জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের পুনর্জন্ম

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে পঞ্চম স্থানে। এর পরের বছরে নিউজিল্যান্ডের মাঠে এবং নিজেদের মাঠে টানা দুইটি সিরিজই জিতেছিল রোডেশিয়ান দলটি। জিম্বাবুয়ের দলটা তখন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সুভাসে সুভাষিত।

কিন্তু এরপরেই বর্ণবাদের কালো মেঘে ছেয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট আকাশ। তৎকালীন দেশটির স্বৈরশাসক রবার্ট মুগাবের প্রত্যক্ষ প্রভাবে এলোমেলো হয়ে পড়ে দেশটির ক্রিকেট কাঠামো। ব্যাস। ক্রিকেট মানচিত্রে জিম্বাবুয়ের অবনমনের শুরু সেখান থেকেই। এরপর টানা দুই দশকেও আর দেশটিতে ক্রিকেটের হালচাল বদলায়নি। বরং পিছিয়েছেই শুধু।

বছরের পর বছর বোর্ডের দুর্নীতির কারণে অর্থ সংকট চরম আকার ধারণ করে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে। বেশি দূর পিছনে যেতে হবে না, এই বছর পাঁচেক আগেও খেলোয়াড়দের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডকে।

আর সেই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে ২০১৯ সালে। নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশটির সরকার ক্রিকেট বোর্ড বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেয় সে বছরে। ঐ বছরেই লন্ডনে কয়েক দফা সভা শেষে আইসিসি বাৎসরিক সভায় দুটি আইন অমান্য করার কারণে জিম্বাবুয়েকে বহিষ্কারের সিদ্বান্ত নেওয়া হয়।

অবশ্য ২০১৯ সালেই জিম্বাবুয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় আইসিসি। ফলত, ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য সুপার লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। হয়তো ঐ একটা সুযোগই চেয়েছিল শেন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজাদের মতো স্বপ্নবাজ ক্রিকেটাররা। কারণ পথ হারানো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে যে একটা পথে আনতে বদ্ধ পরিকর ছিল তাঁরা।

সিকান্দার রাজাদের সেই আত্মবিশ্বাসী প্রয়াস অবশেষে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের নিভু নিভু প্রদীপেই আলোক ঝলকানি দিচ্ছে। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিমান ধরতে আগ্রাসী ক্রিকেটের দারুণ প্রদর্শনীই দেখাচ্ছে জিম্বাবুয়ে।

আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নেপাল, নেদারল্যান্ডসের পর এবার শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে তাঁরা। আর এতেই গ্রুপ ‘এ’ থেকে সুপার সিক্স নিশ্চিত করেছে জিম্বাবুয়ে।

এই মুহূর্তে বিশ্বকাপ ওঠার ক্ষেত্রে জিম্বাবুয়ের সমীকরণ সহজই বলা চলে। বাছাই পর্বে অপর গ্রুপ থেকে সেরা ৩ দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে তাঁরা। নিজেদের মাটিতেই হচ্ছে বিশ্বকাপের এ বাছাই পর্ব। ৮ বছর পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে ঠাই করে নেওয়ার এমন মোক্ষম সুযোগ হয়তো নিজেরাও হাতছাড়া করতে চাইবে না জিম্বাবুয়ে।

২০১৯ বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। আর সে কারণেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেখান থেকে উত্তরণের যাত্রায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট যে খুব এগিয়েছে, সেটা বলা যাবে না।

তবে, বিগত বছর গুলোতে তাঁরা ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছে। গত বছর নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশকে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি, দুই সিরিজেই হারিয়েছিল রাজারা। সেই ধারবাহিকতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও মিলেছিল লড়াকু মানসিকতার চিত্র।

সব মিলিয়ে এবার তাদের চোখ, ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার দিকে। আগের বিশ্বকাপে ‘না পাওয়া’ আক্ষেপটা হয়তো এবার পুষিয়েই দিতে চাইবেন সিকান্দার রাজা, শেন উইলিয়ামসরা। কারণ তাদের কাঁধেই যে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের এ অচলায়তন ভেঙ্গে সচলায়তন করার দিকে।

ক্রিকেট ইতিহাসে জিম্বাবুয়ের যেমন পদচ্ছাপ, তাতে তাদের বিলীন হয়ে যাওয়াটা ক্রিকেটের জন্যই একরাশ আক্ষেপেরই কারণ হবে। তাই তাদের নিজস্ব ছকে প্রত্যাবর্তনের গল্পটা আরো রঙিন হওয়া উচিৎ। হয়তো তেমন কিছু অপেক্ষাও করছে। কারণ রোডেশিয়ানদের ইতিহাসে ক্রিকেট তো এত তাড়াতাড়ি অস্তমিত হতে পারে না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link