প্রত্যাবর্তন — খেলায়, জীবনে, কিংবা নি:শ্বাসের দীর্ঘ অপেক্ষায়

এটাই তো খেলার সৌন্দর্য্য, এটাই তো জীবনের অনুপ্রেরণা। বয়স, ব্যর্থতা কিংবা সময়—সবকিছুর ওপর বিজয়ের গল্প লিখতে জানেন যাঁরা, তাঁরাই আসল নায়ক। খাজা যেন সেই পুরোনো কথাটাই আবার মনে করিয়ে দিলেন— প্রত্যাবর্তন শুধু ফিরে আসার গল্প নয়; বরং জিতে যাওয়ার আরেক নাম!

প্রত্যাবর্তন – কখনো সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই, কখনওবা নিজেকেই নতুন করে খুঁজে পাওয়ার সংগ্রাম। খেলায়, জীবনে, কিংবা নি:শ্বাসের দীর্ঘ অপেক্ষায় — প্রত্যাবর্তনের গল্পটা সবসময়ই আলাদা।

উসমান খাজার এই ফিরে আসা তেমনই এক গল্প—যা সংগ্রামের ঘাম আর স্বপ্নের রঙ মিশিয়ে লেখা। উপেক্ষিত ছিলেন, হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল, অথচ সময়ের হাত ধরে তিনি ফিরেছেন — আর কি ভয়াবহ সেই ফেরা! যেন সব প্রতীক্ষার উত্তর লুকিয়ে ছিল তাঁর ব্যাটের প্রতিটি আঘাতে। এই প্রত্যাবর্তন শুধুই এক ইনিংসের নয়, এটি হার না মানা এক আত্মার জয়ের প্রতিচ্ছবি। এখন তা পরিণত হয়েছে ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়ে, যেখানে প্রতিটি শব্দ যেন বলে — ফিরে আসার গল্পটাই সবচেয়ে সুন্দর!

গল টেস্টে প্রথম দিনে খাজার এই সেঞ্চুরি যেন একটা দীর্ঘ খরার পর প্রথম বৃষ্টির ছোঁয়া। এক বছর সাত মাস ১৪ দিন—একজন ব্যাটারের জন্য সময়টা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, খাজাকে জিজ্ঞেস করুন কিংবা খুঁজে নিন প্রতিবার আউট হয়ে ফেরা সেই অসহায় চোখ জোড়ায়। বার্মিংহামের সেই ১৪১ রানের ইনিংসের পর যেন ব্যাটটাই কথা বলা ভুলে গিয়েছিল। পরের ৩২ ইনিংসে মাত্র পাঁচটি ফিফটি। কিন্তু এই যে দীর্ঘ অপেক্ষা, তার শেষে রঙিন এক বসন্ত নিয়ে এলেন খাজা।

শুধু সেঞ্চুরি করেই ক্ষান্ত হননি তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা পেলেন ঠিক তখনই, যখন বয়স ৩৮। প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার হিসেবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ২১৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসটি তাকে নিয়ে গেল ইতিহাসের পাতায়।

অস্ট্রেলিয়া দলে তখন খাজার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বাদও দেওয়া যেত তাকে। কিন্তু অভিজ্ঞতার মূল্য বুঝতে জানে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। এশিয়ার মাটিতে খাজার পরিসংখ্যানও সমর্থন জুগিয়েছে। এশিয়ায় এখন পর্যন্ত ২১ ইনিংসে তিনি করেছেন ১,৭৪৪ রান, যেখানে তার ব্যাটিং গড় ৬২.২৮। ৭টি সেঞ্চুরি এবং ৪টি ফিফটি তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে। কন্সটাসকে বাদ দিয়ে খাজাকেই আরেকটা সুযোগ দিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড।

আর খাজা? তিনি বুঝিয়ে দিলেন কিংবদন্তিরা সুযোগ এলে তা হেলায় হারায় না। তারা প্রতিবারই লিখে দেয় এক নতুন অধ্যায়।

এটাই তো খেলার সৌন্দর্য্য, এটাই তো জীবনের অনুপ্রেরণা। বয়স, ব্যর্থতা কিংবা সময়—সবকিছুর ওপর বিজয়ের গল্প লিখতে জানেন যাঁরা, তাঁরাই আসল নায়ক। খাজা যেন সেই পুরোনো কথাটাই আবার মনে করিয়ে দিলেন— প্রত্যাবর্তন শুধু ফিরে আসার গল্প নয়; বরং জিতে যাওয়ার আরেক নাম!

Share via
Copy link