ক্রিজে নামার পর থেকেই শুরু হল এক অসম যুদ্ধ। ভাঙাচোরা চিত্রনাট্যে দল যখন পতনের শেষ প্রান্তে, তখন একপাশে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ হয়ে উঠলেন ডুবে যাওয়া জাহাজের শেষ নোঙর।
স্কোরবোর্ডে তখন রান মোটে ৬৪। ব্যাটিং পাওয়ার-প্লে শেষ হয়েছি কি হয়নি, দল হারিয়ে ফেলেছে চার উইকেট। একা হাতে লড়াইটা চালিয়ে যেতে চাইলেন তিনি।কিন্তু উইকেটের অপরপাশে বাকিরা যেন যাওয়ার আসার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ১১৫ রানেই নেই ৭ উইকেট। তবু হাল ছাড়েনি ‘বুড়ো’ মাহমুদউল্লাহ।
দাতে দাত চেপে রেখে উইকেটের একপাশে থিতু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন অবিচল বটগাছের মত। তানজিম সাকিবকে নিয়ে গড়লেন প্রায় শতোরানের জুটি।দলকে নিয়ে গেলেন ‘সম্মানজনক’ স্কোরে! নবম ব্যাটার হিসাবে যখন প্যাভালিয়নে ফিরেন তিনি দলের স্কোরবোর্ডে রান তখন দুইশো ক্রস করে ফেলেছে।
ফিটনেস নেই বলে তাঁকে ঘিরে সমালোচনা হয়, ট্রল। তাহলে যখন তিনি আজও হয়ে উঠেন ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে অবিচল বটবৃক্ষ – তখনও তাঁকে প্রশংসার বন্যায় ভাসানো উচিৎ। দু’টোই যৌক্তিক। দু’টো নিয়েই সমান আলোচনা হওয়া দরকার।
এটাই যেন তার পুরো ক্যারিয়ারের গল্প — আজ গালি, কাল তালি। তিনি একা থাকেন তীরন্দাজের মতো, যে তীর আসে তার নিজের শিবির থেকেই, তবু প্রতিবার বুক চিতিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পথিকের জন্য পথে হাঁটাতেই সবচেয়ে পছন্দের কাজ। রোমিওর জন্য জুলিয়েট যেমন। কিংবা, শাহরুখ খান মানেই যে রোমান্স। কবির জন্য কাব্য যেমন।
আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য লড়াই করা। তিনি যে কাজটার জন্য ডেজিগনেটেড – সেটাই করলেন। আরেকবার, এই বুড়ো বয়সে এসেও। যে বয়সে এসে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখে সবাই, সেই বয়সে এসেও তিনি লড়াই করার স্বভাব ছাড়তে পারেননি।
অষ্টম উইকেট জুটিতে ৯২ রান যোগ করলেন। সঙ্গী ছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞতার একটা দারুণ মেলবন্ধন হল ওয়ার্নার পার্কে। হ্যা, এটা ঠিক – এই লড়াই শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ খুব বেশিদূর আগায়নি। তবে ২২৭ রানের এই সংগ্রহ দিয়ে লড়াই করা যায়। আর এই লড়াইটাই তো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জীবন। এক জীবনে আর কত লড়বেন তিনি!
গালি দিন বা তালি, মাহমুদউল্লাহকেই দিতে হয় ব্যাটিংয়ে জোড়াতালি। বুড়িয়ে গেছেন, কিন্তু ফুড়িয়ে যাননি রিয়াদ। লড়াই করার শক্তিটা ধরে রেখেছেন তিনি।