স্পিনের এভারেস্ট জিতে জেলখানার অন্ধকারে

রশিদ খান, ইশ সোধি, যুজবেন্দ্র চাহালের মত বিশ্বমানের লেগ স্পিনারদের সাথে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। সহযোগী দেশের সদস্য হলেও তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন পুরো বিশ্ব জুড়ে, হয়ে উঠেছেন দেশটার সবচেয়ে বড় পোস্টার বড়। বলছি নেপালের সন্দীপ লামিছানের কথা; যার কবজির মোচড়ে মুগ্ধ হয়েছেন প্রায় সবাই।

নরওয়ের মত গড়পরতা দলের আর্লিং হ্যালান্ড ক্লাব ফুটবল খেলে পেয়েছেন তারকা খ্যাতি, ঠিক তেমনি নেপালের সন্দীপ লামিছানে ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট দিয়েই নিজেকে মেলে ধরেছেন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশি লিগ খেলেই তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।

অবশ্য ফুটবলের মত ক্রিকেট খেলায় ক্লাব ভিত্তিক টুর্নামেন্টের প্রচলন খুব একটা নেই। সব ক্রিকেটারদের তাই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসতে চাইলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারফর্ম করতে হয়। কিন্তু সহযোগী দেশের সদস্য হলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়, তবে যে কয়জন সে বাঁধা ডিঙিয়েছেন তাদের একজন সন্দীপ লামিছানে।

২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দল পেয়ে প্রথমবারের মত লাইমলাইটে আসেন সন্দীপ লামিছানে। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস বিশ লক্ষ রুপিতে দলে নেয় তাঁকে। ৯ ম্যাচের আইপিএল ক্যারিয়ারে এই লেগ স্পিনার ছিলেন সম্ভাবনাময়ী পারফর্মার। ১৩টি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন, বোলিং গড় ২২.৪৬। ওভার প্রতি খরচ করেছেন ৮.৩৪ রান, ব্যাটিংবান্ধব ক্রিকেট লিগে এমন পরিসংখ্যানকে খারাপ বলার সুযোগ কই।

সন্দীপ লামিছানে অবশ্য ২০১৬ সালের যুব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত বিশ্বের নজরে এসেছিলেন। সেই টুর্নামেন্টে ছয় ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে তিনি দ্বিতীয় সেরা বোলার ছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সহ পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন। তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভর করেই দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে এবং আফগানিস্তানের মতো দলগুলোকে পেছনে ফেলে অষ্টম স্থান লাভ করেছিল নেপাল।

এরপরই কাউলুন ক্যান্টনস, ওয়েস্টার্ন সাবার্বস ক্রিকেট ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন; যেখানে তাঁর মেন্টর রূপে ছিলেন কিংবদন্তি মাইকেল ক্লার্ক। সন্দীপ লামিছানের উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়কের। নিজের বিস্ময়কর এক ক্যারিয়ারে ক্লার্ক, শেন ওয়ার্নের মত ব্যক্তিত্বের হাততালি পেয়েছেন এই নেপালি; পেয়েছেন নিজ দেশের মানুষদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা।

সেই ভালবাসার প্রতিদান দিতেই জাতীয় দলের জার্সিতেও নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন সন্দীপ লামিছানে। বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে নেপালের জায়গা পাওয়ার দৌঁড়ে যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। আসন্ন এশিয়া কাপেও দেখা যাবে নেপালকে, আর এই অর্জনে বড় ভূমিকা আছে তাঁর।

রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীরা যেমন বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার মধ্য দিয়ে উন্নত করেছেন আফগানিস্তানের ক্রিকেট, তেমনি সন্দীপ লামিছানে এগিয়ে নিয়েছেন নেপালিদের। হয়তো আফগানিস্তানের মত দল হয়ে উঠতে পারেননি, তবে তিনি একাই যা করেছেন সেটা বিস্ময়কর।

তাই তো সংখ্যা তত্ত্ব দিয়ে ক্রিকেটার সন্দীপ লামিছানেকে বিচার করা যায় না। তিনি নেপালি ক্রিকেটের অগ্রদূত; শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ভালোবাসার শক্তিতে জিতে যাওয়া এক প্রেমিক হিসেবেই বিশ্ব ক্রিকেট তাঁকে মনে রাখতো হয়তো – কিন্তু সেই সুযোগটা লামিছানে নিজেই দেননি। এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

আর এর জন্য রীতিমত জেলেও থাকতে হয়েছে এই স্পিন গ্রেটকে। নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। মামলা এখনও চলছে। এর মধ্যে ক্রিকেটে ফেরার অনুমতি পেলেও হারানো সম্মান কি আর ফিরে পাবেন সন্দীপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link