অসফলদের জন্য এই পৃথিবীতে কোন জায়গা নেই। সেটা আমি জানি, কিন্তু আমার থেকেও ভালো জানে অন্যদিকের বাইশ বছরের ছেলেটা। ঋষভ পান্ত। ভালো কিপিং করতে পারছে না। কিন্তু মার খেয়ে মার দিতে জানে।
আরো অনেক কিছু জানে। টেস্টের পঞ্চম দিনে লাঞ্চের দু’ওভার আগে হঠাৎ আমার একটা কুইক সিঙ্গেল নিতে ইচ্ছে হল। খুব শান্তভাবে আমায় না বলল। দেখে কে বলবে কিছুক্ষণ আগেই ব্যাক টু ব্যাক ছয় মেরেছে। কই রান আউট নিয়ে বাকি মহারথীরা আমার ওপরে যা রাগ প্রকাশ করেন, ও তো সেরকম কিছু করল না।
আর কি জানে জানেন? আমাকে সম্মান দিয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে। ঋষভ জানে, আমরা যারা সেকেন্ড ফিডল খেলি, আমরা অনেক কিছুই পারি না। আমরা স্লো খেলি, সেফ খেলি। সেটা মানিয়ে নিয়ে ভারতীয় জাতীয় টিমের তারকা ব্যাটসম্যান কেন পারবে না নিজের খেলা খেলতে? ঋষভ তো বেশ পারছে।
প্রোটাগনিস্ট প্রচারের পুরো আলোটাই শুষে নেয়, আমরা কেবল ভরসা দিই। আমরা খেলি সচিনের সাথে। লক্ষ্মণের সাথে। ফলোঅনের পরে ৬২ স্ট্রাইক রেটের জ্বলজ্বলে ২৮১ এর পাশে ৫০ স্ট্রাইক রেটে ১৮০ ম্রিয়মাণ হয়ে ঝুলে থাকে। সৌরভ যখন টনটনে ১৮৩ হাঁকান, আমরাই থাকি ক্রিজের অপর প্রান্তে।
আজকে আমি বিশ্রী খেলছি, কিন্তু বিশ্রী ভাবে এখন অবধি ১৫০ বল খেলে ফেলেছি। আমায় ক্ষমা করবেন, আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনেও আমি বলেছি, আবার বলছি এর চেয়ে ভালো কিছু আমি পারি না।
কিন্তু আমি এটা পারি। বারবার পারি। আমরা এটা পারতে ভালোবাসি। এটা পারলে আমরা গর্বিত হই।
আমাদের এককালের সতীর্থ এবং ক্যাপ্টেন, আইডি কার্ড বা মাস্ক ছাড়া গটগট করে এয়ারপোর্টে ঢুকে পাইলটদের জন্য রিসার্ভড গেট দিয়ে সরাসরি প্লেনে উঠে যান। তখন প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে, ছেলের হাত ধরে, আপনাদের পেছনে, চিড়িয়াখানায় ঢোকার লাইনে আমরাই দাঁড়িয়ে থাকি।
আমরাই পারি পড়াশোনা না করে পাওয়া পিএইচডি ডিগ্রি ফেরত দিয়ে দিতে। আমাদের অবসর নিয়ে ফেলার ম্যাচে আমরা বড় বক্তৃতা দিই না, কারণ আমাদের প্রস্তুতি তখনো ক্রিকেটেই, নিজেকে নিয়ে নয়। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ওরেশনে বক্তৃতা দিতে যখন আমাদের ডাকা হয়, তখন আমরা প্রস্তুতি নিয়ে ধীর শান্ত ভাবে কথা বলি।
আমরা এরকমই। আমাদের নাম রাহুল দ্রাবিড়, আমাদের নাম চেতেশ্বর পূজারা।