ঋষাভের এক চোটে বিশ্বজয় ভারতের!

ফুটবল মাঠে সময় নষ্ট করবার মত দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে বহুবার। কোন দল জিততে থাকলে, নির্ধারিত সময়ের শেষের দিকে মূলত এমন সময় নষ্ট করতে দেখা যায়। যারা নিয়মিত ফুটবল দেখেন তারা নিশ্চয়ই বিষয়টির সাথে অভ্যস্ত। ঠিক একই রকম সময় নষ্ট করবার মঞ্চায়ন এবার ক্রিকেট মাঠেও হচ্ছে। গুলবাদিন নাইবের পর ভারতের ঋষাভ পান্তও তেমনই এক ঘটনার মঞ্চায়ন ঘটিয়েছেন।

ভারত জুড়েই চলছে উৎসব। বহুকাল বাদে একটা শিরোপা উৎসবে মেতেছে গোটা ভারত। তবে ভারতকে অপদস্ত করবার কোন সুযোগই হাতছাড়া করছেন না কেউ। চ্যাম্পিয়নদের খুটিনাটি বিষয়ই যে আলোচনার বিষয়বস্তু, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাইতো সুরিয়াকুমার যাদবের লুফে নেওয়া ক্যাচ নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।

তবে ঋষাভ যা করেছেন তাতে অনৈতিকতার জায়গা অবশ্য নেই। শিরোপা আপনার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে। কয়েকশ কোটি মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আনন্দ নির্ভর করছে আপনার উপর। তখন নিশ্চয়ই, জয় পাওয়ার সবরকম ফন্দি আঁটবেন। ঠিক তেমনটাই করেছেন ঋষাভ।

২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছিলেন এনরিখ ক্লাসেন। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ভারতকে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে ফেলছিলেন তিনি। ‘ক্রিকেট বলকে তো ফুটবলের মত দেখছে’- জীবনের কোন না কোন সময় ক্রিকেট ব্যাট হাতে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ যারা খেলেছেন, তারা নিশ্চয়ই এই বিষয়টির সাথে অবগত।

ক্লাসেনের ক্ষেত্রেও তখন ঘটছিল তেমন কিছুই। তিনি স্বাভাবিকের চাইতেও যেন বলকে বড় আকারে দেখছিলেন। অবশ্য সেটা বলা হয় মনোযোগের তীব্রতা বোঝাতে। আর ওই একই ধারায় ব্যাট করে গেলে ক্লাসেন হয়ত প্রোটিয়াদের এনে দিতে পারতেন অধরা সেই বিশ্বকাপ। ঠিক তখনই ফন্দি আঁটলেন ঋষাভ। তিনি হুট করেই শুয়ে পড়লেন মাটিতে।

ম্যাচের তখন ৪ ওভারে ২৬ রান প্রয়োজন দক্ষিণ আফ্রিকার। হার্দিক পান্ডিয়া বোলিং প্রান্তে করছেন অপেক্ষা। মাঠে ফিজিও এলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা হল ঋষাভের। পায়ে ব্যান্ডেজও প্যাঁচানো হল। তাতে করে কালক্ষেপন হয়। গড়িয়ে যায় প্রায় মিনিট তিনেক। এরপরই মূলত আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এনরিখ ক্লাসেন। ঋষাভ স্রেফ একগ্র মনোযোগ ভাঙতে চেয়েছিলেন। সেটা সম্ভবত টিম ইন্ডিয়ারও পরিকল্পনা ছিল।

কেননা আপাতদৃষ্টিতে ঋষাভ গুরুতর কোন চোট পেয়েছিলেন বলে মনে হয়নি। যদিও একটা গুরুতর দূর্ঘটনা ঋষাভের শরীরে নানারকম চোট ছেড়ে গেছে। তবুও তিনি যে সময় ব্যয় করলেন, মোমেন্টাম নষ্ট করে দিলেন ক্লাসেনের- সেটাই শেষ অবধি ফলপ্রসূ হয়েছে ভারতের জন্যে। ১৭ বছর বাদে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে ভারত। যদিও এখানে অনেকেই নৈতিকতার প্রশ্ন তুলতেই পারে।

কিন্তু ক্রিকেট ময়দানে যে এই বিষয়টি একেবারেই নতুন তা কিন্তু নয়। আগেও ব্যাটারদের মনোযোগ টলাতে নানারকম ফন্দি-ফিকির করত বোলিং দল। কিন্তু এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন ওভার শুরু করা ও বোলিং ইনিংস শেষ করবার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাইতো চাইলেও খেলোয়াড়রা পরিকল্পনায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে ব্যাটারের মনোযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন না।

ঠিক সে কারণেই গুলবাদিন নাইব, ঋষাভ পান্তদের ইনজুরির নাটক মঞ্চায়ন করতে হয়। আপনার সামনে যখন একটা শিরোপার হাতছানি, তখন সম্ভবত আপনিও এমনটিই করবেন। দিনশেষে আপনার করা অভিনয় হয়ত একদিন ভুলে যাবে সকলে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নদের তো ভোলা বড় দায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link