বাতাসে গুঞ্জন ভাসছিলো অনেক দিন থেকেই। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের হতশ্রী পারফরম্যান্সের কারনে অধিনায়ক পরিবর্তনের মত ছিল অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের৷ সব গুঞ্জনকে সত্যি করে অবশেষে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অধিনায়কের পরিবর্তন ঘটেছে। না, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড নতুন কাউকে নির্বাচন করেননি। বরং ইংল্যান্ডের এতদিনকার অধিনায়ক জো রুট নিজেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে এসেছেন।
ব্যাটসম্যান জো রুট নিয়ে দ্বিধা নেই কারো মনেই৷ প্রজন্মের ফ্যাভারিট ফোর কিংবা ফাইভে অনায়াসে জায়গা পাবেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। এখন পর্যন্ত ১১৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন জো রুট। ৪৯.২ গড়ে রান করেছেন ৯৮৮৯। অ্যালিস্টার কুকের অবসরের পর দলের ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠেছেন রুট।
ব্যাটিংয়ের বড় নাম হয়ে উঠার পাশাপাশি ২০১৭ সালে অ্যালিস্টার কুকের পর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব হাতে পান জো রুট৷ অধিনায়কত্বের অভিষেক হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই তিনি লর্ডসে তিনি অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচেই তুলে নেন নিজের বারোতম শতক।
২০১৭ থেকে ২০২২; প্রায় পাঁচ বছর দলকে নেতৃত্ব দেন জো রুট। ইংল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্ট ম্যাচে টস করতে নামার রেকর্ডও তাই তার দখলে। এখন পর্যন্ত ৬৪ টি টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা রুট জিতেছেন ২৭ টি ম্যাচে, হেরেছেন ২৬ টিতে। বাকি ১১ ম্যাচের ফলাফল ড্র।
অধিনায়ক রুট ব্যাট হাতেও বেশ সফল। অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে রান করেছেন ৫২৯৫। গড় ৪৬ এর উপরে। হোম এবং অ্যাওয়ে সবসময়ই পারফর্ম করেছেন জো রুট।
তবে সর্বশেষ ১৭টি টেস্টে ইংলিশরা জিতেছে মাত্র একটি-তে। বিশেষ করে অ্যাশেজ এবং ক্যারবিয়ান সফরে ইংল্যান্ড দলের প্রায় অসহায় আত্মসমর্পণ চোখে লেগেছে ভক্তদের। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স এর ফলে বড়সড় একটি পরিবর্তনের ঝড় বয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের উপর। এ মূহুর্তে ইংল্যান্ড দলে কোন হেড কোচ নেই, এমনকি কোন ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিংবা নির্বাচক-ও নেই।
দলের এমন বাজে পারফরম্যান্সের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চাপ পড়েছে অধিনায়ক জো রুটের উপর। অনেক সাবেক ক্রিকেটার মত দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড দলে অধিনায়কত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন। ক্যারিবীয় সফরে ১-০ তে পরাজয় সত্ত্বেও রুট অবশ্য ইতিবাচক ছিলেন অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিন্তু দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন তিনি নিজেই। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অধিনায়ক থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি জানান অধিনায়কত্ব ছাড়ার এমন সিদ্ধান্ত গ্রহন তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মূহুর্ত। তাছাড়া ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিতে পারায় রুট নিজেকে গর্বিত মনে করেন।
তবে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাবেন জো রুট। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এমন ক্রান্তিলগ্নে নিশ্চয়ই তার মত অভিজ্ঞ একজন সদস্যের সেবা দলে খুব প্রয়োজন।
জো রুটের উত্তরসূরী হিসেবে বেন স্টোকসের নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। জো রুট থাকাকালীন এই অলরাউন্ডার ছিলেন দলের ভাইস ক্যাপ্টেন। তবে এ মূহুর্তে সাময়িক অবসরে থাকা বেন স্টোকস সহসাই দলে ফিরবেন কিনা সেটি আলোচনার ব্যাপার। বেন স্টোকস ছাড়াও স্টুয়ার্ট ব্রড, জস বাটলার, ররি বার্নসের নাম শোনা যাচ্ছে ইংলিশদের পরবতী অধিনায়ক হিসেবে। যদিও এদের কেউ টেস্ট একাদশের নিয়মিত সদস্য নন।
অধিনায়ক হিসেবে জো রুট আহামরি হয়তো নন কিন্তু ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মত যথেষ্ট যোগ্য ছিলেন তিনি। রুটের নেতৃত্বকালীন পরিসংখ্যান-ও তার পক্ষে কথা বলে। তবে দলের হঠাৎ ছন্দপতনের কারনে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখন দেখার বিষয় ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড কাকে পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচন করেন; কিভাবে কাটিয়ে উঠে দলের এমন ক্রান্তিকাল।