শেষ তিন ওভারে রাজস্থান রয়্যালসের জয়ের জন্য প্রয়োজন মাত্র ৩১ রান। হাতে আছে সেট ব্যাটার, নিতিশ রানার বল্লম ধারালো, শিমরন হেটমায়ার ছিলেন ছক্কা হাঁকানোর মুডে।
তবু, ম্যাচটা গিয়েছিল সুপার ওভারে—আর সেখান থেকেও রাজস্থান নয়, জয় তুলে নিয়েছিল দিল্লী। কীভাবে? জবাবে আসবে একটাই নাম — মিশেল স্টার্ক।
১৮ তম ওভারে আসে প্রথম আঘাত। স্টার্কের হাতে পুরনো বল। সাদা বলে রিভার্স স্যুইং – হ্যাঁ প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন স্টার্ক। বাঁহাতি এই গতিদানব মাত্র আট রান দিয়ে ফেরান অর্ধশতক পাওয়া নিতিশ রানাকে — নিখুঁত এক ইনস্যুইং ইয়োর্কারে।
পরের বলেই হেটমায়ার ছিলেন বোল্ড হওয়ার এক চুল দূরে। বলের হালকা ইনসাইড এজ তাঁকে বাঁচিয়ে দিলেও, সতর্কবার্তা দিয়ে দিয়েছিল স্টার্ক। এরপর ২০ তম ওভারে আবারও মিশেল স্টার্কের তাণ্ডব।
শেষ ওভারে জিততে দিল্লীর নয় রান দরকার। সাধারণত ম্যাচ এখানেই শেষ। স্টার্কের জন্য তা নয়। প্রতিটি বল যেন কারুকার্যখচিত ইয়োর্কার। নিশানা একেবারে স্টাম্পের নিচের অংশ। গতি, লাইন, লেট স্যুইং — সব মিলিয়ে হেটমায়ার আর ধ্রুব জুরেল হয়ে গেলেন নিরুত্তর। দিল্লী আটকে দিল রাজস্থানকে। তুলে নিল সমতা, ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে ফের মিশেল স্টার্কেই আস্থা দিল্লী। পুরনো বল বেছে নেওয়ার সুযোগে আবার স্টার্ক। আর তিনি আবার ইয়োর্কারে আস্থা রাখলেন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করতে গিয়ে একবার নো বল করলেন বটে, তবে তাতে ছন্দপতন হয়নি।
রাজস্থান তুলতে পারল মাত্র ১০ রান। দুই ব্যাটার রান আউটে কাটা পড়লেন বিভ্রান্তির চূড়ায়। স্টার্কের দাপটে সুপার ওভারও শেষ হলো এক বল হাতে রেখেই।
সংখ্যা কখনও মিথ্যা বলে না। আর এবার সংখ্যাতত্ত্ব মিশেল স্টার্কের পক্ষে। ইনিংসের শুরুতে নতুন বল হাতে সুইং ছিল মাত্র ০.৮ ডিগ্রি। কিন্তু, ১৮ ও ২০তম ওভারে পুরনো বল দিয়ে করলেন গড়ে ১.২ ডিগ্রি রিভার্স সুইং। সুপার ওভারে সেটা বাড়িয়ে নিয়ে গেলেন ১.৮ ডিগ্রিতে।
এই বিপজ্জনক লেট সুইংয়ের সঙ্গে ছিল ঘড়ির কাঁটার মতো ইয়োর্কার। প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা পড়লেন দিশেহারা। সাথে ব্যাটাররাও বাঁ-হাতি হওয়াকে বলা যায় মিশেল স্টার্কের সৌভাগ্য। ১৮ ও ২০ তম ওভারে তাঁর ১২ টি ডেলিভারির মধ্যে ৮ টিই খেলেছেন বাঁহাতিরা। ওভার দ্য উইকেট থেকে ভেতরে ঢুকিয়ে আনা তার ‘স্টক ডেলিভারি’ তখন আরও ভয়ঙ্কর।
শুধু বল ফেলা নয়, ফিল্ডিং সেটআপ করাও ছিল তুলনামূলক সহজ। আর রাজস্থানও কি বুঝে সুপার ওভারেও সেই বাঁ-হাতি হেটমায়ারকে দিয়ে শুরু করল সেটা বোধগম্য নয়।
ডান হাতি রিয়ান পরাগ আসার পর একটু সংকটেও পরেন স্টার্ক। ব্যাক ফুটে নো বল হয়, অতিরিক্ত পাঁচ রান হজম করেন। অবশ্য পরের বলেই পরাগ রান আউট হওয়ায় সেই কমপেনসেশনও পেয়ে যান স্টার্ক।
ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘সবাই জানে আমি কী করব। কিন্তু, আমি যদি ঠিকঠাক বল ফেলতে পারি, তাহলেই যথেষ্ট। আমাকেও বুঝেও লাভ নেই।’ ঠিকই বলেছেন তিনি। স্টার্ক ঠিক এমনই — তাঁর আড়ালেই লুকিয়ে থাকে ক্রিকেটের যত রুদ্ধশ্বাস মন্ত্র!