স্টুয়ার্ট ব্রডের উইকেট উপড়ে ফেলেই ভোঁ দৌড়। এরপর বিষন্ন বদনে হেঁটে বেড়িয়ে গেছেন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে। দু’টো ঘটনার মধ্যে রয়েছে বিস্তর সময়ের ফারাক। রুবেল হোসেন স্মৃতির গহীনে হারিয়ে যাওয়ার পথের পদযাত্রী।
প্রায় এক বছর বাদে রুবেল হোসেন ফিরেছিলেন ক্রিকেট ময়দানে। চলমান দশম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি খুলনা টাইগার্স দলের প্রতিনিধি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে বহুদিন বাদে খেলতে নামলেন। রোমাঞ্চিত হওয়ারই কথা তার। উচ্ছ্বাসের হিমেল হাওয়া মাখিয়ে নব জাগরণের গান শোনাবোর কথা তার। তবে হয়েছে ঠিক উল্টোটা।
দিনটা ভুলে যেতে চাইবেন তিনি। মাত্র দুই ওভার বোলিং করে হজম করেছেন ৩৬ খানা রান। রুবেলের কাছ থেকে অবশ্য এমন বোলিং ফিগার অপ্রত্যাশিত নয়। ক্যারিয়ারের বহুবার রানবন্যায় ভেসেছেন ডানহাতি এই পেসার। কিন্তু ফিঁকে হয়ে যাওয়া সজীবতা শেষ দফায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় দারুণভাবেই ব্যর্থ।
কিন্তু একটা প্রশ্ন অবশ্য তোলা যায়। আদোতে তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেছেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ যথেষ্ট। তার বোলিং অ্যাকশনেই চেষ্টার কমতি লক্ষনীয়। বেশ ছন্নছাড়া বোলিংই রুবেল করেছেন। সঠিক লাইনলেন্থই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। তাছাড়া বল ছোড়ার আগ মুহূর্তেও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন লক্ষনীয়।
সাধারণত বল ছোড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে হাতের পজিশনকে বলা হয়, ‘বল লোডিং’। সাধারণত বল লোডিং পেসাররা শরীরের বেশ কাছ থেকেই করে থাকেন। রুবেলের ক্ষেত্রে সেই দূরত্ব খানিকটা বেড়ে গেছে। অনুশীলনের ঘাটতির কারণেই সেই পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। আর তাছাড়া নিয়মিত অনুশীলনে থাকলে অন্তত বেক্ষাপা লাইনে বল করবার কথা নয় রুবেলে।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তার প্রথম ওভারে দশবার ডেলিভারি ছুড়েছেন রুবেল। চারটি বল হয়েছে ওয়াইড। অতিরিক্ত চার রান দেওয়া ছাড়াও, অধিনায়কে বিপাকে ফেলে দিয়েছেন তিনি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথম ওভার করেন রুবেল। এরপর দীর্ঘ একটা বিরতির পর ইনিংসের ১৯ তম ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন এনামুল হক বিজয়। শেষ দুই ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান।
খুলনা টাইগার্সের অধিনায়কের আস্থার সবটুকু জলে ভাসিয়েছেন রুবেল। তার ওই এক ওভারেই ২৪ রান তুলে নেন সিলেটের ব্যাটাররা। তাতে করে এক ওভার আগেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে খুলনাকে। টানা চার জয়ের পর একনাগারে তিন পরাজয়ের তিক্ততাই হজম করতে হয়েছে রুবেলে দলকে।
শুধু যে বাজে বোলিং করেছেন রুবেল তা নয়। একটা নিতান্ত সাধারণ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফাইন লেগে ক্যাচ ফেলেছেন রুবেল। স্ট্রাইকার্স ব্যাটার হ্যারি টেক্টর এরপর ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিয়ে সিলেটের জয়ের পথ মসৃণ করেছেন।
সামগ্রিক চিত্র তাই রুবেলে বিপক্ষেই। তিনি নিয়মিত খেলা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ঠিকঠাক করছেন না। তাতে করে নিজের পারফরমেন্সের গ্রাফ কোনভাবেই পাচ্ছে না উন্নতির দেখা। হারিয়ে যাওয়ার পথটাই যেন আপন করে নিতে চাইছেন রুবেল হোসেন।