হিমালয়ের বুকে দাঁড়িয়ে বিজয় কেতন উড়িয়েছিল এই বাংলার মেয়েরা। প্রথমবারের মত সাফের চ্যাম্পিয়নশীপ জিতেছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। নবজাগরণ বাংলার নারী ফুটবলে। প্রতিটা সাফল্যের সাথে জাগরণের গান গাওয়া হয়। তেমনই আরও এক গানের আয়োজন করে দিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল। এবারও সাফের চ্যাম্পিয়ন বয়সভিত্তিক দলটি।
চার দলকে নিয়ে বাংলাদেশের বসেছিল সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ। সেখানে স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতে সাথে ভুটান ও নেপাল অংশগ্রহণ করে। রাউন্ড-রবিন লিগ পদ্ধতিতে সবার উপরে থেকেই ফাইনাল নিশ্চিত করে বাঘিনিরা। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল নেপাল।
নেপালের সাথে ফাইনাল ম্যাচটা দাপটের সাথেই খেলেছে বাংলার মেয়েরা। যদিও তাদেরকে হারিয়েই টূর্নামেন্ট শুরু করেছিল নব্য চ্যাম্পিয়নরা। সেই ম্যাচে তাঁরা ৩-১ গোলে হারিয়েছিল রিপা-উন্নতিরা। সেই আগ্রাসনটা ফাইনাল ম্যাচেও বজায় রেখেছিল গোটা দল। এবারের ব্যবধানটা ৩-০। পুরো ম্যাচ জুড়েই বাংলাদেশের মেয়েরা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে।
ম্যাচের একেবার শুরুর দিকে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন আকলিমা খাতুন। গোল পোস্ট ছেড়ে বেশ খানিকটা বেড়িয়ে আসা নেপালি গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেও গোলবারের রাখতে পারেননি বল। ক্রসবারের উপর দিয়ে বল চলে যায়। এরপর বাকিটা সময়ের অধিকাংশ সময়ই খেলা হয় নেপালের অর্ধে।
একপেশিয়া লড়াইয়ে রীতিমত পাত্তাই পায়নি নেপালের মেয়েরা। তাদেরকে ঘিরে স্রেফ ছেলে খেলাই করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বেশ কিছু সহজ সুযোগ মিস না করলে ব্যবধানটা বেশ বড় হতেই পারত। প্রধমার্ধের নির্ধারিত সময় শেষ হবার মিনিট তিনেক আগে বাংলাদেশের পক্ষে গোল করেন শাহিদা আক্তার রিপা। সেই গোলে বাঁধ-ভাঙ্গা উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে।
সেই এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় দুইদল। বিরতি থেকে ফিরে বাংলাদেশের আক্রমণের ধার যেন বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় বাংলার মেয়েরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে খানিকটা ছন্নছাড়া ফুটবল খেলতে থাকে বাংলাদেশ। এর মাঝেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেন অধিনায়ক শামসুন্নাহার। পাল্টা আক্রমণে এক প্রচেষ্টায় লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। ব্যবধান তখন ২-০।
দ্বিতীয়ার্ধেও স্রোতের বিপরীতে বেশকিছু আক্রমণ সাজায় নেপাল। তবে কাজের কাজটি করতে পারেনি তাঁরা। বরং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক রুপনা চাকমারা কৃতীত্ব পেতেই পারেন। এরপর একের পর এক বাংলাদেশের আক্রমণ ভেস্তে যেতে থাকে। ম্যাচের অন্তিম পর্যায়ে ৩-০ ব্যবধান গড়ে দেন উন্নতি খাতুন। কর্ণার থেকে সেই গোলটি আদায় করেন উন্নতি খাতুন।
আরও এক বিজয় কেতন উড়ালো বাংলার নারীরা। বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবলের দুর্দিনে নারীদের এই সাফল্যগুলোই অন্তত মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশে এখনও ফুটবলের সংস্কৃতি বিদ্যমান। সাফল্য়ের দূরত্ব শুধু সদিচ্ছার।