রাফিনহা কিংবা ব্রাজিলের জন্য ম্যাচটা ছিল দু:স্বপ্নের মতো। হার তো হলোই, সেই সঙ্গে মাঠের বাইরে জমে উঠল নতুন এক নাটক! ম্যাচ শেষ, হতাশ রাফিনহা হাঁটছিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ঠিক তখনই ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা—অ্যাস্টন ভিলার আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ যেন ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন তাঁকে!
রাগে ফুঁসছিলেন রাফিনহা। সুযোগ বুঝে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে গেলেন আর্জেন্টিনার লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সঙ্গে। দক্ষিণ আমেরিকার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল, উত্তেজনা থাকবেই! কিন্তু রাফিনহা যেন বেশি তেতে উঠলেন। ড্রেসিংরুম ছেড়ে এবার ছুটলেন প্রতিপক্ষের দিকে—চোখেমুখে আগুন!
ঠিক তখনই ঘটল আরেক নাটকীয় মোড়। ব্রাজিলের তরুণ প্রতিভা এন্দ্রিক ঝাঁপিয়ে পড়লেন রাফিনহার ওপর, যেন কোনোভাবেই সামনে যেতে না পারেন! পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন জোয়েলিন্তন, তিনিও টেনে ধরে রাখলেন বার্সেলোনা উইঙ্গারকে। শেষ পর্যন্ত কোনো বিশাল কাণ্ড না ঘটিয়ে শান্ত হল পরিস্থিতি।
অথচ, ঘটনার সূত্রপাত আরও আগে থেকেই। ব্রাজিলের বিশাল হার, রাফিনহার শট অন টার্গেটের খাতা শূন্য। অথচ, সেই রাফিনহাই ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘আমরা ওদের হারাব, কোনো সন্দেহ নেই। মাঠে ও মাঠের বাইরে, যেভাবে লাগে।’
রাফিনহা যেন নিজের কপালেই আগুন ডেকে এনেছিলেন! আর্জেন্টিনা কি আর এসব কথার জবাব দিতে ভুলে যাবে! ম্যাচজুড়ে যেন খলনায়ক হয়ে ছিলেন রাফিনহা। তবে মাঠের খেলায় কথার দাম দেয়নি ব্রাজিল, বরং হারের লজ্জায় ডুবে গেছে। তার ওপর যোগ হলো ম্যাচশেষের উত্তেজনা—মার্টিনেজের ধাক্কা, পারেদেসের সঙ্গে তর্ক। আর ব্রাজিলিয়ান সতীর্থদের হস্তক্ষেপে ঠেকানো এক অগ্নিগর্ভ মুহূর্ত।
এতসব উত্তেজনার পরও ম্যাচ শেষে দেখা গেল এক অন্যরকম দৃশ্য। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি যেন এক মহত্বের নজির স্থাপন করলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ওর কথাগুলো পড়িনি, দেখিওনি। তবে এসব কথায় আমাদের খেলা বদলায়নি। আমি ওকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। আমি নিশ্চিত, রাফিনহা কাউকে আঘাত দিতে চায়নি। এটা শুধু নিজের দলকে উজ্জীবিত করার জন্যই বলেছে। কিছু মানুষ হয়তো উত্তপ্ত লড়াই চেয়েছিল, কিন্তু সেটা শুধু ওর কথার জন্য হয়নি। আমি ওকে বুঝতে পারছি, ওর কোনো দোষ নেই।’
ফুটবল শুধু স্কোরলাইনের লড়াই নয়, এখানে আবেগ আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, আবার ক্ষমাও আছে! ম্যাচের আগে যা ছিল লড়াইয়ের বারুদ, ম্যাচের পর তা মিলিয়ে গেল স্কালোনির উদারতায়। কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বীতা নিশ্চয়ই কমল না এক বিন্দুও!