সমস্যার নাম রোহিত-রাহুল!

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান- দুই দলের কাছেই ম্যাচ জিততে শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতকে। সুপার-১২ এ নিজেদের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতে গেলেই এখন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে যাবে রোহিতরা।

অবশ্য, নাটকীয়ভাবে পা হড়কালেই আবার বিশ্বকাপ যাত্রা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে তাদের। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ভারতকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে তাদের ওপেনিং জুটি। রোহিত, রাহুল জুটি সামগ্রিক ভাবে সফল হলেও এ বারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লে তে তাদের মন্থর গতির ব্যাটিং প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রবলভাবে। 

এমনিতে দুই ওপেনারের কেউই ফর্মে তুঙ্গে নেই। দুজনই এখন পর্যন্ত  এবারের আসরে একটি করে ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু জুটির যুগলবন্দীটা ঠিক হয়ে উঠছে না তাদের মধ্যে। অর্থাৎ ভারতের উদ্বোধনী জুটিতে ঠিক আগ্রাসনটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সময়েই শুরুটা হচ্ছে একদম ধীর গতিতে। 

অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের বিপক্ষেই যেমন প্রথম ৯ বলে রোহিত-রাহুল মিলে তুলেছিল মাত্র ১ রান। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে মিলিয়ে ভারতের রানও ছিল গড়পড়তা। রোহিত-রাহুলের এমন ভগ্নদশা আসলে খুব ভালভাবে ফুটে না ওঠার কারণটা হল, বিরাট কোহলি আর সুরিয়াকুমার যাদব।

শুরুর সাময়িক চাপ তারা কাটিয়ে ফেলছেন মিডল ওভারগুলোতে হিট করে। যেমন দুর্বল প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও কিন্তু ভারতের রান গড়পড়তার দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু বিরাট কোহলি আর সুরিয়ার ঝড়ো ফিফটিতে বেশ বড় একটা সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারে তারা। অর্থাৎ রোহিত- লোকেশের শুরুর ধাক্কা ঠিকই ভারত কাটিয়ে ফেলতে পারছে স্লগ ওভারের পাওয়ার হিটিং দিয়ে। 

কিন্তু নিজের ছায়া তো অন্যের আলো দিয়ে সব সময় ঢাকা যায় না। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর অধিনায়ক হিসেবে দারুণ সফল রোহিত শর্মা। অন্তত ম্যাচ জয়ের সংখ্যা, অনুপাত-সেটিই নির্দেশ করে। তবে শুধু ব্যাটার রোহিত কিন্তু বড্ড অধারাবাহিক। অর্থাৎ গড় রানের দিক দিয়ে হয়তো ক্যারিয়ারে তেমন বড় অবনমন হচ্ছে না। কিন্তু বড় ম্যাচে বেশ কিছুদিন ধরেই হাসছে না রোহিতের ব্যাট। একই কথা প্রযোজ্য লোকেশ রাহুলের ক্ষেত্রেও। 

পাওয়ার প্লে তে রোহিত শর্মা কতটা শেকি ব্যাটিং করেন তাঁর একটা চিত্র পাওয়া যেতে পারে এ বারের বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর দিকে তাঁকালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে মোট ৭ টি বল খেলেছিলেন রোহিত। আর সেই ৭ বলে তাঁর রান ছিল মাত্র ৪। অবশ্য ৪ রানেই আউট হয়ে ফিরেছিলেন সে ম্যাচে। 

পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু পাওয়ার প্লে তে ১৬ বলে করেছিলেন ঠিক ১৬ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে কোনোভাবে স্ট্রাইকরেট ১০০ পার করেছিলেন রোহিত। তবে তাঁর সে ইনিংসটিরও সমাপ্তি ঘটেছিল ১৪ বলে ১৫ রানে। আর সবচেয়ে বাজে অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে। সে ম্যাচের পাওয়ার প্লেতে ৮ বলে তিনি করেছিলেন মাত্র ২ রান। আর ২ রানেই তাঁর সে ইনিংসটি শেষ হয়েছিল।

পাওয়ার প্লেতে একটু রয়েসয়ে খেলে পরে ইনিংস বড় করার পন্থা ক্রিকেট বিশ্বের অনেকেই অবলম্বন করেন। কিন্তু রোহিত সেই রয়েসয়ে ইনিংসগুলোকেই বড় করতে পারছেন না। তবে খানিকটা উদ্বেগের বিষয় হল, ক্যারিয়ার জুটে রোহিত শর্মা সব সময়ই অ্যাটাকিং অ্যাপ্রোচেই ব্যাট করেছেন। এ বিশ্বকাপে এসেই যেন তাঁর স্বরূপের বৈপরীত্য ঘটেছে। 

রোহিত শর্মা অবশ্য এটা নিজেও অনুভব করেছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ফিফটি করার পরও তিনি তাঁর ইনিংস নিয়ে ছিলেন অখুশি। তিনি বলেছিলেন, এটা ভাল কোনো ইনিংস না। আমি এই ইনিংস নিয়ে খুশি। বড্ড কুৎসিত ইনিংস ছিল এটি। 

শুরুর দিকে ক্রিকেটের বেসিক শট খেলে উইকেটে সেট হয়ে পরে বোলারদের উপর চড়াও হওয়ার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বিরাট কোহলি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপে সেঞ্চুরির পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার খেলার প্রতি সব সময় মনযোগী থাকি। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমি ছক্কাও মারতে পারি। কিন্তু আমি গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করি।’ 

রোহিত শর্মা অবশ্য এর আগে বোলারদের উপর শুরুর দিক থেকেই চড়াও হতেন। আর এটাই তাঁকে ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতো। কিন্তু বিশ্বকাপে এমন শুরুর কারণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনও প্রভাবক হতে পারে। কারণ এবারের বিশ্বকাপ খুব বেশি হাই স্কোরিং ম্যাচ হচ্ছে না।

নতুন বলেও খুব বেশি যে রান এসেছে সেটিও নয়। দুই একটা ক্যামিও বাদে বিশ্বকাপের প্রায় সব ম্যাচেই নতুন বলে রান হচ্ছে কম। তবে রোহিত শর্মার মত বিশ্বমানের ওপেনারের নিশ্চয় এমন সব প্রতিকূলতা প্রতিহত করার সক্ষমতা রয়েছে। তাই অজুহাত খোঁজাটাও বড্ড ক্লিশে ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, নিজের ছন্দটা খুঁজে পাচ্ছেন না রোহিত। আর সে কারণেই ভারতের ওপেনিং জুটিও তেমন সফল হতে পারছে না। 

 জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রোববার ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচে মাঠে নামবে ভারত। আইসিসি’র টুর্নামেন্টে সবসময়ই ফেভারিটের তকমা নিয়েই খেলতে আসে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু ২০১৩ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আর কোনো আইসিসির শিরোপা জেতেনি ভারত। এবারের পথযাত্রাতে রয়েছে আর মাত্র তিনটি বাঁধা। পরের তিনটি ম্যাচ জিতলেই ভারত আবারও বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু সংখ্যার হিসেবে সেই ‘৩’ অঙ্কটি সহজ মনে হলেও রোহিতদের পাড়ি দিতে হবে অনেক কঠিন পথ। কারণ একবার পা হড়কালেই অপূর্ণতায় সমাপ্তি ঘটবে ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান।            

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link