প্রিয় মানুষকে পাওয়ার জন্য অনেক কিছুই তো ত্যাগ করতে হয়, তেমনি প্রিয় দলের হয়ে খেলতে চাইলেও অগ্রাহ্য করতে হয় অর্থের প্রলোভন আর নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যৎ। এই যেমন ব্রাজিলের ফুটবলার রাফিনহা। স্বপ্ন দেখেন একদিন ন্যু ক্যাম্পে খেলবেন। আর তাই যখনই পুরোনো ঠিকানা লিডস ইউনাইটেডকে বিদায় বলার সময় এসেছে তখন পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে একমাত্র বার্সেলোনাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। অন্য ক্লাবের দিকে না তাকিয়ে অপেক্ষা করেছেন বার্সেলোনার জন্য।
অথচ রাফিনহাকে নিজেদের দলে ভেড়াতে বার্সেলোনার চেয়ে বেশি অর্থের প্রস্তাব দিয়েছিল চেলসি। এমনকি লিডসও তাদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত রাফিনহার বার্সা-প্রেম চেলসিকে হতাশ করেছে। অনেক নাটকীয়তার পর বার্সেলোনাতে আসার সুযোগ পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
রাফিনহার জন্য বার্সেলোনা লিডসকে ৫৮ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন শর্তে আরো সাত থেকে দশ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছে কাতালান ক্লাবটি। অন্যদিকে রাফিনহার জন্য চেলসি ৭৫ মিলিয়ন ইউরো দিতে রাজি হয়েছিল। বোঝাই যাচ্ছে, রাফিনহার বার্সার প্রতি একরোখা মনোভাবের কারণে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ইউরো কম পাচ্ছে লিডস।
অবশ্য শুরুতে বার্সেলোনা রাফিনহার জন্য ৪৯ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে চেয়েছিল। কিন্তু লিডস ইউনাইটেড সেটি প্রত্যাখ্যান করে দেয়। পরবর্তীতে এই ব্রাজিলিয়ানের ‘ব্লাউগানা’ জার্সির প্রতি ভালবাসা দেখে নিজেদের অর্থ প্রস্তাব আরো বাড়ায় তারা।
শুধু চেলসি নয়, আর্সেনাল, টটেনহ্যামের মত ইংলিশ ক্লাবগুলো থেকেও আরো বড় অংকের প্রস্তাব পেয়েছিল লিডস। কিন্তু, রাফিনহার কাতালান জায়ান্টদের সাথে যোগ দিতে চাওয়ায় লিডস তার জন্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্য গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারপরও অবশ্য, তাদের ক্লাব ইতিহাসে বিক্রি করা খেলোয়াড়দের মাঝে রাফিনহা সবচেয়ে দামি ফুটবলার।
আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকলেও এটা নিশ্চিত যে বার্সেলোনার সঙ্গে পাঁচবছরের চুক্তি করতে যাচ্ছেন রাফিনহা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাকে ন্যু ক্যাম্পেই দেখা যাবে। এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে এটি বার্সেলোনার তিন নম্বর সাইনিং। এর আগে চেলসির ক্রিস্টেনসেন এবং মিলানের ফ্র্যাঙ্ক কেসিকে দলে নিয়েছিল তারা।
রাফিনহা মূলত ‘ইনভার্টেড রাইট উইঙ্গার’। বল পায়ে আসার পর দুর্দান্ত সব কারিকুরিতে তিনি ডি-বক্সে ঢুকে পড়তে সিদ্ধহস্ত। এছাড়া দুই পা সমান ভাবে ব্যবহার করতে পারায় লেফট উইংয়েও খেলতে দেখা যায় তাকে। আবার কখনো কখনো রাইট মিডফিল্ডার এবং লেফট মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে নামেন তিনি।
আর চেলসি, বার্সেলোনা, আর্সেনাল, টটেনহ্যামের মত ক্লাবগুলোর আগ্রহ-ই প্রমাণ করে রাফিনহা আসলে কেমন পারফর্ম করেন। ২০১৮ সালে লিডস ইউনাইটেডে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭ ম্যাচ খেলেছেন এই ‘সাম্বা বয়’। এ সময় ১৭ গোলের পাশাপাশি ১২টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তবে লিডসের মত গড়পরতা দলে খেলা কোন ফুটবলারকে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যায় না। গতি আর ফুটবলীয় দক্ষতার সম্মিলনে রাফিনহা একজন নিঁখুত উইঙ্গার।
অন্যদিকে বার্সেলোনার আক্রমণভাগে আনসু ফাতি, ফেরান তোরেস, মেম্ফিস ডিপাই থাকলেও একজন স্টার প্লেয়ারের ঘাটতি রয়েছে। ইনজুরি না থাকলে হয়তো আনসু ফাতি এতদিনে সেই জায়গাটা পূরণ করতে পারতেন। আপাতত তাই আক্রমণে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য রাফিনহার দিকে চেয়ে থাকবে কাতালান ক্লাবটি। রাফিনহারও অবশ্য নেতৃত্ব দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে।
তবে নজর রাখার বিষয়, লিডস আর বার্সেলোনার প্লেয়িং স্টাইলের পার্থক্য। ইংলিশ ক্লাবটিতে রাফিনহা মূলত কাউন্টার অ্যাটাক ফুটবল খেলেছেন। বল পায়ে আসা মাত্রই প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে হানা দেয়া ছিল তার দায়িত্ব। কিন্তু বার্সেলোনা খেলে থাকে টিকি-টাকা। বল পায়ে রেখে ধীরে ধীরে আক্রমণ করাটা তাদের লক্ষ্য। ধীরগতির এমন পাসিং ফুটবলে রাফিনহা কতটা মানিয়ে নেয় সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
ফার্স্ট টাচ, ক্রিয়েটিভিটি এবং আত্মবিশ্বাস সব দিক দিয়েই রাফিনহা প্রথম সারির একজন। তিনি লিডস দলে অন্য যে কারোর চেয়ে ভাল ফুটবল খেলেন। এছাড়া মাঠে তার ইন্টেন্সিটি বেশ চোখে পড়ে। তিনি দ্রুত গতিতে প্রেসিং করতে পারেন, আবার ট্র্যাকব্যাক করে ডিফেন্ডারদেরও সাহায্য করেন।
সবমিলিয়ে উদীয়মান এক ফুটবলারকে দলে নিয়েছে বার্সেলোনা। এখন রাফিনহা নতুন ক্লাবে মানিয়ে নিয়ে পারফর্ম করতে পারলে আক্রমণের দিক থেকে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে বার্সা ম্যানেজম্যান্ট।
ক্লাব কিংবদন্তি জাভি হার্নান্দেজ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়েছে বার্সেলোনা। মৌসুমের মাঝপথে এসেও যেভাবে জাভি দলকে গুছিয়ে নিয়েছেন তাতে নতুন মৌসুমে নতুন করে আশা দেখতেই পারে কিউলরা। দলের ডিফেন্সের পাশাপাশি আক্রমনভাগ সবকিছুতেই তো পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে বার্সেলোনা। দিনবদলের একটা বার্তা স্পষ্ট।