গুরুদক্ষিণায় ঘুচল রাহুলের বিশ্বকাপ খরা

যেখানে পড়েছে দুঃখের অশ্রু, সম্ভবত সেই ভূমিতে আবার রাহুলের চোখ থেকে এক ফোটা আনন্দ অশ্রু ঝড়াতে চাইলেন সৃষ্টিকর্তা।

১৭ বছর আগে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে নোনা জলের নতুন সাগর তৈরি করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। এক বাংলাদেশের কাছে পরাজয় বদলে দিয়েছিল অধিনায়ক রাহুলের ক্যারিয়ার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সকল স্বপ্ন হয়েছিল সেবার ধূলিসাৎ। রাহুল সেদিন সমুদ্রের জলে দিয়েছিল আরেকটু জোগান।

ফাস্ট ফরোয়ার্ড টু ২০২৪। আবারও সেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। টেবিলের উপরে তারের জঞ্জাল। মনিটর উঁচু করে আছে কোলের কম্পিউটার। সেসবের মাঝ থেকেই উচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চটুকু উদযাপন করলেন রাহুল দ্রাবিড়। প্রাপ্তির খাতাটা যে শূন্য রইল না। এক সময়ে দেয়াল খ্যাত রাহুলের ঝুলিতে বিশ্বজয়ের আনন্দ হয়েছে যুক্ত।

খেলোয়াড়ী জীবনে গোটা বিশ্বের সেরা হওয়াটা থেকে গিয়েছিল অধরা। নিজ সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটারের অপ্রাপ্তির একটা বড় জায়গা জুড়েই ছিল বিশ্বকাপের শিরোপা। তার নামের পাশে আছে ২৪ হাজার আন্তর্জাতিক রান। সেসবের বদলে অন্তত একটা শিরোপা তিনি চেয়েছিলেন।

ক্রিকেট বিধাতা বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তিনি একেবারেই খালি হাতে ফেরালেন না রাহুলকে। শীষ্যদের দিয়েই তিনি রাহুলের জীবনের অপূর্ণতাকে দিলেন পূর্ণতা। যে ক্যারিবিয়ান দ্বীপে চাপা পড়েছিল তার স্বপ্ন, সে ক্যারিবিয়ান দ্বীপেই তিনি লিখে দিলেন নতুন এক সূর্যদয়ের গল্প।

তার অধীনে রোহিত শর্মার দল তুলে নিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের শিরোপা। সেই ২০০৭ সালের পর ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ১৭টি বছর। রাহুলের অধীনেই লেখা হবে নবউত্থানের গান, তাই বলেই হয়ত ভারতের কপালে এতকাল জোটেনি শিরোপা।

রাহুল হয়ত ২০২৩ সালেই নিজের ট্রফি খরা কাটিয়ে উঠতে পারতেন। ঘরের মাঠে শিরোপার উল্লাসটা হয়ত হতো দ্বিগুণ। কিন্তু উপরে যিনি বসে আছেন, তিনি হয়ত চেয়েছেন ভিন্নকিছু। তাইতো অপরাজিত ভারত দল ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপটা হেরে গেল।

যেখানে পড়েছে দুঃখের অশ্রু, সম্ভবত সেই ভূমিতে আবার রাহুলের চোখ থেকে এক ফোটা আনন্দ অশ্রু ঝড়াতে চাইলেন সৃষ্টিকর্তা। তাইতো অপেক্ষা করালেন আরও একটি বছর। শেষ অবধি রাহুলের হাতে উঠল বিশ্ব জয়ের মেমেন্টো। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যা করে দেখাতে পারেননি, সেটাই করে দেখালেন কোচ হিসেবে।

কিন্তু এবারও যে বেলা শেষ। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটে গেলে এটাই ছিল কোচ রাহুলের শেষ অ্যাসাইন্টমেন্ট। ২০০৭ সালে অধিনায়ক রাহুল তার শেষ অ্যাসাইন্টমেন্টের করেছিলেন ফেইল। কিন্তু এবার আর তা হতে দিলেন না বিরাট কোহলিরা। জাসপ্রিত বুমরাহরা ভারত ক্রিকেটের এই কিংবদন্তিকে একেবারেই খালি হাতে যেতে দিলেন না। এটাই যে ছিল তাদের গুরুদক্ষিণা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...