রিশাদের ঘূর্ণিতে বোনা হয় জয়মাল্য

রিশাদ হোসেন যেন সোনার ডিম পাড়া হাস। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি যেন বাংলাদেশের তুরুপের তাস। প্রতি ম্যাচেই উইকেটের দেখা পাচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তো তিনি আবির্ভূত হলেন ত্রাণকর্তা হয়। তার হাত ধরেই ঘুরতে শুরু করে ম্যাচের ভাগ্য। শেষ অবধি জয়ের দেখা পায় টাইগাররা।

‘অনেক সাধনার পর পেলাম তোমার মন’- রিশাদের পারফরমেন্সের পর হয়ত বাংলাদেশী সমর্থকদের মাথায় এই গানের লাইনই ঘুরপাক খায়। নির্বিষ একটা বোলিং আক্রমণে নতুনত্ব এনে দিয়েছেন, বৈচিত্র্য এনে দিয়েছেন নিজের ঝুলির বৈচিত্র্য মেলে ধরে।

তবে অনেকের মনেই হয়ত সন্দেহ একটু একটু করে ঘর বাঁধতে শুরু করেছিল। কেননা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম দুই ওভারে যে রিশাদকে হজম করতে হয়েছিল ১৯ রান। তখন অবধি কোন উইকেটের দেখা তিনি পাননি। অনেকেই হয়ত রিশাদকে দেয়াশলাইয়ের স্বল্প বারুদ ভেবেছিল। কিন্তু রিশাদ যে রীতিমত পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে ওস্তাদ।

সে কাজটাই তিনি করলেন নিজের তৃতীয় ওভারে। ডাচরা তখন বেশ স্বস্তিদায়ক এক অবস্থানে। প্রায় প্রতি ওভারে বাউন্ডারি আসছে। আস্কিং রানরেট চলে যাচ্ছে না ধরা ছোঁয়ার বাইরে। উইকেটে নিজেদের বাড়িঘর বানিয়ে ফেলেছেন সাইব্রান্ড এঞ্জেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডস। ডাচ শিবিরের অন্যতম দুই সেনানী দলের জয়ের রাস্তাকে করছিলেন পরিষ্কার।

ঠিক তেমন এক মুহূর্তে রিশাদের জোড়া আঘাত। প্রথমে রিশাদকে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন এঞ্জেলব্রেখট। তীক্ষ্ম এক লেগব্রেক বলে পরাস্ত হন ডাচদের হয়ে ৩৩ রান করা এঞ্জেলব্রেখট। এরপর সেই ওভারের শেষ বলে আবারও টার্নে পরাস্ত করেন বাস ডি লিডকে। প্রায় বিদ্যুৎ গতিতে স্ট্যাম্পিং করতে ভুল করেননি লিটন দাস। ব্যাটে রান না এলেও উইকেটের পেছনে যথেষ্ট সচেষ্ট লিটন।

সেই ওভারে রিশাদ দিলেন সাত রান। ৫ ওভার হাতে, ডাচদের জয়ের দূরত্ব ৪৯ রানের। এরপর নিজের চতুর্থ ওভারের ঠিক প্রথম বলেই আবারও উইকেট নিজের কর নিলেন রিশাদ। এবার নিজের করা বলে ক্যাচ আউট করেন লোগান ভ্যান বিককে। মুহূর্তের মধ্যেই একটা সাদামাটা পারফরমেন্স পরিণত হয় ম্যাচ জয়ী পারফরমেন্সে।

ঠিক যখন দলের প্রয়োজন ছিল উইকেট, তখনই উইকেট এনে দিয়েছেন। ঠিক এ কারণেই তো রিশাদকে বলা হচ্ছে, তুরুপের তাস, এক্স ফ্যাক্টর, ত্রাণকর্তা। ঠিক এ কারণেই দলে একজন লেগ স্পিনার প্রয়োজন। বহু সন্ধানের পর রিশাদ সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছেন।

এখন অবধি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিন ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট শিকার করেছেন রিশাদ হোসেন। এখানেই থেমে যাওয়ার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই নেই তার। তিনি এগিয়ে গেলেই যে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link