ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসির মত তারকাদের জন্য খুব সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কাতারের অনুষ্ঠিত ২২ তম আসরটি। বয়সের ভারে ক্লান্ত রথী মহারথীরা এরপর হয়তো কখনো বিশ্বআসরে নিজ দেশের প্রতিনিধি হয়ে মাঠে নামবেন না। আবার তাদের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণের জন্য ধীরে ধীরে নিজেদের তৈরি করে নিচ্ছেন কয়েকজন তরুণ।
তারা মেসি-রোনালদো হতে না পারলেও আগামীর সুপার স্টার হবেন সেটা প্রায় নিশ্চিত। তাদের উপর সবসময়ই ভক্তদের বিশেষ দৃষ্টি থাকে, একইভাবে কাতারে আয়োজিত বিশ্বমঞ্চেও লাইমলাইট খুঁজে নিবে ভবিষ্যৎ সেরাদের। এমন কয়েকজনকে নিয়ে আজকের আয়োজন।
- অ্যান্টনি (ব্রাজিল)
ব্রাজিলের আক্রমণভাগে এখন অন্যতম নাম অ্যান্টনি। বিশেষ করে সর্বশেষ অলিম্পিক গেমসে এবং গত মৌসুমে আয়াক্সের হয়ে পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে অ্যান্টনি নিয়মিত হয়ে উঠেছেন। রাফিনহার পরেই রাইট উইংয়ে কোচের পছন্দ এই তরুণকে। তাই শুরুর একাদশে না থাকলেও বদলি হিসেবে প্রায় প্রতি ম্যাচে দেখা যায় তাঁকে।
ম্যাজিক্যাল ড্রিবলিংয়ে অ্যান্টনির ডি-বক্সে ঢুকে পড়ার সক্ষমতা বেশ ঈর্ষণীয়। সেই সাথে দূর পাল্লার কার্ল শট আর কার্যকরী ক্রস করার ক্ষেত্রেও দক্ষ তিনি। তাই গোল করা কিংবা গোলের সুযোগ সৃষ্টি দুই জায়গাতেই সমান তালে অবদান রাখতে পারেন আয়াক্স তারকা। অ্যাটাকিং থার্ডে তাঁর পায়ে বল আসা মানেই মোহনীয় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ব্রাজিলের হেক্সা মিশনে তাই এই উইঙ্গারের উপর ভরসা রাখবেন কোচ তিতে।
- পেদ্রি (স্পেন)
মাত্র ১৮ বছর বয়সে পেদ্রি স্পেন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এই তরুণ নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেখিয়েছেন ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি স্বরূপ জিতেছেন কোপা ট্রফি, এছাড়া সর্বশেষ ইউরো আসরে সেরা উদীয়মান ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন পেদ্রি।
তাঁর পাসিং, মুভমেন্ট আর ম্যাচ রিড করার সামর্থ্য প্রশংসনীয়। এছাড়া পেদ্রির সৃজনশীলতা তাঁর বড় শক্তি, একটা পাস কিংবা একটা ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন গুঁড়িয়ে দিতে পারেন তিনি। এই স্প্যানিশ তারকা বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারদের একজন, বিশ্বকাপেও তাঁর উপর প্রত্যাশার পারদ একটু উপরে থাকবে।
- ভিনিসিয়াস জুনিয়র (ব্রাজিল)
একবছর আগেও সেরাদের এই তালিকায় ভিনিসিয়াস জুনিয়রের নাম দেখলে হয়তো হাসি পেতো। কিন্তু গত এক মৌসুমে যেভাবে নিজের উন্নতি করেছেন ভিনি, তাতে এই ব্রাজিলিয়ানকে না রাখাটা অন্যায় হবে। ২০২১/২২ মৌসুমে চল্লিশের বেশি গোলে অবদান রাখা ভিনি রিয়াল মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সুপার কাপের মত ট্রফি।
সেলেসাও জার্সিতে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারলেও, আস্তে আস্তে নিজের ছন্দ ঠিকই খুঁজে পাচ্ছেন। আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপেও এই সাম্বা বয়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি থাকবে।
- ফিল ফোডেন (ইংল্যান্ড)
মাত্র ২২ বছর বয়সী ফিল ফোডেন ইতোমধ্যে ম্যানচেস্টার সিটির সেরা একাদশের একজন হয়ে উঠেছেন। পেপ গার্দিওলার অন্যতম প্রিয় এই শিষ্য মিডফিল্ডের পাশাপাশি ফরোয়ার্ড লাইনেও খেলতে পারেন। কখনো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, কখনো উইঙ্গার আবার মাঝে মাঝে ফলস নাইনের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।
ইংল্যান্ড জাতীয় দলেও ফিল ফোডেনের কাজটা একই। এই ভার্সেটাইল ফুটবলার সাউথগেটের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই আছেন। ইংলিশদের আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্যকে ফিফা বিশ্বকাপেও নিজের সেরাটা দিতে হবে।
- রাফায়েল লিও (পর্তুগাল)
একুশ শতাব্দীর আগে হাতেগোনা কয়েকবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। তবে গত দুই দশকে সেই চিত্র বদলে গিয়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ কয়েক বছরে পর্তুগিজ ফুটবল দল অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। আর এই দলের তরুণ পারফর্মারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে রাফায়েল লিওকে।
২০২১/২২ মৌসুমে এসি মিলানের লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি। উইংয়ে গতির ঝড় তোলা, কাট করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া আর ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিং – ফরোয়ার্ড হিসেবে রাফায়েল লিওকে ফুল প্যাকেজ বলাই যায়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দল কাতারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাইলে রাফায়েল লিওর পারফরম্যান্স বড্ড বেশি জরুরি।
এদের ছাড়াও ফ্রান্সের অরেলিয়েন চুয়েমেনি, ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহ্যাম, বুকায়ো সাকা, জার্মানির জামাল মুসিয়ালা, স্পেনের আনসু ফাতি, গাভি, ব্রাজিলের রদ্রিগো, গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি, নেদারল্যান্ডসের রায়ান গ্র্যাভেনবার্চ সহ বেশকয়েকজন উদীয়মান তারকা আছেন যারা সোনালী ট্রফির দৌড়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।
২০১৪ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন হামেস রদ্রিগেজ। পরের বিশ্বকাপে দর্শকদের মোহিত করেছিলেন ফরাসি তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পে। ২০২২ সালে এমন পারফরম্যান্স কে দেখাবেন – উত্তরটা জানার জন্য আর কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।