ভুল সময়ে, ভুল স্থানে জন্ম তাঁর

অবশ্য সাকলাইন মুশতাক ও মুশতাক আহমেদ যে সময় পাকিস্তানের স্পিন বিভাগ সামলানোর দায়িত্ব পালন করছেন, আর স্পিনার অল রাউন্ডার হিসেবে উঠে এসেছেন শহীদ আফ্রিদি, তখন দেশের অন্য স্পিনারদের ক্যারিয়ার গ্রাফ খুব বেশি লম্বা হবার কথাও না, হয়ও নি। হ্যাঁ, তিনি ছিলেন বাঁ হাতি অর্থোডক্স স্পিনার, ব্যাটও করতেন বাঁ হাতেই। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে পিঞ্চ হিট করতে পারতেন ভালই। হয়তো আজকালকার টি-টোয়েন্টি জমানায় খেললে আরেকটু সফলতা পেতে পারতেন।

মোহাম্মদ হোসেনকে হয়তো ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেরই আর মনে নেই। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ – এই দুবছরে পাকিস্তানের হয়ে মাত্র ১৪ টি এক দিনের ম্যাচ আর দুটি টেস্ট যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের আয়ু, তাঁকে কজন মনে রাখতে পারেন?

অবশ্য সাকলাইন মুশতাক ও মুশতাক আহমেদ যে সময় পাকিস্তানের স্পিন বিভাগ সামলানোর দায়িত্ব পালন করছেন, আর স্পিনার অল রাউন্ডার হিসাবে উঠে এসেছেন শহীদ আফ্রিদি, তখন দেশের অন্য স্পিনারদের ক্যারিয়ার গ্রাফ খুব বেশি লম্বা হবার কথাও না, হয়ও নি।

হ্যাঁ, তিনি ছিলেন বাঁ হাতি অর্থোডক্স স্পিনার, ব্যাটও করতেন বাঁ হাতেই। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে পিঞ্চ হিট করতে পারতেন ভালই। হয়তো আজকালকার টি-টোয়েন্টি জমানায় খেললে আরেকটু সফলতা পেতে পারতেন।

তা এই মোহাম্মদ হোসেনকে অনেকে ভুলে গেলেও, ১৯৯৮ সালের জানুয়ারী মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিলভার জুবিলী ইনডিপেনডেন্স কাপের তৃতীয় ফাইনালটির কথা আশাকরি অনেকেই ভুলতে পারেননি এখনও। সেই টুর্নামেন্টে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, যার তৃতীয়টি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮ জানুয়ারি।

প্রথম ফাইনালে ভারত জিতলেও, দ্বিতীয় ফাইনালে পাকিস্তান জয় পেয়ে সমতা ফেরায়। তৃতীয় তথা অন্তিম ফাইনালটিই তখন কাপ জয়ের নির্ণায়ক ম্যাচ হয়ে উঠেছে তখন ।

বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই ৪৮ ওভারের ম্যাচে পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে সাইদ আনোয়ার ও সিনিয়র ইজাজ আমেদের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩১৪ রানের বিশাল লক্ষ্য রাখে ভারতের সামনে । টি-টোয়েন্টির জন্মের অন্তত ১০ বছর আগে , সেই সময় এই ৩১৪ রান ৪৮ ওভারে তাড়া করে জয় পাওয়া ছিল অসম্ভবের সমতুল্য।

আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিল শুরুতেই মাস্টার ব্লাস্টার শচীনের ২৬ বলে ৪১ রানের এক মারকাটারি ইনিংস এবং এরপর সৌরভ গাঙ্গুলি ও রবিন সিং এর দ্বিতীয় উইকেটে ১৮০ রানের জুটি। আকিব জাভেদ কিংবা সাকলাইন মুশতাকরা হাজার চেষ্টাতেও যে জুটি ভাঙতে ব্যর্থ, সেই জুটিই ভেঙে দিয়েছিলেন এই মোহাম্মদ হোসেন, রবিন সিংকে আউট করে।

ঠিক এর আগের ম্যাচেই জীবনের সেরা বোলিংটা করেছিলেন এই নাদুসনুদুস গোলগাল স্পিনারটি ।  এই সিলভার জুবিলি ইনডিপেনডেন্স কাপের দ্বিতীয় ফাইনালে ভারতের টপ অর্ডারকে রীতিমতো মুড়িয়ে দিয়ে ভারতকে মাত্র ১৮৯ রানে শেষ করে দিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচ জেতান তিনিই । সেদিন তাঁর শিকার ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, নভজ্যোৎ সিধু ও রবিন সিং । ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরাও হন তিনি।

আরো একটি ঘটনা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ১৯৯৭ সালে কানাডার টরোন্টোতে ভারত- পাকিস্তান একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় স্থূলকায় ইনজামাম উল হক দর্শকদের ক্রমাগত ব্যঙ্গ বিদ্রুপে তিতিবিরক্ত হয়ে ব্যাট হতে দর্শক পেটাতে গ্যালারিতে গিয়ে ওঠেন হঠাৎ।

প্রশ্ন ওঠে ফিল্ডিংয়ের সময় ইঞ্জি ব্যাট পেলেন কোথা থেকে? পরে তদন্তে উঠে আসে সেই ব্যাট ইঞ্জিকে এনে দিয়েছিলেন আরেক স্থূলকায় ক্রিকেটার মোহাম্মদ হোসেন, যিনি দ্বাদশ ব্যক্তি ছিলেন সেই ম্যাচে।

ব্যাটের হাতটিও একদম খারাপ ছিল না। আগেই বলেছি , ভালো হার্ড হিটার ছিলেন । হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২০ বলে ৩১ রান করে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন। একদিনের ক্রিকেটে এটিই তাঁর সর্বোচ্চ রান।

১৯৯৬ সালে ফয়সালাবাদে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অভিষেকের পর মোট ১৪ টি একদিনের ম্যাচে মাত্র ১৫৪ রান ও ১৩ টি উইকেট নিয়েই থমকে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন। টেস্ট ও সাফল্য অধরা থেকে গেছে। মাত্র দুটি টেস্টে ১৮ রান ও তিন উইকেট তাঁর সংগ্রহ।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন এক সময়। এমন মোহাম্মদ হোসেনকে ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু হঠাৎই মাত্র ৪৫-৪৬ বছর বয়সে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন ভেসে আসে আজহার আলীর টুইট মারফত, তখন বিস্মৃতপ্রায় মোহাম্মদ হোসেন আবারও ফিরে আসেন টুকরো টুকরো ঘটনা নিয়ে আমাদের মনে । সাফল্য না এলেও, তাঁর প্রতিভা অস্বীকার করার উপায় নেই । হয়তো ভুল সময়ে, ভুল স্থানে তাঁর জন্ম হয়েছিল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...