ইয়াশ দয়ালের ক্যারিয়ারটা রীতিমত শেষ করে দিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। অনভিজ্ঞ এক ব্যাটার হয়েও পাঁচ বলে হাকিয়েছিলেন পাঁচ ছক্কা। এরপরই ভারত জাতীয় দলের জন্যে দারুণ এক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু সেই সম্পদকে ছাড়াই যে বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে ভারত।
সেটার পেছনের কারণটা অবশ্য একেবারে দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। ‘ইম্প্যাক্ট’ – ইংরেজি এই শব্দের বাংলা অর্থ প্রভাব। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) প্রভাব বিস্তারকারী সেই রিঙ্কু সিংকে যেন খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছে না। আগের মৌসুমের সেই রিঙ্কু রীতিমত নিজের ছায়া হয়ে বিচরণ করছেন। দলের প্রয়োজনে দেখা মিলছে না তার।
ঠিক সে কারণেই তাকে রাখা হয়েছে স্ট্যান্ডবাই। একেবারেই যে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন তিনি তা কিন্তু নয়। তার সামনে অবশ্য সুযোগ থাকছে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্য অন্য কাওকে ইনজুরি আক্রান্ত হতে হবে। নিশ্চয়ই তেমন কিছু প্রত্যাশা করছেন না রিঙ্কু সিং।
এবারের আইপিএলে এখন অবধি ৮ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। তাতে রান করেছেন স্রেফ ১২৩টি। অথচ গত আসরে তিনি ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৪ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। তাতে করে নিজের নামের পাশে রান যুক্ত করেছিলেন ৪৭৪।
সমস্যা তার আগ্রাসনে নয়। তিনি ২০২৩ আইপিএলে রান করেছেন প্রায় ১৫০ স্ট্রাইকরেটে। এবারও সেই একই স্ট্রাইকরেটে তিনি রান করে যাচ্ছেন। মূল সমস্যা হচ্ছে, খুব একটা ধারাবাহিক তিনি হতে পারছেন না। নিজের ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারছেন না। ম্যাচ শেষ করে আসতে পারছেন না।
অথচ আগ্রাসনের সাথে ম্যাচ শেষ করে আসার প্রবণতা তিনি দেখিয়েছেন ভারতের জার্সি গায়ে। কলকাতার হয়ে গেল মৌসুমে তিনি অপরাজিত থেকেছিলেন ৬ ইনিংসে। ভারতের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১১ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৭ ইনিংসেই ছিলেন তিনি অপরাজিত।
নীল জার্সিতে শুরুরটাও হয়েছে যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। ১১ ইনিংস ব্যাট করা রিঙ্কু দুই ফিফটির কল্যাণে ৩৫৬ রান তুলেছেন ভারতের হয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার স্ট্রাইকরেট এখন ১৭৬ এর একটু বেশি। সংখ্যাতত্ত্বের এই ফারাকটা অবশ্যই প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এজন্যেই বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে জায়গা হয়ে ওঠেনি তার।
এছাড়াও আরও একটি বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। রিঙ্কু স্রেফ একজন ব্যাটার। অথচ ভারতের বিশ্বকাপ দলে ফিনিশিং রোলে সুযোগ পাওয়া প্রত্যেকে অলরাউন্ডার। সেটাই নিশ্চিতরুপেই প্রভাবিত করেছে নির্বাচকদের। তাছাড়া রিঙ্কুর পরিবর্তে দলে মূলত সুযোগ পেয়েছেন শিভাম দুবে। তাকে সুযোগ না দেওয়াটা হতো রীতিমত বিশাল এক অপরাধ।
কেননা এবারের আইপিএলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই আগ্রাসনের চূড়ান্ত রুপে আবির্ভূত হচ্ছেন শিভাম। চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ জয়ের অন্যতম কারিগরে পরিণত হয়েছেন তিনি। ইনিংস বিল্ডআপ থেকে শুরু করে রানের ঝড় তোলা- দু’টো কাজই সমানতালে করে যাচ্ছেন শিভাম। যদিও শিভামকে বল করতে খুব কমই দেখা গেছে এবারের আসরে। তবুও তিনি বোলিংটা করতে জানেন। বিপদের মুহূর্তে ভারত দলের হয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।
এছাড়াও প্রায় ১৭২ স্ট্রাইক রেটে রান তোলা একজন ব্যাটারকেও তো বাদ রাখার কোন প্রশ্নই আসে না। রিঙ্কু রয়েছেন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে। বিশ্বকাপের আগে অবশ্য এই স্কোয়াডের খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে। ভাগ্যের হাতেই এখন রিঙ্কুর খেলার সুযোগ।