছিল একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডারের। সেই ঘাটতি পুরণের জন্যেই আসলে রাচিন রবীন্দ্রকে বিশ্বকাপ দলে যুক্ত করা। তাতেও অবশ্য তার একাদশে থাকাটা নিশ্চিত ছিল না। সেখানেও রবীন্দ্রের ভাগ্য খানিকটা সহয়তাই করে তাকে। কেন উইলিয়ামসন বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ খেলতে পারছেন না।
কারণে সেই ইনজুরি। ঠিক সে কারণেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে সুযোগটা মিলেছে তার। তবে সেই সুযোগটি নিজে আদায় করেই নিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ার্মআপ ম্যাচে শতক হাকিয়েছিলেন বা-হাতি এই ব্যাটার। তাতেই ভরসা জুগিয়ে ফেলেন রবীন্দ্র।
আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচেই নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে ফেললেন রাচিন। যদিও বল হাতে দিনটি খারাপই কেটেছে তার। বোলার সংকটে ১০ ওভার বল করতে হয়েছে রবীন্দ্রকে। তাতে ৭৬ রান খরচায় ১টি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন তিনি।
তাতে আলো কেড়েছেন ব্যাট হাতে। ইংল্যান্ডের তুখোড় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে দারুণ এক ইনিংসই উপহার দিলেন রাচিন রবীন্দ্র। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাবাকে গর্ববোধ করবার কোন সুযোগই যেন হাতছাড়া করতে চাননা রাচিন রবীন্দ্র।
জীবনের তাগিদে হয়ত তার পিতা পারেননি ক্রিকেটকে আপন করে নিতে। তবে ছেলেকে দিয়ে সেই স্বপ্ন পূর্ণ করতে চেয়েছেন বাবা। ছেলে রয়েছেন সেই পথেই। প্রায় ১০০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাটিং করে গেছেন। নিউজিল্যান্ডের জয়ের ভীতটা গড়ে দিয়েছেন তিনি। তুলে নিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
বিশ্বকাপের মত মঞ্চে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের অনুভূতি নিশ্চয়ই বাড়তি আনন্দের। মনের সবুজে দোলা দিয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়ার মত প্রশান্তির। তবে শতক তুলেই ক্ষান্ত হবেন কেন তিনি! তিনি এগিয়ে গেলেন আরও খানিকটা দূর। যেখান থেকে ব্ল্যাকক্যাপসদের জয় ব্যতীত আর কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়।
চার-ছক্কার একটা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তিনি। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের গুটিকতক দর্শককে বিনোদনের বানে ভাসিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। পিতৃভূমির মাটিতে দাঁড়িয়ে গৌরবময় এক মঞ্চে এমন দূর্দান্ত ইনিংসটি বহুকাল মনে গেঁথে রইবে নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রর। তার থেকেও বেশি স্বস্তি হয়ত রাচিন খুঁজে নেবেন বাবাকে গর্ব করবার সুযোগ করে দেওয়ায়। সেটা আর ক’জনই বা করতে পারে!
ডেভিন কনওয়েকে সাথে নিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের মৃদু এক বদলাই নিয়ে নিলেন রাচিন রবীন্দ্র। কনওয়ের সাথে তার গড়া জুটিতে ভর করেই শেষ অবধি জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ডের। বেশ বড় জয়। শেষ অবধি ১২৩ রানে অপরাজিত থেকেছেন রাচিন। জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন বা-হাতি এই ব্যাটার।