কামড়ানো নখ, স্নায়ুর ঝাঁকুনি!

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই। শেষ ওভারে জিততে লাগবে গুটি কয়েক রান। কিন্তু ফিল্ডিং করা দলও পিছিয়ে নেই। তাদেরও লাগবে মাত্র একটা উইকেট। উত্তেজনায় আপনি সোফা ছেড়ে সোজা হয়ে বসলেন। অজান্তেই হয়তো চোখের পাতা সরু হয়ে গিয়েছে। নার্ভের ওপর আস্তে আস্তে চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বোলার বল করতে বোলিং মার্কে ফিরে গেল। দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস থাকলে আঙুল তখন মুখের কাছেই।

নাহ পাঠক। গল্প বলছি না। বরং আজকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এমনই কয়েকটা ম্যাচের সন্ধান দিয়ে যাব যেগুলোতে দর্শকের অবস্থা হয়েছিল উপরের অংশটুকুর মতই।

  • ভারত-পাকিস্তান (২০০৭)

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দিক বদলের গল্প ঠিক করে দেওয়া সেই ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালের গল্পটা তো সবাই জানেন। সে ম্যাচটাও ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। তবে সেই টুর্নামেন্টেই গ্রুপ পর্বে দেখা হয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের। পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৪ বলে ৩৯!

টি-টোয়েন্টিতে এই রান তাড়া করা খুব বেশি কঠিন ছিল না। তাঁর ওপর পাকিস্তানকে মানাই হচ্ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আদর্শ। কিন্তু সব কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মিসবাহ এই রান নিতে পারলেন না। ম্যাচ হয়ে গেল টাই। সে সময় টাই ভাঙতে এখনকার মত সুপার ওভার ছিল না। ম্যাচের ফল নির্ধারণ হল ‘বোল আউট’ এ। আর তাতেই ৩-০ তে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।

  • ইংল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস (২০০৯)

২০০৯ এর সে ম্যাচটা ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সে আসরের প্রথম ম্যাচ। স্বভাবতই ম্যাচে ফেভারিটের তকমা নিয়েই মাঠে নেমেছিল। নেদারল্যান্ডসও পাল্টা জবাব দিচ্ছিল ম্যাচ জুড়েই। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা শেষ ওভারে গড়ালে নেদারল্যান্ডের জয়ের জন্য লাগত আর মাত্র সাত রান।

ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ ওভারে বল করতে পাঠানো হয়েছিল স্টুয়ার্ট ব্রডকে। কিন্তু প্রবল চাপে হযবরল পাকিয়ে ফেলেন ব্রড। একটা ক্যাচ তো ফেলে দেনই, সাথে দুটো রান আউটও মিস করেন। আর শেষপর্যন্ত নেদারল্যান্ড জিতে যায় ওভারথ্রো তে পাওয়া রানের কল্যাণে।

  • অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান (২০১০)

পাকিস্তান সে বিশ্বকাপে ফাইনালে এক রকম চলেই গিয়েছিল। কারণ অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য লাগত ১৭ বলে ৪৮ রান। তার চাইতেও জটিল ব্যাপার পাকিস্তানের হয়ে সাঈদ আজমল আর মোহাম্মদ আমিরের ওভার বাকি ছিল।

সে সময়ের প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছিল, একমাত্র ক্রিকেট দেবতা ছাড়া সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের কোন পথ খোলা নেই। কিন্তু বন্ধ পথ খুলতে এগিয়ে আসেন মাইক হাসি। আজমলের করা শেষ ওভারে ৬-৬-৪-৬ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম থ্রিলিং ম্যাচ মনে করা হয় এটাকে।

  • নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১২)

২০১২ এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে, কিন্তু আরেকটু হলে সুপার এইটেই উঠতে পারত না দলটা। নিউজিল্যান্ডের সাথে সে ম্যাচটাতে হেরে গেলেই ক্যারিবিয়ানদের নিজ নিজ দ্বীপে ফিরে যেতে হত শূন্য হাতেই।

যাই হোক, শেষ বলে মিড উইকেট থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোজাসুজি থ্রো তে কিউই রান-আউটের কল্যাণে সে ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হয় টাই। টাই ভাঙতে আয়োজন করা হয় সুপার ওভারের। সুপার ওভারে  ৬ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮ আর তা সহজেই পেরিয়ে যায় ড্যারেন স্যামির দল। আর এরপর সেই ‘গ্যাংনাম’ নাচকে তো সবার মনেই আছে।

  • নেদারল্যান্ডস-আয়ারল্যান্ড (২০১৪)

সেটা ছিল মূল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাছাই পর্বের মত। ।মূল টুর্নামেন্টে খেলতে নেদারল্যান্ডসকে সে ম্যাচ শুধু জিতলেই হত না, বরং ‘নেট রান রেট’ বাড়িয়েই জিততে হত। কঠিন এই হিসেব মাঠে গিয়ে শেষ অবধি যা দাঁড়ায়- ১৪.১ ওভারে নেদারল্যান্ডসকে করতে হবে ১৯০ রান! আয়ারল্যান্ডের বোলিং আক্রমণও ফেলে দেবার মত ছিল না।

কিন্তু ‘মেন ইন অরেঞ্জ’ রা সেই রান সিলেটে আরামেই তাড়া করে ফেলে। এই ম্যাচটা তখন সহযোগী দেশের মধ্যে হতে পারে, কিন্তু ম্যাচটা ছিল রীতিমত উত্তেজনায় ভরপুর।

  • বাংলাদেশ-ভারত (২০১৬)

বাংলাদেশের জন্য সে বিশ্বকাপের শুরুতেই ছিল ধাক্কা। আরাফাত সানি আর তাসকিন আহমেদের মত বোলার হারিয়ে দলটা খেই হারিয়ে ফেলেছিল। এরপর ভারতের সাথে সে ম্যাচটাতে বাংলাদেশের হারানোর কিছুই ছিল না। তবুও ম্যাচটা ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। এক পর্যায়ে তো বাংলাদেশের জয়ই দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল।

কিন্তু, মুশফিক রিয়াদের অপরিণত শটে দুই উইকেটের পতন ঘটলে ম্যাচটা পেন্ডুলামের মত দোলাচলে পড়ে যায়। আর শেষ অব্দি ৩ বলে ২ রান নিতে না পারায় ম্যাচটা হারতে হয় বাংলাদেশকে। সে ম্যাচে দৌড়ে এসে মহেন্দ্র সিং ধোনির রান-আউট করার দৃশ্যটা তো মোটামুটি এখন আইকনিক ছবি হয়ে গিয়েছে।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link